শুক্র. মার্চ ২৯, ২০২৪
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪, শনিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭: 56দীর্ঘ আট বছর পরও পিলখানায় কেন বর্বরতম হত্যাযজ্ঞ ঘটানো হলো এর কারণ খুঁজে বেড়াচ্ছেন নিহতদের পরিবারের সদস্যরা। নেপথ্যের ও ইন্ধনদাতাদের আজও কেন খুঁজে বের করা যায়নি সে প্রশ্নও করেছেন অনেকেই।
শনিবার বিডিআর বিদ্রোহের অষ্টম বার্ষিকীতে দিন বনানীর সামরিক কবরস্থানে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করতে আসেন তাদের পরিবারের সদস্যরা। এ সময় অনেকেই দিনটিকে রাষ্ট্রীয় শোক দিবস হিসেবে ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন।

তারা বলছেন, যেখানে নৃশংস ওই হত্যাকাণ্ডের দিনটিকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পালন করা উচিত, সেখানে শহীদদের সে মর্যাদা তো দেয়াই হচ্ছে। উল্টো দীর্ঘ আট বছর কেটে গেলেও এখনো বিচারকাজই শেষ হলো না। কেন এই গণহত্যা চালানো হলো শহীদদের পরিবার আজও সে প্রশ্নের উত্তর পায়নি। আড়ালেই রয়ে গেছে ঘটনার নেপথ্যের ও ইন্ধনদাতারা।
সকালে বাবা মিজানুর রহমানের কবর জিয়ারত করতে এসেছিল তাহসীন রহমান ও ফারদিন রহমান দুই ভাই।তাহসীনের বয়স ১৭ বছর আর ফারদিন ১১ বছরের। বিডিআর বিদ্রোহে বাবা মারা যাওয়ার মাত্র নয়মাস আগে মা রেবেকা ফারহানা ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
এখন তাদের দেখার কেউ নেই। দুইভাই দুই জায়গায় থাকেন। তাহসীন এখন টাঙ্গাইলে মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজে পড়াশোনা করছে। আর ছোট ভাই ফারদিন গুলশানে নানা অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে থাকে। বাবার কবর জিয়ারত শেষে তাহসীন বলে,‘আমাদের তো কোন দোষ ছিল না। তারপরও কেন এই হত্যাকাণ্ড ঘটনো হলো সে প্রশ্নের উত্তর আমরা আজ পর্যন্ত পেলাম না, হয়তো আর কোন দিন পাবোও না।’
নিহত কর্নেল কুদরত এলাহী রহমান শফিকের বাবা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘শহীদ পরিবারের সদস্য হিসেবে আমার জানতে ইচ্ছে করে এতো দিনেও কেন দোষীরা শাস্তি পাচ্ছে না, কেন বা বিচার প্রক্রিয়া শেষ হতে এতো সময় লাগছে?’
লে. কর্নেল গোলাম কিবরিয়ার ছোট ভাই জাফরুল্লাহ বলেন, ‘সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমে আমরা এ ঘটনার সমাধান চাই। শহীদদের পরিবারের কান্না জাতিকে যেন আর দেখতে না হয়। অবিলম্বে ঘটনার নেপথ্যের ও ইন্ধনদাতাদের খুঁজে বের করা হোক এবং আজকের দিনটিকে রাষ্ট্রীয় শোকদিবস হিসেবে পালন করা হোক।
পিলখানা হত্যাযজ্ঞের ৮ম বার্ষিকীতে শনিবার সকালে বনানীর সামরিক কবরস্থানে শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে নিহতদের প্রতি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। একইসঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানসহ নিহতদের স্বজনরা চোখের জলে ওই ঘটনায় শহীদদের স্মরণ করেন।
রাষ্ট্রপতির পক্ষে নিহতদের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানান তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মো. সরোয়ার হোসেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন, বীর বিক্রম ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
পরে তিন বাহিনীর পক্ষ থেকে সেনাপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, নৌ বাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ, বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল আবু এসরার, বিজিবির পক্ষ থেকে বাহিনীটির প্রধান মেজর জেনারেল আবুল হোসেন শ্রদ্ধা জানান। পরে স্বজনদের শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় কবরস্থানে এক হ্দয় বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
দিবসটি পালনের লক্ষ্যে বিজিবির পক্ষ থেকে পিলখানায় নিহতদের জন্য দোয়া, মিলাদ মাহফিল, সমাধিতে ফুল দেওয়ার মতো কিছু কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠনও নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্র“য়ারি রাজধানীর পিলখানায় বিডিআরের জওয়ানরা ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। সেদিন পিলখানার এই বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশের ৫৭টি ইউনিটে। টানা একদিন এক রাত শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি মোকাবিলা করে ২৬ ফেব্র“য়ারি বিদ্রোহ নিয়ন্ত্রণে আসে। এ হত্যাকান্ডে দুভাবে বিচার করা হয়। একটি হলো বাহিনীর নিজস্ব আইনে, অন্যটি ফৌজদারি আইনে।
বিজিবি জানিয়েছে, বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় অভিযুক্তসহ ১৭ হাজার ৩১১ (বিডিআর সদস্য ও বেসামরিক ব্যক্তি) জনকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়। তাদের মধ্যে ৬ হাজার ৪১ জনকে বিশেষ আদালত ও ১১ হাজার ২৬৫ জনকে অধিনায়ক সামারি কোর্টের মাধ্যমে বিচার করা হয়। আসামিদের মধ্যে ৯ হাজার ১৯ জনকে বিভিন্ন সাজাসহ চাকরিচ্যুত করা হয়। বাকি ৮ হাজার ২৮৭ জন সরাসরি বিদ্রোহে সম্পৃক্ত না থাকায় তাদের লঘুদ- (তীব্র ভর্ৎসনা, বেতন কর্তন, ডিমোশন ইত্যাদি) দিয়ে চাকরিতে বহাল রাখা হয়েছে। আর হত্যামামলায় অভিযুক্ত ৮৫০ জনের মধ্যে ১৫২ জনকে ফাঁসি, ২৬০ জনকে যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়।