শুক্র. মার্চ ২৯, ২০২৪
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

13খােলা বাজার২৪।। বৃহস্পতিবার, ২৭ এপ্রিল ২০১৭: ক্ষমতা গ্রহণের শততম দিন উদযাপন করতে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শনিবার তার হোয়াইট হাউসে পদার্পণের ১০০ দিন পূর্ণ হবে। এ সময় তার সফলতা-ব্যর্থতার মূল্যায়ন করতে শুরু করেছেন বিশ্লেষকরা। গণমাধ্যমের জরিপে আধুনিক কালের মার্কিন প্রেসিডেন্টদের মধ্যে ক্ষমতার প্রথম পর্বে ট্রাম্প সবচেয়ে কম জনপ্রিয় প্রমাণিত হয়েছেন। অনেক বাগাড়ম্বর করে ক্ষমতায় এলেও নিজের নীতি ও কৌশল বাস্তবায়নে কঠিন বাস্তবতার মুখে পড়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। গুরুত্বপূর্ণ অনেক ইস্যুতেই তাকে ইউটার্ন নিতে হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, ৭০ বছর বয়সী ট্রাম্প এখনও নাছোড়বান্দা, পূর্বাভাসের অযোগ্য ও হুজুগে স্বভাব আঁকড়ে রেখেছেন। এ ইমেজ নিয়েই তিনি আবাসন খাতের ধনকুবের ও রিয়েলিটি টিভি তারকা হিসেবে পরিচিত হয়েছিলেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে আনাড়িপনা ও চতুরতার মিশেলে তিনি বুঝতে পেরেছেন যে, পৃথিবীর অন্যতম কঠিন দায়িত্বটি এখন তার হাতে।
দায়িত্ব গ্রহণের কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ট্রাম্প একাধিক হোঁচট খেয়েছেন। তার প্রস্তাবিত ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আদালতে আটকে গেছে। স্বাস্থ্যসেবা সংস্কারে তার প্রস্তাব কংগ্রেসে মুখথুবড়ে পড়েছে। তার উল্লেখযোগ্য কিছু নীতি ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ও সেসবের অবস্থা উল্লেখ করা হলো।

এশিয়ায় পরমাণু উত্তেজনা : ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসন বড় ধরনের নিরাপত্তার প্রশ্ন তৈরি করেছে এশিয়ায়। শপথের আগেই তাইওয়ান প্রসঙ্গে তার মন্তব্য শুধু চীনকে হতবাক করেনি, দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের তৈরি দ্বীপে তার প্রবেশ আটকে দেয়ার হুমকি দিয়ে বক্তব্য দেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনও। উত্তর কোরিয়ার বিষয়ে ওবামা প্রশাসনের নীতি ছিল কৌশলগত সহনশীলতা প্রদর্শন। কিন্তু ট্রাম্পের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স বলেছেন, কৌশলগত সহনশীলতা বা ধৈর্যের যুগের অবসান ঘটেছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে কোরীয় উপদ্বীপে তৈরি হয়েছে যুদ্ধের উত্তেজনা।
রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কে জটিলতা : নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে একজন দক্ষ নেতা হিসেবে প্রশংসা করেছিলেন। তার সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে চান বলেও তখন জানিয়েছিলেন। রুশ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলাপের সূত্র ধরে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিন আকস্মিক পদত্যাগ করলে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে মস্কোর সম্পর্ককে ঘিরে উদ্বেগ চলতে থাকে। ট্রাম্প জানান, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ওপর বিশ্বাস রাখতে চান তিনি। কিন্তু তা হয়ত দীর্ঘস্থায়ী হবে না বলে সতর্ক করেন তিনি। সিরিয়ায় রাসায়নিক হামলার ঘটনাকে ঘিরে দুটি দেশের সম্পর্কের আরও অবনতি হয়েছে। এ হামলার জন্য মার্কিন কর্তৃপক্ষ সিরিয়ার সরকারকে দোষারোপ করে এলেও, রাশিয়া অব্যাহতভাবে বাশার আল আসাদের প্রতি সমর্থন দিয়ে আসছে। ট্রাম্প বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক এখন ঐতিহাসিক তলানিতে।
ন্যাটোর দিকে মনোযোগ : আগে ন্যাটোর কট্টর সমালোচক ছিলেন ট্রাম্প। তিনি এ সংগঠনকে সেকেলে বলেও আক্রমণ করেছেন। ইদানীং তার মনোভাব বদলে ফেলেছেন এবং বলেছেন, ন্যাটো আর সেকেলে প্রতিষ্ঠান নেই। সন্ত্রাসের হুমকির প্রেক্ষাপটে এ জোটের গুরুত্ব রয়েছে এবং ইরাকি এবং আফগান শরিকদের আরও সহায়তা দেয়ার জন্য জোটের সদস্যদের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।
সামরিক শক্তির ব্যবহার : ইরাক ও আফগানিস্তানে যুদ্ধ বন্ধ এবং মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে সংঘাতে না জড়ানোর প্রত্যাশায় বারাক ওবামাকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছিল। এমনকি সিরিয়ায় নৃশংসতার মাত্রা যখন চরম রূপ নিয়েছিল তখনও তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন, যেকোনো সামরিক হস্তক্ষেপের জন্য ব্যাপক মাশুল দিতে হবে। ওবামা প্রশাসন মানবিক সহায়তা প্রদান, বিদ্রোহীদের পরিবর্তনের জন্য অর্থ প্রদান, যুদ্ধবিরতির চেষ্টা এবং প্রেসিডেন্ট আসাদকে অপসারণের জন্য রাজনৈতিক মধ্যস্থতার দিকে মনোযোগী হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পও এর আগে সিরিয়ায় মার্কিন সামরিক অভিযানের ব্যাপারে বিরোধী ছিলেন। কিন্তু এখন সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থান নিয়েছেন তিনি। চলতি মাসে সিরিয়ায় সরকারি বিমান ঘাঁটিতে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র হামলার নির্দেশ দিলেন । অল্প সময়ের ব্যবধানে আফগানিস্তানে ‘মাদার অব অল বোম্বস’ নিক্ষেপ করে আবারও বিশ্বের সামনে সামরিক শক্তির পরিচয় দেয় আমেরিকা।
মুক্ত বাণিজ্যে অনিশ্চয়তা : বহু দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র বাকি বিশ্বের সঙ্গে যেভাবে বাণিজ্য পরিচালনা করছে তাতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য-নীতি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কর্মহীনতার অজুহাতে অনেক বাণিজ্য চুক্তি বাতিল করে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা থেকেও আমেরিকাকে প্রত্যাহার করে নেয়ারও চিন্তাভাবনা রয়েছে তার। ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিনেই ১২ জাতির বাণিজ্য জোট ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) বাতিল করেন তিনি।
জলবায়ু পরিবর্তন প্রসঙ্গ : ট্রাম্প বলেছিলেন, দায়িত্ব নেয়ার প্রথম একশ’ দিনের মধ্যেই তিনি প্যারিস জলবায়ু চুক্তি বাতিল করবেন। তবে সেটা তিনি করেননি। তার সিনিয়র উপদেষ্টাদের মধ্যে এ বিষয়ে বিভক্তি রয়েছে। প্রেসিডেন্ট ওবামার প্রণীত জলবায়ু নীতি পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। তবে ট্রাম্পের জ্বালানিমন্ত্রী মঙ্গলবার বলেছেন, প্যারিস চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত থাকা উচিত।
ইরানের পরমাণু চুক্তি নিয়ে সংশয় : ইরানের পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচি বন্ধের বিনিময়ে অবরোধ তুলে নেয়ার যে চুক্তি হয়েছিল তাকে বারাক ওবামার প্রশাসন ঐতিহাসিক বোঝাপড়া বলেই মূল্যায়ন করেছে। কিন্তু ট্রাম্প বলেছেন, আমার দেখা এ যাবতকালের সবচেয়ে বাজে কোনও চুক্তি। এ চুক্তি ভেঙে ফেলাই হবে তার প্রধান অগ্রাধিকার। কিন্তু তিনি আসলে কী করতে চান, সেটি স্পষ্ট নয়। তার সরকার ইরানের বিষয়ে মার্কিন নীতি পুনরায় ঢেলে সাজাতে চাইছে। বিষয়টি শুধু ইরানের পরমাণু কর্মসূচির ক্ষেত্রেই প্রভাব ফেলবে তা নয়, সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে তার ভূমিকা, সিরীয় সংঘাত, সৌদি আরব এবং ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্কেও প্রভাব ফেলবে। বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে ট্রাম্পের ইউটার্ন ও নিজের অবস্থান বদলানোর বিষয়ে ওয়াশিংটন পোস্ট এক সম্পাদকীয়তে বলেছে, ‘একজন প্রেসিডেন্ট যখন এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এত ভুল অবস্থান থেকে এত সঠিক অবস্থানে যান, তখন ছিদ্রান্বেষণের চেয়ে সতর্ক উদযাপনই প্রজ্ঞার কাজ।’ বিবিসি, সিএনএন।