শুক্র. এপ্রি ১৯, ২০২৪
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪।। রবিবার, ২৮ মে, ২০১৭:  54হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফী বলেছেন, থেমিস সুপ্রিম কোর্টের সামনে থাকবে, নাকি পেছনে থাকবে এইটা কোনও ইস্যু কখনও ছিল না। নামাজের সময় কালো কাপড়ে মুড়ে দেওয়া হবে কি হবে না এইটাও ইস্যু ছিল না। ইস্যু ছিল, থেমিস থাকবে কি থাকবে না। এইখানে মধ্যপন্থা নেওয়ার কোনও সুযোগ নাই। সুপ্রিম কোর্ট ভবনের সামনে থেকে ভাস্কর্য সরানোর পর সন্তোষ প্রকাশ করেছিল ও অভিনন্দন জানিয়েছিল হেফাজত। সেই রেশ কাটতে না কাটতে তা এ্যানেক্স ভবনের সামনে আবার স্থাপন করায় অসন্তুষ্ট ও হতাশ হেফাজত। রোববার হেফাজতে ইসলামের আমির এই ব্যাপারে বিবৃতি দিয়েছেন।
বিবৃতিতে শাহ আহমদ শফী বলেন, আমি খবর পেয়েছি থেমিস পুনঃস্থাপনের প্রতিবাদ জানাতে গভীর রাতেও তৌহিদি ছাত্র-জনতা প্রেসক্লাবে সমবেত হয়েছেন। তারা রাস্তায় সেহরি করেছেন। তাই নয়, আমি শুনেছি প্রতিবাদ মিছিলে পুলিশি হামলা হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছেন অনেকে। এই সংবাদে আমি মর্মাহত এবং ক্ষুব্ধ। আমরা সংশ্লিষ্ট সবাইকে বাস্তবতা বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আবারও অনুরোধ জানাই। বিবৃতিতে রোববারের মধ্যেই গ্রেফতারকৃতদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন। কার উস্কানিতে এ হামলা হয়েছে, তা তদন্ত করে দোষীদের বিচার দাবি করেন।
শাহ আহমদ শফী বলেছেন, গত ২৫ মে মধ্যরাতে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে গ্রিক দেবীর মূর্তি অপসারণের মাত্র দুই দিনের মাথায় গতকাল (শনিবার) দিবাগত রাতে সুপ্রিমকোর্ট এ্যানেক্স ভবনের সামনে পুনঃস্থাপন করা হয়েছে। এটা অত্যন্ত হতাশাজনক। ভাস্কর্য পুন:স্থাপনের ঘটনায় তিনি মর্মা হত হয়েছেন।
তিনি বলেন, আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক জেতনার পরিপন্থী এই বিদেশি ভাস্কর্যকে বাংলাদেশের কোথাও স্থান দেওয়া যাবে না।
শফী আরও বলেছেন, থেমিস দেবীর ভাস্কর্য অপসারিত হয়েছে জেনে অসুস্থ শরীরেও আনন্দ পেয়েছিলাম। দেশবাসীর সঙ্গে শুকরিয়া জ্ঞাপন করছিলাম। কিন্তু মাত্র দু’দিনের মাথায় যখন দেশবাসী পবিত্র রমজানকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুতি নিচ্ছিল, প্রথম রোজার তারাবিহ আদায় করে প্রশান্ত চিত্তে ঘরে ফিরেছিল, তখনই এমন সংবাদে সমগ্র দেশবাসীর সঙ্গে আমরা বিস্মিত হতবাক এবং বাকরুদ্ধ।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আমরা বার বার বলেছি, ইসলামে ইনসাফ বা ন্যায়ের ধারণা একটি মৌলিক ধারণা বা গুরুত্বপূর্ণ বিধান। এমনকি ইনসাফ কায়েম ছিল বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ঘোষিত লক্ষ্য। সেই ন্যায়ের বা ইনসাফের কোনও প্রতীকায়ন যদি গ্রিক ঐতিহ্য থেকে ধার করা হয়, তবে প্রকান্তরে ধরে নেওয়া হয় যে আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্যে ও ধর্মে ন্যায়ের কোনও ধারণা বা অবস্থান ছিল না। এটা উপনিবেশিক ভাবাদর্শ।
তিনি বলেন, আমরা আগেই জানিয়েছিলাম, গ্রিক দেবী থেমিসের এই প্রতীককে চিরতরে পরিত্যাগ করতে হবে। এই ভাস্কর্য; যা জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে স্থাপিত হয়েছিল, তাকে বাংলাদেশের কোথাও স্থান দেওয়া যাবে না। কিন্তু, আমাদের সব আবেদন নিবেদন এবং শান্তিপূর্ণ দীর্ঘ আন্দোলনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে থেমিসের পুনঃস্থাপন এটাই প্রমাণ করে, এদেশের মানুষের সম্মিলিত আকাঙ্খাকে সরকার বিন্দুমাত্র গুরুত্ব দিচ্ছে না।
শফি বলেন, আমরা আমাদের ঈমান ও আক্বিদার জমিনে দাঁড়িয়ে এই উপনিবেশিক ভাবাদর্শের বিরুদ্ধেই বলেছি, অথচ সেক্যুলার মিডিয়া আমাদের যুক্তি বার বার উপেক্ষা করেছে। আমাদের এই যুক্তির কথা তাদরেকে বার বার জানানো হলেও তারা তা ছাপায় না। এমনকি আমরা এও বলেছি, দেবী থেমিস আধুনিক রাষ্ট্র ধারণায় বিচার বিভাগের যে অবস্থান, তারও পরিপন্থী। কারণ, থেমিস গ্রিক সংস্কৃতির ঐশ্বরিক আইনের (ডিভাইন ল’) প্রতীক। যে রাষ্ট্র নিজেকে আলাদাভাবে স্যেকুলার বলে পরিচয় দিয়ে নিজের কৌলিন্য জারি করে, সে কীভাবে গ্রিক ঐশ্বরিক আইনের প্রতীককে নিজের বলতে পারে ?
হেফাজত আমির বলেন, এ পর্যায়ে দ্বিতীয় প্রশ্নটি আরও মারাত্মক। গ্রিক পুরাণ মতে, থেমিস সোশ্যাল অর্ডার বা সামাজিক শৃঙ্খলাও রক্ষা করে। সে শুধু ন্যায় বিচারই করে না, সে শক্তি প্রয়োগে সামাজিক শৃঙ্খলাও রক্ষা করে। থেমিসের হাতের তরবারি সেই শক্তি প্রয়োগের প্রতীক। আধুনিক রাষ্ট্র সামাজিক শৃঙ্খলার দায়িত্ব বিচার বিভাগকে দেয় না। তা থাকে নির্বাহী বিভাগে। আমরা বিস্ময় প্রকাশ করেছিলাম যে, ঠিক কোন যুক্তিতে নিজেদের আধুনিক ও প্রগতিশীল দাবি করা বাম সেক্যুলারেরা থেমিসের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন ?
হেফাজতের আমির শফী বলেন, থেমিস অপসারণে যখন আমরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছিলাম, রমজানের আগেই কোনও সংঘাত ছাড়াই থেমিস অপসারণে ভেবেছিলাম সবার শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে, ঠিক তখন মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র মাস রমজানের প্রথম রাত্রে থেমিসকে পুনঃস্থাপন করে জাতির ধর্মীয় বিশ্বাস ও আবেগের সঙ্গে তামাশা করা হয়েছে।