শুক্র. মার্চ ২৯, ২০২৪
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

‘ভোট ডাকাতিতে বিস্ময়কর সাফল্য অর্জন করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ’

খােলাবাজার২৪, শনিবার,  ১২ জানুয়ারি ২০১৯ঃ  বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন,‘৩০ ডিসেম্বর আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাজানো ডিজাইনে ভোট লোপাটের মহা ধুমধাম এখন চলছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটে। মহাভোজ উৎসবের মহাসমারোহ চলছে পুলিশ সদর দফতর থেকে থানার পুলিশ স্টেশনগুলোতে। এভাবে অন্যান্য বাহিনীর ইউনিটেও চলছে ভোজের মহাউৎসব।’

তিনি বলেন, ‘যে দল ভোটে বিজয়ী হয়, সাধারণত তাদের কর্মীরাই উৎসব, ভোজ ইত্যাদিতে মেতে থাকে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একটি রাজনৈতিক দলের তথাকথিত বিজয়ে উৎসব উদযাপন করে এটা শুধু নজিরবিহীন ও হাস্যকরই নয়, হতবাক করা বিস্ময়ও বটে। এটি গণতন্ত্র ও নির্বাচন নিয়ে তামাশার বিকৃত প্রকাশ। সুতরাং এটা আরও সুষ্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো ২৯ ডিসেম্বর রাত ও ৩০ ডিসেম্বর ভোট ডাকাতিতে বিস্ময়কর সাফল্য অর্জন করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এখন গণতন্ত্রের লাশের ওপর মহাভোজের আয়োজন করেছে তারা।এই সমস্ত ঘটনায় আবারও প্রমাণিত হয়,দেশ চলবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী দ্বারা একতরফা নির্বাচনের সংস্কৃতিতে এবং শেখ হাসিনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়েই দেশের নিয়ন্ত্রণ রাখবেন।’

শনিবার (১২ জানুয়ারি) সকাল সোয়া ১১ টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, ‘সরকার তথাকথিত হিংসা ও মহাজালিয়াতির নির্বাচনের বিনিময়ে দেশের মানুষের নাগরিক স্বাধীনতা খর্ব করেছে। এখন সরকার দমননীতির উত্থান প্রবল থেকে প্রবলতর করছে। সারাদেশে বিএনপির অনেক নেতাকর্মীর বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে, নেতাকর্মীদেরকে নিজ বাড়িতে যাওয়ার পথে শারীরিকভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে। তাদের দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি কেড়ে নেয়া হচ্ছে। বিএনপি নেতার ছেলে বিদেশ থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নেয়া শেষে দেশে ফিরে এসে নিজ এলাকায় সমাজ সেবা করতে গেলেও তার ওপর আক্রমণ চালানো হচ্ছে।

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সারাদেশে বিরোধী দল, মত ও বিশ্বাসের মানুষরা সরকারি সন্ত্রাসবাদে আক্রান্ত। সরকার মনে হচ্ছে দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ৩০ ডিসেম্বরের আগের দিন অন্ধকার রাতে ভোট ডাকাতি ও ভোট হরিলুট সরকারের জন্য শুভবার্তা নয়। বরং এই অপকর্মটির জন্য অচিরেই বিশাল রাজনৈতিক ধাক্কা খেতে হবে বর্তমান ভোটারবিহীন সরকারকে। জোর করে ক্ষমতায় থাকাটা এই ম্যান্ডেটহীন সরকারের জন্য হবে বিবিধ অমঙ্গলের উৎস।’

তিনি বলেন, ‘গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সংলাপ ও পুনরায় নির্বাচন প্রশ্নে ঐক্যফ্রন্টের দাবি হাস্যকর। তাহলে আমি বলতে চাই শেখ হাসিনার অধীনে অনুষ্ঠিত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনটা কি খুবই সম্মানজনক হয়েছে? রাষ্ট্রের সব শক্তি প্রয়োগ প্রয়োগের মাধ্যমে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের দমন করে এরকম ভোট সন্ত্রাসের একতরফা নির্বাচনের পরেও কি এটা প্রমাণ করে আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার? অথচ এতো বড় নজিরবিহীন ভুয়া ভোটের নির্বাচনের পরেও আত্মমর্যাদাহীন আওয়ামী নেতারা নির্বাচন নিয়ে নির্লজ্জ গলাবাজি করছেন।’

রিজভী বলেন, ‘বিশ্বের দেশগুলোর গণতন্ত্রের তালিকায় নেই বাংলাদেশ। এ নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইকনোমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ)। বর্তমানে বাংলাদেশ পূর্ণ গণতন্ত্র বা ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্রের অবস্থানেও নেই। বাংলাদেশের অবস্থান স্বৈরতান্ত্রিক দেশগুলোর সমপর্যায়ে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বাংলাদেশে নির্বাচনে বেশ অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে, যা নির্বাচনে সুষ্ঠুতা ও নিরপেক্ষতায় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। বিরোধী দল ও প্রার্থীর ওপর সরকারি চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমান রাজনৈতিক সংস্কৃতি ত্রুটিপূর্ণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা থেকেও বেশি খারাপ। বাংলাদেশে বর্তমানে দুর্নীতি ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করেছে, আইনের শাসন খুবই দুর্বল, সিভিল সোসাইটি দুর্বল। সাংবাদিকরা সবসময় হয়রানি ও চাপের মুখে থাকে এবং বিচার ব্যবস্থাও স্বাধীন নয়। ইআইইউ রিপোর্ট প্রকাশের পর সরকারের কিছু আজ্ঞাবাহী বুদ্ধিজীবী অবান্তর কথাবার্তা বলছেন। তারা বলেছেন গণতান্ত্রিক ধাপে বাংলাদেশ এগিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অবস্থান তলানিরও নীচে অতলে নিমজ্জিত।

সংবাদ সম্মেলনে দলের ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শাহিদা রফিক, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-দফতর সম্পাদক মুনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।