খােলাবাজার ২৪,সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০১৯ঃ বাংলাদেশের আইসিইউতে ৮০ শতাংশ মৃত্যুর জন্য দায়ী হতে পারে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ‘সুপারবাগ’। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)-তে অবস্থিত দেশের সর্ববৃহৎ আইসিইউতে কর্মরত জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক সায়েদুর রহমানের বরাতে এ খবর দিয়েছে বৃটেনের দ্য টেলিগ্রাফ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে এই অবস্থা সবচেয়ে ভয়াবহ। এসব দেশে চিকিৎসকের দেওয়া অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের পরামর্শ যথাযথভাবে অনুসরণ না করা, গবাদী পশু মোটাতাজা করার জন্য অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নিজ থেকেই অ্যান্টিবায়োটিক নেওয়া এবং দোকান থেকে অবৈধভাবে অ্যান্টিবায়োটিক কেনার সুযোগকে এক্ষেত্রে দায়ী করা হয়েছে।
ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, ২০১৮ সালে হাসপাতালটির আইসিইউতে ভর্তি হয়েছিলেন ৯০০ জন রোগী। এদের ৪০০ জনই মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে ৮০ শতাংশের মৃত্যুর কারণ হিসেবে ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাকজনিত ইনফেকশনকে দায়ী করা হয়েছে। এসব ইনফেকশন ছিল অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী।
তিনি বলেন, অ্যান্টিবায়োটিক দোকানে কেনাবেচা করার সুযোগ থাকা উচিত নয়। এসব ওষুধ শুধুমাত্র হাসপাতাল থেকে বিতরণ করা যাবে, এমন ব্যবস্থা করা উচিত। এক্ষেত্রে আরও কড়াকড়ি প্রয়োজন।
অধ্যাপক আবু সালেহ আরও বলেন, ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য কোনো নতুন অ্যান্টিবায়োটিক নেই। পাশাপাশি, বর্তমানে যেসব অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলোর কার্যকারিতা কমে যাচ্ছে। এ কারণে পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ায় এই সুপারবাগের বিস্তারের পেছনে মূল দায়ী করা হচ্ছে, অর্থের লোভে অযোগ্য ডাক্তারদের দেওয়া আ্যান্টিবায়োটিকে ভুল প্রেসক্রিপশন। অনেক দেশে আবার গবাদী পশুর রোগের জন্য প্রেসক্রিপশন দেওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিধিনিষেধ অনুসরণ করা হয় না। মানুষের জন্য ব্যবহার্য অনেক অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয় গবাদী পশুকে, যাতে দ্রুত ওজন বাড়ানো সম্ভব হয়।
এদিকে, দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকার এই প্রতিবেদনের পর প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। রিটে বিবাদী করা হয়েছে, স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, জনপ্রশাসন সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের।
বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রিটের শুনানি হবে বলে জানান এই আইনজীবী।
এ ব্যাপারে সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বলেন, অ্যান্টিবায়োটিক শুধু যে আমরা নিজেরা নিচ্ছি তা নয়, কৃষিজাত পণ্য, গরু, ছাগল ও মুরগিতেও অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাবহার হচ্ছে। ফলে পরোক্ষভাবে আমাদের শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক প্রবেশ করছে। যার কারণে একটা বয়সে আর অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে না। অ্যান্টিবায়োটিক একটা সময়ে আমাদের জন্য ছিলো বড় আবিষ্কার, কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই সময়ে এটা আমাদের জন্য অভিশাপ হয়ে দাড়িয়েছে। এর একমাত্র কারণ হলো অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রির ক্ষেত্রে বাংলাদেশে কোন নিয়ম-কানুন মানা হয় না।
তিনি বলেন, আমরা চেয়েছি যে অ্যান্টিবায়োটিকটা যেন অন্তত স্পেশালাইজড ডাক্তারের প্রেসক্রিপশান ছাড়া এটা বিক্রি না হয়। কারণ, বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যপারটা বুঝছেন না। আমি মনে করি এ ব্যাপারটা নিয়ে আমাদের এখনি সচেতন হওয়া প্রয়োজন, নয়তো আমাদের পরবর্তী ১/২টা জেনারেশনে আর কোন ওষুধে কাজ করবেনা।
উল্লেখ্য, জাতীয় ওষুধ নীতি ২০১৬-এর ধারা ৩ (১৫)- তে প্রেসক্রিপশন ছাড়া বিক্রিযোগ্য ওষুধের তালিকা প্রণয়নের বিষয়ে বলা হয়েছে— ‘উন্নত দেশগুলোর আদলে সাধারণভাবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে’ এই তালিকা প্রণয়ন করা হবে। ধারা ৪ (১৮) -এ ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) বা প্রেসক্রিপশন ছাড়া বিক্রিযোগ্য ওষুধ সম্পর্কে বলা হয়েছে— নিবন্ধিত অ্যালোপেথিক, আয়ুর্বেদিক ও ইউনানি চিকিৎসা পদ্ধতির ওষুধের মধ্য থেকে সাধারণভাবে ব্যবহৃত এবং কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ওষুধ তালিকাভুক্ত করা হলো। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর সময় সময় এ তালিকা হালনাগাদ করবে বলে ওই নীতিমালায় বলা হয়েছে।