শুক্র. মার্চ ২৯, ২০২৪
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলাবাজার ২৪,বৃহস্পতিবার ,০৯মে ২০১৯ঃ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিলক্ষণ জানেন, খোলা মঞ্চে দাঁড়িয়ে শব্দগুলো উচ্চারণ করা যে ঠিক হচ্ছে না। নিজেই মানলেন সে কথা। বললেন, স্কুল-কলেজের বাচ্চারা আমার বক্তৃতা শুনছে। ওরা যেন এই সমস্ত কথা না-শেখে, না-বলে।

নরেন্দ্র মোদি কি মরিয়া? তা না-হলে ‘কাজটা ঠিক নয়’ জেনেও মহাভারতের স্মৃতিধন্য কুরুক্ষেত্রের সভায় প্রায় তালিকা ধরে ধরে কেন তিনি আউড়ে গেলেন— ‘নর্দমার কীট, পাগল কুকুর, ভস্মাসুর, দাউদ ইব্রাহিম…!’

দিনের শেষে প্রশ্ন উঠল, তার উদ্দেশে বিরোধী শিবির থেকে কী কী কুকথা উড়ে এসেছে, সেই তালিকাটা কি বিজেপি থেকেই বানিয়ে দেওয়া হয়েছিল মোদিকে? আরও বড় প্রশ্ন, নিতান্ত অ-মোদিসুলভ অনুযোগের সুরে কেন তাকে বলতে হল, ‘আমাকে যখন ওরা এই কথাগুলো বলেন, তখন তো কেউ কোনও শব্দ করে না!’

প্রয়াত রাজীব গান্ধীকে ‘ভ্রষ্টাচারী নম্বর ওয়ান’ বলে গত ক’দিন ধরেই বিরোধী শিবির ও আমজনতার একাংশের নিন্দা কুড়িয়েছেন মোদি। সে দিন রাজীব-পুত্র রাহুল বলেছিলেন, ‘আলিঙ্গন রইল।’ এর আগে পুরুলিয়ায় কংগ্রেস সভাপতি বলেছেন, ‘আমরা ভালবাসা দিয়েই ওকে হারাতে যাচ্ছি।’

আর তার জের টেনে মোদি বলেছেন, ‘সত্যের ভূমি কুরুক্ষেত্রে যখন এসেছি, তখন শুনে নিন ওদের ভালবাসার অভিধানে কী কী শব্দ আছে। আমাকে বলা হয়েছে ‘সব চেয়ে নির্বোধ প্রধানমন্ত্রী’, ‘জওয়ানদের রক্তের দালাল’।… কংগ্রেসের এক নেতা আমাকে নর্দমার কীট বলেছিলেন, একজন বলেছিলেন পাগল কুকুর, এক প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী বাঁদরও বলেছিলেন।’

মোদির অভিযোগ, কুকথা থেকে রেহাই পাননি তার মা-ও। ‘ওরা প্রশ্ন তুলেছেন, আমার বাবা কে? মনে রাখবেন, এ সবই বলা হয়েছে এক প্রধানমন্ত্রীকে। আমাকে টুকরা টুকরা করবে বলেছে, এমন লোককেও টিকিট দিয়েছে কংগ্রেস’— এ কথা বলার পরেই মোদি প্রশ্ন তুলেছেন, কেন এর জন্য কংগ্রেস নেতাদের কেউ কিছু বলছে না।

পশ্চিমবঙ্গে অমিত শাহ দাবি করেছিলেন, মোদিকে আলাদা আলাদা ৫১টি কটূক্তি করেছে কংগ্রেস। সেই তালিকায় জুড়েছে ‘ঔরঙ্গজেব’ ও ‘জল্লাদ’। বারাণসীর বিশ্বনাথ মন্দিরে মোদির নির্দেশে ৫৫০ টাকার টিকিট চালু হওয়ার পাশাপাশি মন্দিরে যাওয়ার করিডর তৈরির জন্য অনেক মন্দির ভাঙা হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন কংগ্রেস নেতা সঞ্জয় নিরুপম। তিনি বলেন, ‘ঔরঙ্গজেব কাশীতে মন্দির ভেঙেছিলেন, জিজিয়া কর বসিয়েছিলেন। মোদি ঔরঙ্গজেবের আধুনিক অবতার।’ আর বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রাবড়ী দেবীর আক্রমণ— ‘প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা ওকে ‘দুর্যোধন’ বলে ভুল করেছেন। অন্য কিছু বলা উচিত ছিল। উনি তো জল্লাদ, যিনি বিচারক আর সাংবাদিকদের হত্যা করান। এমন মানুষের মন আর আদর্শ তো ভয়ঙ্কর হবে।’ বিজেপি এবং জেডিইউ নেতাদের ‘নর্দমার কীট’ বলেছেন রাবড়ী। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে আরজেডি-র তৈরি প্যারডি— ‘মোদি মোদি? হ্যাঁ পাপা / কোনও উন্নয়ন? না পাপা/ কৃষকেরা খুশি? না পাপা / মহিলারা নিরাপদে? না পাপা / ১০ কোটি চাকরি? না পাপা / (প্রতি অ্যাকাউন্টে) ১৫ লক্ষ? না পাপা / শুধু জুমলা (ভাঁওতাবাজি)? হা হা হা!’

কংগ্রেস নেতাদের একাংশের দাবি, মোদি নিজেও চান তাকে কটূক্তি করা হোক। গুজরাটে দাঙ্গার পরে সোনিয়া গান্ধী তাকে ‘মওত কা সওদাগর’ বলেছিলেন। সেই মন্তব্য অস্ত্র করে ভোটে গিয়ে মেরুকরণের ব্যাপক ফায়দা তুলেছিলেন মোদি।

গুজরাটের গত বিধানসভা ভোটের আগে কংগ্রেস নেতা মণিশঙ্কর আইয়ার মোদিকে ‘নীচ’ বলেছিলেন। সেখানেও সহানুভূতি কুড়িয়েছিলেন মোদি। জোর ধাক্কা খেয়েও বিধানসভা ধরে রেখেছিল বিজেপি। কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘সে বার রাহুল পত্রপাঠ সাসপেন্ড করেছিলেন মণিশঙ্করকে। বিজেপি তাদের কোনও নেতার বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নিতে পেরেছে কি? ভোটের উত্তাপে কোনও দল শালীনতার সীমা ছাড়ালে তা কাম্য নয়। কিন্তু ভোটের চিন্তায় যিনি আত্মঘাতী বিস্ফোরণে নিহত একটি মানুষকে নিয়ে টানাটানি করেন, তার স্ত্রীকে ‘বিধবা’ এবং ‘জার্সি গরু’ বলেন, তার পুত্রকে ‘হাইব্রিড বাছুর’ বলেন— তার মুখে ‘আমাকে ওরা কটূক্তি করছে’ বলে অনুযোগও শোভা পায় না!’