শুক্র. এপ্রি ১৯, ২০২৪
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলাবাজার ২৪, সোমবার ১৭ জুন ২০১৯ঃ বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ক্ষুব্ধ ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে জানতে চান, ‘কার সিদ্ধান্তে ভোটবিহীন সরকারের অবৈধ সংসদে যেতে চার এমপি শপথ নিলেন। আবার আপনি এমপি হয়ে কার সিদ্ধান্তে শপথ নিলেন না। সংরক্ষিত নারী আসনে প্রার্থী বাছাই ও বগুড়া-৬ আসনে উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থী নির্ধারণে স্থায়ী কমিটি বা দলের সংসদীয় বোর্ড কেন জানল না? এতে কি স্থায়ী কমিটিকে অপমান করা হয়নি? আপনি কার ব্যাগ ক্যারি করতে এ সিদ্ধান্ত নিলেন?’

জবাবে মির্জা ফখরুলও কিছুটা ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, ‘হোয়াট ডু ইউ মিন? যা হয়েছে দলের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তেই হয়েছে। তাছাড়া ব্যাগ ক্যারি করার অভ্যাস আমার নেই, আপনারই আছে। আপনিই তো এরশাদের দল করেছেন। তার ব্যাগ ক্যারি করেছেন।’

জবাবে ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, ‘আগে কী করেছি, সেটা মূল বিষয় নয়। এখন কী করছি, সেটা দেখার বিষয়।’ এ সময় বিএনপি মহাসচিব বলেই ফেলেন, এভাবে দায়িত্ব পালন সম্ভব নয়। আপনারা যদি মনে করেন, তাহলে দায়িত্ব ছেড়ে দিই?।এ সময় স্কাইপিতে অংশ নিয়ে বৈঠকের সভাপতি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দুই নেতার তর্কবিতর্ক ‘চুপচাপ’ শুনছিলেন। শেষ মুহূর্তে অবশ্য ‘ঐক্যবদ্ধ’ থাকার অঙ্গীকার করে হাসিমুখে স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষ হয়।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য বিএনপি মহাসচিবের কাছে তার শপথ না নেওয়ার কারণ জানতে চান। ওই নেতা বলেন, একই বিষয়ে দুই সিদ্ধান্ত কেন? কয়েকজন শপথ নিলেন। আর আপনি শপথ নেননি। দুটোরই আপনি জবাব দিয়েছেন, দলের কৌশলের অংশ হিসেবেই আপনি সংসদে যাননি। সেই কৌশলটা কী বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেন। এর জবাবেও তিনি বলেন, যা হয়েছে দলের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তেই হয়েছে। আপনার হাইকমান্ডকে জিজ্ঞাসা করেন।

গত শনিবার সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অবশ্য আড়াই ঘণ্টা বৈঠক চলার পর কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়। আগামী শনিবার আবারও স্থায়ী কমিটির মুলতবি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

তারেক রহমানের সভাপতিত্বে বৈঠকে অংশ নেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

বৈঠকের বিতন্ডা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ  বলেন, ‘যা কিছু হয়েছে দলের স্বার্থেই হয়েছে, গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে। এখানে বিতন্ডার কিছু নেই। আমরা সাংগঠনিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। বৈঠক আপাতত মুলতবি রয়েছে। আগামী শনিবার আবারও বৈঠক হবে।’ তবে  যোগাযোগ করা হলে মির্জা ফখরুলকে ফোনে পাওয়া যায়নি।

স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য  জানান, চার এমপির শপথ, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানাকে মনোনয়ন দেওয়া, বগুড়া-৬ আসনে জি এম সিরাজকে প্রার্থী করাসহ কয়েকটি ইস্যুতে বাক-বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন প্রভাবশালী দুই সদস্য। একপর্যায়ে তারা উচ্চবাচ্যও শুরু করেন। বেশ কিছু সময় এ বিতর্ক চলে। পরে অবশ্য স্থাইপিতে বৈঠকে অংশ নেওয়া দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও স্থায়ী কমিটির অন্য সদস্যের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

সবশেষে সবাই একমত হন, যে কোনো মূল্যে দলের ঐক্য বজায় রাখতে হবে। কোনোভাবেই ঐক্যে ফাটল ধরানো যাবে না। এরপর সবাই হাসিখুশি মুখে বেরিয়ে আসেন। স্থায়ী কমিটির দুই সদস্যের তর্ক-বিতর্ক চলার একপর্যায়ে আরেক সদস্য সবার উদ্দেশে বলেন, এর আগে আমরা শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাব না বললেও গিয়েছি। বেগম খালেদা জিয়া ছাড়া নির্বাচনে যাব না বলেও গিয়েছি। ৯৬ সালে শেখ হাসিনা নির্বাচনে যাবেন না বলে ঘোষণা দেওয়ার পরও তা পরিবর্তন করেছেন।

সেই সদস্য আরও বলেন, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হতেই পারে। আমরা নির্বাচনে যাব না বলেও গিয়েছি। শপথও নিয়েছি। সিদ্ধান্ত আমরা পরিবর্তন করতেই পারি। কিন্তু আপনি কেন বললেন এটি শুধু ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্ত। তিনি যখন সিদ্ধান্ত নেন, তখন তা দলীয় সিদ্ধান্তই বলতে হবে। আবার আপনি শপথ নিলেন না। তাহলে দাঁড়াল কী? ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান একই বিষয়ে দুটি সিদ্ধান্ত দিলেন? আবার আপনি বললেন শপথ না নেওয়ার আগের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল? এটিও কেন বলতে গেলেন।

এ প্রসঙ্গে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ব্যাপারে আমরা কিছু কর্মসূচি দেব। তবে এখনই তা চূড়ান্ত হয়নি। আমরা সাংগঠনিক কর্মকা  নিয়েই আলোচনা করেছি।’

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা স্থায়ী কমিটির বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। কিন্তু আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, এ নিয়ে গণমাধ্যমে কোনো কথা বলা যাবে না।’

স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে দুই নেতা বলেন, সার্বিক বিষয় নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এ মুহূর্তে কী করা যায় বিশেষ করে কারাবন্দী চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মামলা ও জামিন এবং তার মুক্তরি দাবিতে কী ধরণের র্কমসূচি দেওয়া যায়, দল পুনর্গঠন, ২০-দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের র্কমকা  নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

সূত্রমতে, ছাত্রদলের চলমান পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয় স্থায়ী কমিটিতে। তবে কমিটি বাতিলের পর ছাত্রদলের বর্তমান কর্মকান্ডে  চরম ক্ষুব্ধ হন তারেক রহমান। স্থায়ী কমিটির নেতাদের তিনি বলেন, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা এ নিয়ে কাজ করছেন। তারাই এ বিষয়ে সমাধান করবেন।

যদিও সাবেক ছাত্রদল নেতাদের বিরুদ্ধেই আন্দোলনরতদের ইন্ধন দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের বিজয়ীরা গত ২৯ এপ্রিল তারেক রহমানের সিদ্ধান্তে শপথ নেন। কিন্তু দলের স্থায়ী কমটিরি সিদ্ধান্ত ছিল শপথ না নেওয়ার। এ ঘটনায় প্রকাশ্যে  ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্য। তাদের ক্ষুব্ধতা এতটাই ছিল যে, ৪ মে বৈঠক ডাকলেও স্থায়ী কমিটির ওই কজন সদস্য বৈঠক বর্জন করার ঘোষণা দিলে কয়েক ঘণ্টার মাথায় তা বাতিল করা হয়।

এর আগে সর্বশেষ স্থায়ী কমটিরি বৈঠক হয়েছিল ২৮ এপ্রিল রাতে। ওই বৈঠকে তারেক রহমান স্থায়ী কমিটির সদস্যদের কাছ থেকে শপথ নেওয়ার বিষয়ে একক সিদ্ধান্ত চেয়ে নিয়েছিলেন। তবে নবনির্বাচিত চার এমপি শপথ নিলেও দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল শপথ নেননি। এ নিয়ে দলের মধ্যে কিছুটা বিভ্রান্তি দেখা দেয়। দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে সমঝোতার অংশ হিসেবে শপথ নেওয়ার গুঞ্জন ছিল। পরে অবশ্য দলের হাইকমান্ড থেকে জানানো হয়, বিএনপি নেতাদের শপথের সঙ্গে বেগম জিয়ার মুক্তির কোনো সম্পর্ক নেই।