শুক্র. মার্চ ২৯, ২০২৪
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলাবাজার ২৪,শুক্রবার,১২জুলাই,২০১৯ঃ উজান থেকে ধেয়ে আসা পাহাড়ী ঢল আর ভারী বৃষ্টিতে লালমনির হাট ও নীলফামারীতে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বিপদসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে তিস্তার পানি।

ফলে নীলফামারীর ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার প্রায় ১৫ গ্রামের পাঁচ হাজারেরও বেশি পরিবার বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। সেই সাথে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বেড়েছে নদ- নদীর পানি। এ অবস্থায় সারাদেশেই বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

শুক্রবার (১২ জুলাই) সকালে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের (বাঁধ) ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে। যা বিপদসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছিল। এর প্রভাবে নতুন করে লালমনিরহাটের ৬০টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়েছে।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যাপূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে। এ সময় বিপদসীমার দুই সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও দুপুর ১২টায় বিপদসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপরে চলে যায়। এরপর বিকাল ৩টায় পানি বেড়ে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার, বিকেল ৬টায় আরও ৫ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে।

জানা গেছে, ওপারে গোজলডোবা তিস্তা ব্যারাজের জলকপাট খুলে দেয়ায় ভারত তাদের অংশে হলুদ সতর্কতা জারি করেছে। এতে করে উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে।

পাউবো সূত্র জানায়, পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে প্লাবিত হয় তিস্তা ব্যারাজের উজান ও ভাটির চর ও নদীতীরবর্তী গ্রাম গুলো। এ অবস্থায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় বেড়েছে নদ-নদীর পানি। নদ -নদীর পানি আরো বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। বন্যার সাথে যোগ হয়েছে নদী ভাঙ্গন। দুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি আর খাবারের সংকট ।

সারা দেশের পরিস্থিতি:

উজানের পাহাড়ি ঢল ও টানা ভারী বৃষ্টিতে সৃষ্ট এ বন্যায় জেলার পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, সিংগিমারী; কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, কাকিনা; আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা; সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুন্ডা, কুলাঘাট ও মোগলহাট ইউনিয়নের তিস্তা ও ধরলার নদীর চরাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এসব ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

চরাঞ্চলের পানিবন্দী খেটে খাওয়া মানুষগুলো শিশুখাদ্য ও নিরাপদ পানির সমস্যায় পড়েছে। তিনদিন পানিবন্দী থাকলেও সরকারিভাবে কোনো ত্রাণ বা শুকনো খাবার পৌঁছানো হয়নি বলে পানিবন্দী পরিবারগুলোর অভিযোগ।

বন্যার পানিতে ডুবে গেছে চরাঞ্চলের রাস্তাঘাট, হাট বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। জেলার নদী তীরবর্তী অঞ্চলের বিদ্যালয়গুলো বন্যার পানি ডুবে যাওয়ায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে।

এদিকে, টানা ভারী বৃষ্টিতে শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে পানির স্রোতে মহারশী নদীর দীঘিরপাড় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙ্গে ৫টি ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে আছে প্রায় ৫ হাজার মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বীজতলা, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ।

সিরাজগঞ্জে যমুনায় পানি বৃদ্ধির সাথে-সাথে বেড়েছে নদী ভাঙ্গন। শংকায় আছে নদী তীরবর্তী মানুষ। বোয়ালকান্দির বেশ কিছু স্থাপনা ভাঙ্গনের মুখে।

পাহাড়ি ঢলে বেড়েছে নেত্রকোনার কলমাকান্দাসহ সকল নদীর পানি। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, টানা বৃষ্টিতে দ্বিতীয় দফায় সোমেশ্বরী- কংস নদীর পানির বাড়ায় বন্যা হতে পারে নিম্নাঞ্চলে।

এছাড়াও উত্তর পূর্বাঞ্চলে বেড়েছে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বাড়ছে। সিলেটের কানাইঘাটে সুরমার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জাফলং ও লালাখাল এলাকা দিয়ে উজানের ঢল অব্যাহত থাকায় জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাটে পানি বেড়েছে। তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট।

ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা জানান, তিস্তার বন্যায় ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার পূর্বছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশাচাঁপানী, ঝুনাগাছচাঁপানী, ডাউয়াবাড়ি, গোলমুন্ডা, শৌলমারী, কৈমারীসহ ১০ ইউনিয়নের তিস্তা অববাহিকার ১৫টি চর ও গ্রাম তিস্তার বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ওই সকল এলাকায় বসবাসকারীদের নিরপদে উঁচু স্থানে সরে থাকার জন্য বলা হয়েছে।