শনি. এপ্রি ২০, ২০২৪
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements
খােলাবাজার ২৪,শনিবার,১৩জুলাই,২০১৯ঃমদ এবং কোকেন যেমন ক্ষতিকর, শিশুদের জন্য স্মার্টফোন ঠিক তেমনটাই ক্ষতিকর। লন্ডনে অনুষ্ঠিত শিক্ষা বিষয়ক একটি সম্মেলনে এমন মতামতই দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সন্তানকে স্মার্টফোন দেয়ার অর্থ হলো তাদের হাতে এক বোতল মদ কিংবা এক গ্রাম কোকেন তুলে দেয়া। কারণ স্মার্টফোনে আসক্তি মাদকাসক্তির মতোই বিপজ্জনক।

সম্মেলনে আরো বলা হয়, স্ন্যাপচ্যাট ও ইনস্টাগ্রামে বন্ধুদের বার্তা পাঠানোতে সময় ব্যয় মাদক ও অ্যালকোহলে আসক্তির মতোই বিপজ্জনক হতে পারে। তাই মাদকাসক্তি দূর করতে যেমন পদক্ষেপ নেয়া হয়, স্মার্টফোন আসক্তি থেকেও শিশুদের বের করে নিয়ে আসতে একই রকম চেষ্টা করা উচিত।

প্রায় দেখা যায়, অভিভাবকরা বাচ্চাকে শান্ত রাখার জন্য তার হাতে স্মার্টফোন বা ট্যাব ধরিয়ে দেন। গান, কার্টুন বা মজার ভিডিও চালিয়ে দিয়ে তাকে শান্ত রাখা হয়। আপনার-আমার সবার বাসাতেই এই চিত্র এখন নিত্যদিনের। স্মার্টফোনের কল্যাণে শিশুদেরকে শান্ত রাখা, খাওয়ানো, এমনকি বর্ণমালা ও ছড়া শেখানোর কাজটিও বাবা-মায়ের জন্য অনেক সহজ ও স্বস্তিদায়ক হয়ে উঠেছে। বিপরীতে স্মার্টফোনের উপর নির্ভরতা বাড়ছে শিশুদের। আর এই নির্ভরশীলতাই আমাদের অজান্তে শিশুদের জন্য ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনছে।

প্রযুক্তি আসক্তি ও কিশোর উন্নয়নের বিষয়ে বক্তৃতা করতে গিয়ে লন্ডনের হারলে স্ট্রিট রিহ্যাব ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ ম্যান্ডি সালিগ্যারি বলেন, স্মার্টফোনের পর্দায় শিশু-কিশোরদের সময় কাটানোর আসক্তিকে গুরুত্ব সহকারে দেখা হয় না। আমি সবসময় মানুষকে বলি আপনি যখন সন্তানকে ট্যাবলেট বা ফোন কিনে দিচ্ছেন আপনি আসলে তাদের এক বোতল মদ কিংবা এক গ্রাম কোকেন কিনে দিচ্ছেন। বন্ধ দরজার পেছনে আপনি তাদের সবকিছু করার সুযোগ দিয়ে একলা ছেড়ে দিচ্ছেন। মাদক ও অ্যালকোহলের মতো এসব বিষয়ও একই মস্তিষ্কেই বিরূপ প্রভাব ফেলে।

ডাক্তারি গবেষণা মতে, স্মার্টফোনের অতি ব্যবহারে শিশুর মানসিক বিকাশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শিশুর চিন্তা ও কল্পণাশক্তি ধীরে ধীরে স্মার্টফোনের রঙিন পর্দার গণ্ডিতে আটকা পড়ে যায়। ক্রমান্বয়ে মাদকাসক্তির মতই শিশুরা আক্রান্ত হয়ে পড়ে “স্মার্টফোন আসক্তি”-তে। এরই ধারাবাহিকতায় দেখা দেয় বিভিন্ন ধরণের মানসিক বৈকল্য। এমনকি চিকিৎসকরা এও জানাচ্ছেন যে, স্মার্টফোন আসক্তির কারণে শিশুর শুধুমাত্র মানসিক বিকাশই যে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে তা নয়, বরং তারা শারীরিকভাবেও মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে।

ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোসায়েন্স বিভাগের পরিচালক ড. পিটার হোয়াইব্রোর মতে, স্মার্টফোন বা ট্যাব স্ক্রিন হলো ইলেক্ট্রনিক কোকেন। চীনা গবেষকরা একে বলছেন ডিজিটাল হেরোইন। আর পেন্টাগন ও ইউএস নেভির অ্যাডিকশন রিসার্চ বিভাগ ভিডিও গেম ও স্ক্রিন টেকনোলজিকে অভিহিত করেছে ডিজিটাল মাদক হিসেবে। অনলাইন গেমে আসক্ত ব্যক্তি বাস্তবতা ও কল্পনার মাঝে পার্থক্য করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।

নটিংহ্যাম ট্রেন্ট ইউনিভার্সিটির এক গবেষণাতে ফেসবুককেও মাদকের সাথে তুলনা করা হয়েছে। এ গবেষণায় বলা হয়, ফেসবুক যে আসক্তি তা বোঝার জন্যে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের আচরণের দিকে তাকানোই যথেষ্ট। জীবনের ব্যাপারে আগ্রহ না থাকা, জেদ, পলায়নী মনোবৃত্তি, মুড নির্ভরতা, গোপন প্রবণতা- ইত্যাদি যে সব বৈশিষ্ট্য একজন আসক্ত মানুষের থাকে, ফেসবুকের অতি ব্যবহারকারীদের মধ্যেও তা দেখা গেছে। এমনকি মাদকাসক্তির চিকিৎসা করানোর সময় রোগীদের মধ্যে যে সব উপসর্গ দেখা যায়, ফেসবুক বন্ধ করে দিলেও একই উপসর্গ দেখা গেছে। মাদক না পেলে একজন আসক্ত যেমন অস্থির হয়ে পড়ে, অশান্ত হয়ে ওঠে, ফেসবুক ব্যবহার করতে না পারলেও তাদের মধ্যে এমনি অস্থিরতা, অশান্তি দেখা দেয়।