শনি. এপ্রি ২০, ২০২৪
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলাবাজার ২৪,শনিবার,১৩জুলাই,২০১৯ঃ বৃহস্পতিবার রাতে একাদশ জাতীয় সংসদের তৃতীয় অধিবেশনের সমাপনী বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী নারী ও শিশুদের ওপর পাশবিক নির্যাতন বিষয়ে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন।

নারী ও শিশুদের ওপর নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেছেন, প্রয়োজনে বিদ্যমান আইন আরও কঠোর করা হবে।

তিনি বলেন, ভবিষ্যতে কেউ যেন এ ধরনের পাশবিক নির্যাতন করতে না পারে, সে জন্য এসব অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে গণমাধ্যমের সহযোগিতা চেয়ে ধর্ষকদের চেহারা বারবার দেখানো ও প্রকাশ করার কথা বলেছেন, যাতে তারা সমাজের চোখে হেয় প্রতিপন্ন হয়। তিনি ধর্ষণের বিরুদ্ধে পুরুষ সমাজকে সোচ্চার হওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন।

বলার অপেক্ষা রাখে না, আমরা এখন এক সংকট কাল অতিক্রম করছি। নারী ও শিশু নির্যাতন এখন নৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। প্রতিদিনই সংবাদপত্রের পাতা ও টেলিভিশনের পর্দাজুড়ে থাকছে ধর্ষণ ও ধর্ষণ শেষে হত্যার খবর।

বস্তুত, দেশের মানুষ এখন ধর্ষণ সংস্কৃতির মধ্যে বাস করছে। ঠিক এমন একটি সময়ে প্রধানমন্ত্রীর কঠোর হুশিয়ারি এবং প্রয়োজনে এতদ্সংক্রান্ত আইন কঠোর করার কথা পরিস্থিতির উন্নতিতে সহায়ক হবে নিশ্চয়ই।

প্রধানমন্ত্রী বিদ্যমান আইন আরও কঠোর করার যে কথা বলেছেন তা যথার্থ; কারণ দেখা যাচ্ছে, প্রচলিত আইন নারী ও শিশুর ওপর নির্যাতন রোধে কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও বিলম্বিত বিচার নারী ও শিশু নির্যাতকদের যথাযথ শাস্তি দিতে ব্যর্থ হচ্ছে আর এই বিচারহীনতার সংস্কৃতিই অপরাধপ্রবণদের উসকে দিচ্ছে।

আমরা মনে করি, প্রধানমন্ত্রী বিদ্যমান আইন কঠোর করার যে কথা বলেছেন, তা অচিরেই বাস্তবায়িত হওয়া উচিত। একই সঙ্গে বিচার প্রক্রিয়া যাতে বিলম্বিত না হয়, সে জন্য কী পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে, তা নিয়েও ভাবার অবকাশ রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শিশু ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে পুরুষ সমাজকে সোচ্চার হওয়ার যে আহ্বান জানিয়েছেন, তা-ও যথার্থ। সমাজ গঠিত হয় নারী ও পুরুষ উভয়েরই সমন্বয়ে। সুতরাং নারীর ওপর আঘাত মানে তা পুরুষের ওপরও আঘাত বটে।

বর্তমানে নারী ও শিশু নির্যাতন যে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে, এ প্রেক্ষাপটে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রত্যেক নাগরিকেরই দায়িত্ব ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়ানো ও তা প্রতিরোধ করা। এককথায়, একটি বৃহত্তর সামাজিক আন্দোলন ছাড়া বর্তমান অবস্থা থেকে পরিত্রাণের তেমন সুযোগ নেই।

প্রধানমন্ত্রী ধর্ষকদের চেহারা বারবার গণমাধ্যমে প্রকাশ করার ব্যাপারে গণমাধ্যমের সহযোগিতা কামনা করেছেন। তার এই কথাকে সম্প্রসারিত করে বলা যায়, ধর্ষক-খুনিদের বিরুদ্ধে এমন জনমত তৈরি করতে হবে যাতে এ ধরনের জঘন্য অপরাধে জড়িয়ে পড়তে কেউ উৎসাহিত বোধ না করে।

ধর্ষক-খুনির শাস্তি পাওয়ার বিষয়টি আইনগত, এর অতিরিক্ত হিসেবে এই শ্রেণির মানুষের প্রতি ঘৃণা ছড়িয়ে দেয়াটাও জরুরি। অপরাধপ্রবণরা যদি বুঝতে পারে, ধর্ষণ সামাজিকভাবে একটি জঘন্য কাজ হিসেবে বিবেচিত, তাহলে তা এ ধরনের কাজ থেকে তাদের বিরত রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

ধর্ষণ-খুনের মতো অপরাধের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি এর বিরুদ্ধে প্রবল সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।