শুক্র. এপ্রি ১৯, ২০২৪
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলাবাজার ২৪, রবিবার ,২১জুলাই,২০১৯ঃ ইমরান খান পাকিস্তানের ভালো বন্ধু চীন ও যুক্তরাষ্ট্র। এ অঞ্চলে দেশটির যেটুকু প্রভাব প্রতিপত্তি, তার অন্যতম কারণও এই দুই দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। তবে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সম্পর্কটি কিন্তু মধুর না। তাই বিরোধপূর্ণ দুই দেশ চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে পাকিস্তানের চলাকে বিশ্লেষকেরা বলে থাকেন ‘ডাবল গেম’ বা দ্বৈত খেলা বলে। ব্যাপারটি তাদের চোখে চীনের সঙ্গে বিয়ে আর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রেমের মতো।

গতকাল শনিবার তিন দিনের সফরে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান গেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে এটিই তাঁর প্রথম সফর। দেশটিতে এই সফরের সম্ভাব্য প্রাপ্তি নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওয়াশিংটন ও বেইজিংকে নিয়ে দ্বৈত খেলায় মেতেছেন ইমরান খান। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দুই অর্থনীতির দেশ নিয়ে ইসলামাবাদের অবস্থানটি হলো চীনের সঙ্গে বিয়ে আর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রেম।

পাকিস্তান এ অঞ্চলে চীনের অন্যতম নিকটতম সহযোগী, কৌশলগত বন্ধু। এ অঞ্চল ও বিশ্বে আধিপত্যে বেইজিংকে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করে পাকিস্তান।

তবে পাকিস্তান এ অঞ্চলের কৌশলগত তাৎপর্যের ব্যাপারটি বেশ ভালোই বোঝে। আর তাই দেশটি আর্থিক ও সামরিক সহায়তা লাভের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে কখনোই নাখোশ করে না।

প্যারিসে নির্বাসিত পাকিস্তানি সাংবাদিক তাহা সিদ্দিকী। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান এখন অর্থনৈতিক মন্দার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক ও সামরিক সহায়তা দেশটির জন্য খুব প্রয়োজন। তবে পাকিস্তানে চীনের বিনিয়োগের বিষয়টি আঁকড়ে ধরে রাখার ব্যাপারটি চালিয়ে যাচ্ছেন ইমরান খান। এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে চোখে পড়ে চীন-পাকিস্তানের অর্থনৈতিক যোগাযোগ।’

তাহা সিদ্দিকী আরও বলেন, পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া কার্যত দেশটির অন্যতম ক্ষমতাধর ব্যক্তি। তিনি চান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত হোক। কামার জাভেদ বাজওয়া জানেন, আফগানিস্তান প্রশ্নে ইসলামাবাদকে প্রয়োজন ওয়াশিংটনের। আবার আগামী দিনে ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র যদি কোনো দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে, তবে পাকিস্তান ভাড়াটে রাষ্ট্র হিসেবে সেবা দিতে পাবরে। সে ক্ষেত্রেও তাদের পাকিস্তানকে প্রয়োজন।

তাহা সিদ্দিকী বলেন, এটাও ঠিক যে যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলে চীনের সম্প্রসারণমূলক অবস্থানকে সীমিত করতে চায়। তাই এ ক্ষেত্রে পাকিস্তান দ্বৈত খেলা চালিয়ে যেতে পারে। এ জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন উভয়ের সঙ্গে ইসলামাবাদ জড়িত এবং উভয় দেশ থেকেই সর্বাধিক আর্থিক সুবিধাও চায় তারা। আর এ অঞ্চলের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই এটি করা হবে।

পাকিস্তানকে চাপ দিয়ে তালেবানদের আলোচনার টেবিলে আনার বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রচেষ্টা ছিল বলে মনে করা হয়। কারণ তালেবানদের অধিকাংশ নেতাই পাকিস্তানে আশ্রয় নেওয়া। আর এর ফলে পাকিস্তানকে কিছুটা সুবিধা দেবে, এমন ভাবনাও ছিল।

কিন্তু বাস্তবতা পুরোপুরি বিপরীত। কারণ আফগানিস্তানে মার্কিন সৈন্যদের বিরুদ্ধে হামলা চালানো এবং তালেবান ও হাক্কানি নেটওয়ার্কের মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে ছায়াযুদ্ধ চালানোর জন্য পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করে আসছে ওয়াশিংটন।

ট্রাম্প প্রশাসন পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই তালেবানকে বছরের পর বছর ধরে সামরিক ও রাজনৈতিকভাবে জীবিত রাখার জন্য দোষারোপ করে আসছে।

জুনায়েদ কুরেশি আমস্ট্রারডামভিত্তিক ইউরোপীয় ফাউন্ডেশন ফর সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের (ইএফএসএএস) পরিচালক। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক নিয়ে তিনি বলেন, দুটি দেশের ক্ষেত্রে পাকিস্তানের বৈদেশিক নীতি ভিন্ন হতেই পারে। এক ধরনের ভারসাম্য রক্ষার নীতির জন্যই এটি করেছে দেশটি। অশান্ত পাকিস্তানের নিরাপত্তার স্বার্থেই এ নীতি ছিল।

জুনায়েদ কুরেশি বলেন, এত কিছুর মধ্যে চরমপন্থার উত্থান এবং তাতে সামরিক বাহিনীর সহায়তায় যে বদনাম আছে, পাকিস্তান তা তা ঘুচাতে পারে কি না, তা এখন দেখার বিষয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বজুড়ে দিনকে দিন এ ধারণা মানুষের মধ্য গেঁথে গেছে, কয়েক দশক ধরেই পাকিস্তান সব সময় ‘ডাবল গেম’ খেলছে। এই পরিস্থিতিতে কেউ কেউ প্রশ্ন করতেই পারেন, ইসলামাবাদের সঙ্গে চীনের বিয়ে হয়েছে আর প্রেম-ভালোবাসার সম্পর্কটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে। এটি পাকিস্তানের দ্বৈত নীতির খেলা।