শনি. এপ্রি ২০, ২০২৪
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলাবাজার ২৪, বুধবার,২৪জুলাই,২০১৯ঃ  থেরেসা মে’র পদত্যাগের পর যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল, তার অবসান ঘটল৷ যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আজ বুধবার শপথ নিচ্ছেন বরিস জনসন।

ব্রিটেনের চমকপ্রদ এবং সুপরিচিত একজন ব্যক্তিত্ব বরিস জনসন। তিনি একসময় দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। একইসঙ্গে লন্ডনের মেয়রও ছিলেন।

আলেকজান্ডার বরিস দ্য ফেফেল জনসনের জন্ম নিউইয়র্কে ১৯৬৪ সালের জুন মাসে। চার ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় জনসনের শৈশব কেটেছে নিউইয়র্ক, লন্ডন ও ব্রাসেলসে। ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি মার্কিন নাগরিকত্ব রেখে দিয়েছিলেন।

তার বাবা ছিলেন কূটনীতিক। কনজারভেটিভ পার্টির হয়ে ইউরোপীয় সংসদের সদস্যও হয়েছিলেন। অত্যন্ত অভিজাত স্কুল ইটনে পড়ে গ্রাজুয়েশন করেছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রাবস্থায় ছাত্র ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। যদিও এখন তাকে কনজারভেটিভ পার্টির কট্টর ডানপন্থী অংশের প্রতিনিধি হিসেবে বিবেচনা করা হয়, ছাত্র জীবনে অল্প সময়ের জন্য বামধারার সোশাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টিতে যুক্ত হয়েছিলেন।

আর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরুনোর পর পেশা হিসেবে সাংবাদিকতাকে বেছে নেন। দি টাইমস পত্রিকায় কাল্পনিক একটি উদ্ধৃতি ব্যবহারের জন্য চাকরি খুইয়েছিলেন।

তারপর আরো দুই একটি পত্রিকায় কাজ করার পর যোগ দেন বিখ্যাত দ্য টেলিগ্রাফে। ব্রাসেলসে ওই পত্রিকার প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন।

২০০১ সাল থেকে তৎকালীন বিরোধী কনজারভেটিভ পার্টির টিকেটে এমপি নির্বাচিত হলেও তিনি কখনও ছায়া মন্ত্রিসভায় ঢোকেননি। দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতা তাকে তেমন পছন্দ করতেন না।

সংসদের রাজনীতি ছেড়ে ২০০৮ সালে তিনি লন্ডনের মেয়র নির্বাচিত হন। এবং তখনই ব্রিটেনের রাজনীতিতে ভিন্ন এক মাত্রা পেয়ে যান বরিস জনসন।

বরিস জনসনের দাদার বাবার নাম ছিল আলী কেমাল। জাতিতে তুর্কি মুসলিম। বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে আলী কেমাল প্রথমে একজন সাংবাদিক ছিলেন। পরে রাজনীতিতে যোগ দেন। অটোম্যান মন্ত্রিসভায় খুব কম সময়ের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছিলেন তিনি। ১৯২০ এর দশকে আলী কেমাল গণপিটুনিতে নিহত হন।

বাবার সূত্রে তার বংশের ইতিহাস জানতে, স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে বরিস জনসন একবার তুরস্কে গিয়ে বেশ কিছুদিন ছিলেন।

বরিস জনসন তার মুসলিম হেরিটেজের কথা মাঝেমধ্যেই প্রকাশ্যে বলেন। তবে সম্প্রতি বোরকা পরা নারীদের নিয়ে তার এক কটু মন্তব্যের পর তাকে মুসলিম বিদ্বেষী হিসেবে অনেক গালমন্দ শুনতে হয়েছে।

২০১৬ সালে বেক্সিট গণভোটে হারার পর ডেভিড ক্যামেরন প্রধানমন্ত্রীত্ব এবং দলের নেতৃত্ব ছাড়ার পর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রতিযোগিতায় যোগ দেন বরিস জনসন।

তবে থেরেসা মের সঙ্গে এঁটে উঠতে পারবেন না বুঝতে পেরে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়ান। পরে কনজারভেটিভ পার্টির ব্রেক্সিটপন্থীদের চাপে বরিস জনসনকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী করেন থেরেসা মে।

কিন্তু যেভাবে থেরেসা মে ইউরোপীয় কমিশনের সঙ্গে ব্রেক্সিট চুক্তির জন্য মীমাংসা করছিলেন তাতে প্রচণ্ড নাখোশ ছিলেন বরিস জনসন। ২০১৮ সালের জুলাইতে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন।

এরপর তার ব্রেক্সিট চুক্তিতে সংসদের অনুমোদন পেতে বার বার ব্যর্থ হওয়ার পর চাপের মুখে থেরেসা মে যখন দলের নেতৃত্ব ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানান, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার নতুন সুযোগ লুফে নেন বরিস জনসন।

একবছর আগেও তার সবচেয়ে কট্টর সমর্থকও যা স্বপ্নেও ভাবেননি, সেটাই অর্জন করেছেন বরিস জনসন।

আসলে ছোটবেলায় পুরো পৃথিবীর রাজা হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন বরিস জনসন। ৫৫ বছর বয়সে হয়েছেন ক্ষমতাসীন টোরি পার্টির রাজা। ব্রিটেনকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের করে আনার জন্য উদগ্রীব যে জনগোষ্ঠী তারাই এখন তার অনুগত প্রজা।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো ব্রিটেনেও বরিস জনসন একজন বিভেদ সৃষ্টিকারী বলে পরিচিত। বিভিন্ন সময় উদ্ভট মন্তব্য করে সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতেও পরিণত হয়েছিলেন তিনি।

শুধুই যে বিতর্কিত তাই নয়, অনেক দিক থেকে ব্যতিক্রমীও বটে। বাচনভঙ্গি, শব্দের ক্ষুরধার ব্যবহার, চাহনি, মজা করে কথা বলার অসামান্য ক্ষমতা, এলোমেলো চুল, ব্যক্তিগত জীবন – এসবের বিবেচনায় তিনি অন্য দশজন রাজনীতিকের থেকে আলাদা।

এছাড়া, বিয়ে না করেই বসবাস করছেন তার থেকে প্রায় ২৫ বছরের বয়সে ছোট এক বান্ধবীর সঙ্গে। বরিস জনসন এবং ক্যারি সিমন্ডস হবেন ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের প্রথম অবিবাহিত দম্পতি।

২০০৮ সাল থেকে দু দফায় লন্ডনের মেয়র হিসাবে দায়িত্ব পালনের পর ২০১৫ সালে বরিস জনসন যখন আবার টোরি পার্টির টিকেটে সংসদ নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেছিলেন, ‘আমি মাঠে আমার তারকা খেলোয়াড়দের চাই।’

অবশ্য পরে ব্রেক্সিট গণভোটের সময় বরিস জনসনই ডেভিড ক্যামেরনের পিঠে ছুরি মারেন। নেতার বিরুদ্ধে গিয়ে ব্রেক্সিটের পক্ষে প্রচারণা শুরু করেন। ব্রেক্সিট শিবিরের নেতা হয়ে পড়েন।