শুক্র. এপ্রি ১৯, ২০২৪
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলাবাজার ২৪, শুক্রবার,২আগস্ট,২০১৯ঃশিশুদের পিঠব্যথা সমস্যা ঠিক বড়দের মতো নয়। বড়দের সাথে তুলনা করলে দেখা যায় শিশুদের পিঠব্যথার সাথে কিছু মারাত্মক সমস্যার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। লিখেছেন ডা: মিজানুর রহমান কল্লোল
পিঠব্যথা শিশুর জন্য এক অসহনীয় অবস্থা। এটা বিশেষভাবে সত্যি, যদি আপনার শিশুর বয়স চার বছর বা তার বেশি হয় অথবা আপনার যেকোনো বয়সী শিশুর পিঠব্যথার সাথে নিচের উপসর্গগুলো থাকে :

ষ জ্বর হওয়া কিংবা ওজন কমে যাওয়া
ষ দুর্বলতা কিংবা অসাড় অনুভূতি
ষ হাঁটতে সমস্যা
ষ ব্যথা একপায়ে বা দু’পায়ে ছড়িয়ে পড়া
ষ পায়খানা বা প্রস্রাব করতে সমস্যা হওয়া
ষ ব্যথার জন্য ঘুমাতে সমস্যা হওয়া
শিশুদের পিঠব্যথার কারণ দ্রুত চিহ্নিত করা উচিত এবং তার দ্রুত চিকিৎসা করা উচিত। না হলে তা আরো খারাপ হতে পারে। যদি আপনার শিশুর পিঠব্যথা বেশ কিছু দিন একটানা থাকে কিংবা ব্যথা দিন দিন বাড়তে থাকে, তাহলে অবশ্যই আপনার শিশুকে একজন অর্থোপেডিক ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবেন।

শিশুর পিঠব্যথার সাধারণ কারণগুলো
মাংসপেশির টান ও ভারসাম্যহীনতা
ছোট ও বড় শিশুদের পিঠব্যথার সবচেয়ে বড় কারণ হলো পিঠের মাংসপেশির টান। এ ধরনের ব্যথার জন্য বিশ্রাম, ব্যথানাশক ওষুধ ও ব্যায়ামের প্রয়োজন হয়।
অনেক টিনএজ ছেলেমেয়ের পিঠব্যথা দীর্ঘদিন ধরে থাকে। ঊরুর মাংসপেশি শক্ত হয়ে পড়লে এমনটি হয়। এসব ক্ষেত্রে ফিজিক্যাল থেরাপিতে ভালো কাজ হয়।

পিঠ বেঁকে যাওয়া
বয়ঃসন্ধিকালের ছেলেমেয়েদের পিঠব্যথার একটি সাধারণ কারণ হলো পিঠের মাঝখানে বেঁকে যাওয়া। মেরুদণ্ডের কশেরুকা ধীরে ধীরে বাঁকা হতে থাকলে পিঠ গোলাকার হয় অথবা কুঁজো হয়ে যায়। পিঠের বাঁকা অংশ তখন ব্যথা করে। কাজ করার সাথে সাথে এ ব্যথা বেড়ে যায়।

মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে যাওয়া
বিশেষ করে কিশোরদের এ সমস্যা হয়ে থাকে। যারা ব্যায়াম কিংবা ড্রাইভিং করে কিংবা ফুটবল খেলে, তাদের মেরুদণ্ড বরাবর এদিক-ওদিক মোচড়ানোতে কিংবা মেরুদণ্ড পেছন দিকে নেয়াতে ছোট ছোট হাড় ভেঙে যেতে পারে।
ব্যথা সাধারণত অল্প হয় এবং এ ব্যথা নিতম্ব ও পায়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে। হাঁটাচলা করলে ব্যথা বেড়ে যায়, বিশ্রাম নিলে কমে যায়। রোগী ছোট ছোট পা ফেলে হাঁটে।

কশেরুকা সরে যাওয়া
যদি নিচের কশেরুকা ঠিক ওপরের কশেরুকা সামনের দিকে সরে যায়, তাহলে পিঠব্যথা করে। এটি সাধারণত মেরুদণ্ডের গোড়ার দিকে হয় (লাম্বো-স্যাকরাল জোড়ায়)। মারাত্মক ক্ষেত্রে হাড় স্পাইনাল ক্যানেলকে সরু করে দেয়, যার ফলে নার্ভের ওপর চাপ পড়ে।
সংক্রমণ
অল্প বয়সী শিশুদের ডিস্ক স্পেসে ইনফেকশন হলে পিঠব্যথা হয়। এ অবস্থাকে বলে ডিসকাইটিস। সাধারণত ১ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের এটি বেশি হয়। ডিস্কে ইনফেকশন হলে নিচের উপসর্গগুলো দেখা দিতে পারে :
ষ পিঠের নিচের দিকে কিংবা পেটে ব্যথা করে এবং পিঠ শক্ত হয়ে যায়।
ষ খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটে কিংবা রোগী হাঁটতে চায় না।
ষ মেঝেতে বসার সময় হাত-পা ছড়িয়ে বসে থাকে। সে কোমর বাঁকা করে বসতে চায় না।

টিউমার
কিছু কিছু ক্ষেত্রে টিউমারের কারণে পিঠব্যথা হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে অস্টয়েড অস্টিওমা নামক টিউমারের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। মেরুদণ্ডের টিউমারগুলো সাধারণত পিঠের মাঝখানে বা পিঠের নিচের অংশে দেখা দেয়। ব্যথা সারাক্ষণই থাকে, কোনো কোনো সময় ব্যথা বেড়ে যায়। ব্যথা বেড়ে যাওয়ার সাথে কাজ করার কোনো সম্পর্ক নেই। এ ব্যথা রাতে বাড়তে থাকে।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা
শিশুর পিঠব্যথার কারণ খুঁজে বের করতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। অর্থোপেডিক ডাক্তার আপনার শিশুর সার্বিক স্বাস্থ্য নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন করতে পারেন, সেগুলোর সঠিক উত্তর প্রদান করতে হবে। চিকিৎসক আপনার শিশুর পিঠ পরীক্ষা করে দেখবেন, তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করতে হবে।

ল্যাবরেটরি পরীক্ষা
ষ ইনফেকশন আছে কিনা তা দেখার জন্য রক্তের (সিবিসি), ইএসআর, সি-রিঅ্যাকটিভ প্রোটিন (সিআরপি)
ষ অনেক সময় রিউমাটয়েড স্ক্রিন বা ঐখঅই২৭ পরীক্ষার প্রয়োজন হয়।
রেডিওলজি পরীক্ষা
ষ প্লেইন এক্স-রে- মেরুদণ্ডের হাড় সরে গেছে কিনা, হাড় ভেঙেছে কিনা, ক্ষয় হয়েছে কিনা ইত্যাদি দেখার জন্য এবং মেরুদণ্ডের সার্বিক আকৃতি বোঝার জন্য পিঠের এক্স-রে করাতে হবে।
ষ এমআরআই স্ক্র্যান- ডিসাইটিস, ডিস্কের ক্ষয়, ডিস্ক প্রোলাপ্স এবং স্পাইনাল কর্ডে বা নার্ভরুটে কোনো সমস্যা আছে কিনা তা দেখার জন্য এমআরআই পরীক্ষা করাতে হবে।

চিকিৎসা
ষ ব্যথা অনেক সময় বিশ্রাম নিলে চলে যায়। যদি ব্যথা না যায় তাহলে ব্যথানাশক ওষুধ প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রফেন দেয়া যেতে পারে। কখনো কখনো ফিজিক্যাল থেরাপির প্রয়োজন হয়।
ষ ক্ষেত্র বিশেষে অপারেশনের প্রয়োজন হয়।