শনি. এপ্রি ২০, ২০২৪
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলাবাজার ২৪,রবিবার,০৪ আগস্ট ,২০১৯ঃ কোরবানিতে যত পশুর চাহিদা হওয়ার কথা, এই মুহূর্তে তার চেয়ে বেশি পশু রয়েছে বলে হিসাব কষেছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ। আবার অবৈধ হলেও নানা কৌশলে ভারত থেকে পশু আমদানিও বন্ধ নেই। ফলে কোরবানিতে পশুর সংকট হওয়ার আশঙ্কা নেই। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাবে গত বছর এক কোটি ১৫ লাখ পশু জবাই হয়েছে। এবার গতবারের তুলনায় পাঁচ শতাংশ চাহিদা বেশি ধরা হচ্ছে। তাতে এক কোটি এগার লাখ থেকে এক কোটি সাড়ে এগারো লাখের চাহিদা হবে। কিন্তু আমাদের দেশে বর্তমানে তার চেয়ে অনেক বেশি গবাদি পশু আছে ।

কোরবানিতে যত পশুর চাহিদা হওয়ার কথা, এই মুহূর্তে তার চেয়ে বেশি পশু রয়েছে বলে হিসাব কষেছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ। আবার অবৈধ হলেও নানা কৌশলে ভারত থেকে পশু আমদানিও বন্ধ নেই। ফলে কোরবানিতে পশুর সংকট হওয়ার আশঙ্কা নেই বলেই মনে করছেন কর্মকর্তারা। ভারতে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশে গরু আসা বন্ধে তারা তৎপর হয়। এতে সাময়িক সংকটে পড়লেও আখেরে লাভ হয়েছে বাংলাদেশের। গড়ে উঠেছে বাণিজ্যিক খামার। আর পশু পালন বাড়ায় স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে গেছে দেশ।
গত কয়েক বছর ধরেই নিজেদের পশু দিয়েই কোরবানির শতভাগ চাহিদা পূরণ হচ্ছে। দেশের খামারি ও ব্যক্তি পর্যায় থেকে এসব পশুর জোগান আসছে। এ ছাড়া পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, মিয়ানমার, নেপাল থেকেও চোরাচালানের মাধ্যমে প্রতি বছরই গবাদি পশু এসে থাকে। এবার সে রকম হলে জোগান আরও বেশি হবে। ফলে এবার দাম কম বা সহনীয় পর্যায়ে থাকবে ধারণা করা হচ্ছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (খামার) এবিএম খালেদুজ্জামান বলেন, ‘গত বছর এক কোটি ১৫ লাখ পশু জবাই হয়েছে। আমাদের ছিল এক কোটি ১৫ লাখ কোরবানিযোগ্য পশু। এবার আমরা গতবারের তুলনায় পাঁচ শতাংশ চাহিদা বেশি ধরেছি। তাতে এক কোটি ১১ লাখ থেকে এক কোটি সাড়ে এগারো লাখ হবে। কিন্তু আমাদের আছে তার চেয়ে বেশি।’ বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে এক কোটি ১৭ লাখ ৮৮ হাজার ৫৬৩টি গবাদি পশু।
গত বছর কোরবানি দেয়া হয়েছিল এক কোটি পাঁচ লাখ ৬৯ হাজার ৭০টি পশু। তবে প্রতি বছরই কোরবানির সংখ্যা বাড়ে। গতবারের চেয়ে ১০ লাখ বেশি কোরবানি হলেও এবার পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাবে বলেই মনে করছেন কর্মকর্তারা। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে দেশে বর্তমানে খামারির সংখ্যা পাঁচ লাখ ৭৭ হাজার ৪১৬টি। আর বর্তমানে দেশে যত পশু আছে, তার কোনগুলো কি অবস্থায় আছে, তারও একটি হিসাব আছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, এই মুহূর্তে স্বাস্থ্যবান গরু আছে ২৭ লাখ ৩৩ হাজার ৬৫৬টি। মহিষ আছে ৮৮ হাজার ৪৪৮টি। আর কিছুটা বয়স্ক এবং অনুৎপাদনশীল গরু ও মহিষ আছে ১৬ লাখ ৯৬ হাজার ৮৫৬টি। এগুলো প্রধানত জবাই করে খাওয়ার কাজেই ব্যবহার করা হয়। স্বাস্থ্যবান ছাগল আছে ১৭ লাখ ৫৩ হাজার ৬৭২, ভেড়া দুই লাখ ৫৬ হাজার ৩৮টি।
বিদেশ থেকে আনা দুম্বা বা এই ধরনের প্রাণী আছে আরও ছয় হাজার ৫৬৩। এগুলোও প্রধানত মানুষের খাবার হিসেবেই ব্যবহৃত হয়। কোবরানির পশুর দিক থেকে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রাজশাহী বিভাগ। সেখানে আছে ১০ লাখের বেশি পশু। আর চার জেলা নিয়ে গঠিত বিভাগ সিলেট কোরবানির পশুর সংখ্যার দিক থেকে সবচেয়ে পিছিয়ে। সব মিলিয়ে সেখানে ছয় হাজারের কিছু বেশি পশু আছে। চাহিদার চেয়ে পশুর মজুদ বেশি হওয়ায় ভারত থেকে গরু আসা বন্ধে তৎপর হওয়ারও নির্দেশ নিয়েছে সরকার। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (খামার) এ বি এম খালেদুজ্জামান বলেন, ‘সরকার ঈদুল আজহা পর্যন্ত ভারত থেকে সব ধরনের গরু আমদানি নিষিদ্ধ করেছে। এ ব্যপারে বিজিবিকে পদক্ষেপ নিতে বলেছে সরকার।’ ‘বাংলাদেশে খামারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
আমরা আত্মবিশ্বাস পাচ্ছি যে, গবাদি পশুর চাহিদায় আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। ফলে ভারত থেকে গরু আসা কমে আসছে। আমরা আশা করছি, অচিরেই ভারত থেকে গরু আসার সংখ্যা শূন্যের কোঠায় আসবে।’ ২০১৩ সালে ভারত থেকে অবৈধ পথে ২০ থেকে ২৫ লাখ গরু আসত। এখন এই সংখ্যাটি কমে ৯২ হাজারে নেমেছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. হীরেশ রঞ্জন ভৌমিক জানান, গত ৩ বছর ভারত থেকে গরু আমদানি কম হচ্ছে। এ ৩ বছর দেশীয় উৎস থেকেই কোরবানির পশু ও দৈনন্দিন মাংসের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে। এ ছাড়াও বাজারে দেশি গরুর চাহিদাও অনেক বেড়েছে। এবারের কোরবানির ঈদ ঘিরে দেশীয় গরু-ছাগল উৎপাদনে ছোট-বড় প্রকল্পের মাধ্যমে অনেক খামারি কাজ করেছেন। এ ছাড়া ব্যক্তি উদ্যোগে আরও অনেক ছোট-বড় খামার গড়ে উঠেছে। এগুলো থেকে কোরবানির পশুর জোগান আসবে। আশা করছি, এবারের কোরবানির ঈদ ঘিরে দেশে গবাদি পশুর কোনো ধরনের সংকট হবে না।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্র আরও জানায়, দেশে এখন ৫ লাখ ৭৭ হাজার ৪১৬টি বড় খামার রয়েছে। এর বাইরে ছোট ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খামারও রয়েছে। এ ছাড়া ব্যক্তি পর্যায়েও গবাদি পশু পালনের সংখ্যাও বাড়ছে। বিশেষ করে চর ও উপকূলীয় এলাকায় গরু, ছাগল ও মহিষ পালনের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। তাদের অনেকে কোরবানির ঈদ সামনে রেখে গবাদিপশু লালন-পালন করেন। সব মিলে দেশে গবাদি পশুর সংখ্যা বেড়েছে। এর একটি বড় অংশই কোরবানির ঈদে বাজারে আসে। রাজধানীর গাবতলী পশুর হাটের ব্যবসায়ী মোবারক আলী বলেন, দেশের খামারগুলোতে বর্তমানে পর্যাপ্ত গরু, ছাগল ও মহিষ রয়েছে। চাহিদার তুলনায় সেটা যথেষ্ট
। এ জন্য মনে হচ্ছে এ বছর কোরবানির পশুর দাম তুলনামূলকভাবে কম থাকবে। তিনি আরও বলেন, ‘প্রতি বছর ঈদ ঘিরে ভারত থেকে নানাভাবে গরু আসে। এতে করে দাম কমে যায়। এমনিতেই এবার ধারণা করা হচ্ছে পশুর দাম কম হবে, এর মধ্যে পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে পশু এলে দেশীয় ব্যবসায়ীদের লোকসানের মুখে পড়তে হবে। এবার যাতে তেমনটি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’ বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম জানান, এবারের কোরবানিতে পশুর চাহিদা যতই হোক না কেন, তাতে সংকট তৈরি করবে না
। কেননা, দেশের খামারগুলোতে পর্যাপ্ত পশু রয়েছে। তিনি বলেন, সরকারের বিশেষ উদ্যোগে গবাদিপশুর উৎপাদন বেড়েছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বড় বড় খামার বেড়ে উঠেছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘কোরবানির পশু নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই, ১০ লাখ পশু অতিরিক্ত আছে।
‘ ২০১৪ সালে ভারতের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের (বর্তমানে প্রতিরক্ষামন্ত্রী) ‘গোরক্ষা নীতি’র ধারাবাহিকতায় দেশটি থেকে গরু আমদানিতে ভাটা পড়ে। এর পর গরু-ছাগল পালনে স্বয়সম্পূর্ণতার ওপর জোর দেয় সরকার। স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদন বাড়ায় বর্তমানে আমদানি নির্ভরতা কাটিয়ে ওঠে বাংলাদেশ।