শুক্র. মার্চ ২৯, ২০২৪
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

তাতে কী হয়েছে? মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে গেছে? সন্দেহ নেই বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আসর । একদিনের মানে ৫০ ওভারের ফরম্যাটে বিশ্বসেরা নির্ধারণের আসর। চার বছর পরপর এ আসর আসলেই বিশেষ সাড়া ও নাড়া পড়ে ক্রিকেট বিশ্বে। যারা সারা বছর ক্রিকেটের তেমন খোঁজ খবর রাখেন না, তারাও উৎসাহী হয়ে ওঠেন।

মোদ্দা কথা, অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে বিশ্বকাপে দর্শক, ভক্ত, সমর্থক আর অনুরাগীর উৎসুক দৃষ্টি ও কৌতূহল বেশিই থাকে।

তারপরও একজন ক্রিকেটারের জীবনে বিশ্বকাপই শেষ কথা নয়। বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফির বিশাল ক্যারিয়ারকেও শুধু এবারের বিশ্বকাপ দিয়ে বিচার করলে চলবে না। তার ১৮ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার অনেক দীর্ঘ। যার পরতে পরতে লড়াই-সংগ্রাম। মাশরাফি মানেই ইনজুরি, অপারেশন টেবিল আর অস্ত্রোপচারের সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকা। ছোট বড় মিলিয়ে সাত-আটবার অপারেশনের ধকল সামলেও মাঠে থাকা।

এ মুহূর্তে তার পরিচয় দুটি। প্রথমত, তিনি বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক। দ্বিতীয়ত, মাশরাফি বাংলাদেশের পেস বোলিংয়ের চালিকাশক্তি। সবচেয়ে সফল পেসার। সবচেয়ে বড় কথা ৫০ ওভারের ফরম্যাটে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি উইকেট শিকারিও।

অধিনায়ক হিসেবেও তার সাফল্য আকাশছোঁয়া। ইতিহাস-পরিসংখ্যান পরিষ্কার জানান দিচ্ছে মাশরাফিই বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সফলতম অধিনায়ক। তার নেতৃত্বেই ঘরের মাঠে ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের মত চার চারটি বিশ্ব শক্তির বিপক্ষে সিরিজ জিতেছে টিম বাংলাদেশ।

শুধু সাফল্যের মানদন্ডে বিচারই শেষ কথা নয়। মাশরাফি মানেই সম্প্রীতি, ঐক্য ও পারষ্পরিক ভালবাসার প্রতীক। তার উপস্থিতি, প্রাণখোলা আচরণ আর উদ্দীপক কথাবার্তা টিম বাংলাদেশের বড় রসদ। তার হাত ধরেই সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, সৌম্য, লিটন, সাব্বির, মিঠুন, মোস্তাফিজ, মিরাজ, মোস্তাফিজ ও রুবেলরা এক সুঁতোয় গাঁথা।

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ থেকে শুরু করে সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার পর্যন্ত সবার সমান প্রিয় মানুষ ও অধিনায়ক মাশরাফি ভাই। আর সহযোগি ক্রিকেটারদের কাছে মাশরাফি ভাই মানেই সবচেয়ে বড় নির্ভরতা। মোদ্দা কথা মাশরাফিই টাইগারদের ভাল খেলার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। তার দল পরিচালনাই বড় রসদ।

খুব স্বাভাবিকভাবেই এ সফল যোদ্ধা ও সফল সেনাপতির বিদায়টা হওয়া উচিৎ স্মরণীয় এবং বীরোচিত সংবর্ধনায়। তার অবসরের ঘোষণা ও দিনক্ষণ নিয়ে নানা কথা। রাজ্যের জল্পনা-কল্পনা। কবে কোথায় কার সাথে কিভাবে মাশরাফি বিদায়ের ঘোষণা দেবেন? তা নিয়েও রাজ্যের জল্পনা-কল্পনা।

তবে আশার খবর এই যে, বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপন বিশ্বকাপ শেষে লন্ডনে বসেই জানিয়ে দিয়েছেন, মাশরাফির বিদায়টা হবে স্মরণীয়। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে সে সফলতম ও এক নম্বর অধিনায়ক। তাই তার আনুষ্ঠানিক বিদায়ের দিনটিকে রঙিন করে রাখতে যা যা করণীয় তা করবে বোর্ড।

বিসিবি বিগ বস আরও জানিয়েছেন, মাশরাফির আনুষ্ঠানিক বিদায়ী ম্যাচ হবে দেশের মাটিতে। যাতে করে নিজ দেশ, জাতি, চেনা জানা পরিবেশ আর ভক্ত, সমর্থক, সুহ্রদ, শুভানুধ্যায়ী সবার সামনেই আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় জানাতে পারেন তিনি।

তার মানে ধরেই নেয়া যায় অধিনায়ক মাশরাফির বিদায় হবে বীরের মত। একটা জাকজমকপূর্ণ আয়োজন ও উৎসব মুখর পরিবেশে।

কিন্তু বোর্ড প্রধানের কন্ঠে অমন আশ্বস্ত হবার মত খবর শোনার পরও কারো কারো মনে আছে সংশয়-সন্দেহ। অনেকের মুখেই প্রশ্ন, অদূর ভবিষ্যতে দেশের মাটিতে টাইগারদের কোন ওয়ানডে নেই। তাহলে মাশরাফি কবে শেষ ম্যাচ খেলবেন? আর সেটা কি আদৌ এ বছর মানে ২০১৯ সালে হবে?

এ প্রশ্নের ইতিবাচক উত্তর জানতে যে সব অগণিত মাশরাফি ও বাংলাদেশ ভক্ত উন্মুখ, তাদের জন্য আছে সুখবর। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ বা অক্টোবরের প্রথম ভাগে দেশের মাটিতেই শেষ ওয়ানডে খেলবেন মাশরাফি। নিজের অভিষেক ম্যাচের মতো জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই শেষ ম্যাচ বা সিরিজ খেলতে যাচ্ছেন বাংলাদেশ ওয়ানডে অধিনায়ক।

আর সে কারণেই জিম্বাবুয়েকে ঢাকায় আনতে বদ্ধ পরিকর বিসিবি। গতকালও বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বেশ আস্থা ও দৃঢ়তার সাথে জানিয়েছেন জিম্বাবুয়ে আসবে। আইসিসির নিষেধাজ্ঞা তাদের বাংলাদেশের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে খেলতে আসায় কোন বাধা হবে না।

এখন প্রশ্ন উঠেছে, কবে আসবে জিম্বাবুয়ে? তা নিয়ে কোন বোর্ড শীর্ষকর্তা আনুষ্ঠানিকভাবে মুখ না খুললেও বিসিবির দায়িত্বশীল সূত্রের খবর, আগামী সেপ্টেম্বর মাসের শেষ ভাগে না হয় অক্টোবরের একদম প্রথম অংশেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ বা সিরিজটি খেলবেন মাশরাফি।

সবার জানা একটি টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলার জন্য আফগানিস্তান আসছে বাংলাদেশে। তার দিনক্ষণ সফরসূচি চুড়ান্ত না হলেও, একটা সম্ভাব্য সফরসূচি তৈরি হয়েছে। তা হলো, চলতি আগস্ট মাসের ৩১ তারিখ থেকে সেপ্টেম্বরের ১০ তারিখের মধ্যে এক টেস্ট খেলতে বাংলাদেশে আসবে আফগানরা।

তারপর বাংলাদেশ, আফগানিস্তান আর জিম্বাবুয়েকে নিয়ে একটি তিন জাতি টি-টোয়েন্টি সিরিজও অনুষ্ঠিত হবে। সেই ত্রিদেশীয় সিরিজের সম্ভাব্য সময় ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর। আর ঠিক এরপরই জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ২ বা ৩ ম্যাচের একটি ওয়ানডে সিরিজ আয়েজনের চিন্তা ভাবনা চলেছে এবং ইতোমধ্যেই বিসিবির পক্ষ থেকে জিম্বাবুয়েকে সে ওয়ানডে সিরিজ খেলার প্রস্তাবও দেয়া হয়েছে।

শুধু তাই নয়, ঐ বাড়তি তিন বা দুই ওয়ানডে ম্যাচ খেলার জন্য বিসিবি জিম্বাবুয়েকে কোটি টাকার অফারও করেছে। এখন আইসিসির আইনগত জটিলতা না থাকলে জিম্বাবুয়ে হয়ত ৭ থেকে ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ঢাকা চলে আসবে।

তারপর প্রথমে বাংলাদেশ আর আফগানিস্তানের সাথে তিন জাতি টি-টোয়েন্টি সিরিজে অংশ নিবে। তা শেষ করে আফগানরা চলে গেলেও জিম্বাবুয়ে থেকে যাবে। মাশরাফির নেতৃত্বে বাংলাদেশের সঙ্গে ওয়ানডে সিরিজ খেলে তারপর যাবে জিম্বাবুয়ানরা। আর সেটাই হবে দেশের মাটি তথা মাশরাফির বিদায়ী সিরিজ।