এ জেলার হাওরাঞ্চলের মধ্যে নিকলী বেড়িবাঁধ, ছাতিরচর, করিমগঞ্জের বালিখলা, মরিচখালী, চামটাবন্দর, তাড়াইলের হিজলজানী, ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উল্লেখযোগ্য।
এসব এলাকার অপরূপ সৌন্দর্যে মন ভেজাতে ভ্রমণপ্রিয় মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে বেড়াতে যান। কিশোরগঞ্জসহ আশপাশের জেলা থেকে ইতোমধ্যে লক্ষাধিক পর্যটকের সমাগম হয়েছে।
হাওরের পানিতে পানকৌড়ির ডুব-সাঁতার খেলা, মাছরাঙার নাওন-ভোজন। ঢেউ ফুঁড়ে নৌকা নিয়ে হাওড়ের বুকে ভেসে বেড়ানো, জেলেদের মাছ ধরা আর টলটলে পানিতে সূর্য রশ্মির চোখ ধাঁধানো আলোর বৈচিত্র হাওর প্রেমীদের সেখানে টেনে আনে। তাছাড়া চাঁদনী রাতে ফুরফুরে বাতাসে হাওরের বুকে নৌ বিহার পর্যটকদের একটি বড় আকর্ষণ।
কিন্তু হাওরের সৌন্দর্য মন ভরে উপভোগ করতে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে অপ্রশস্ত রাস্তা ও অতিরিক্ত ভাড়া। জেলা শহর থেকে হাওরে প্রতিটি পয়েন্টের যাত্রাপথই খুব অপ্রশস্ত। এতে যানজটে পড়তে হচ্ছে পর্যটকদের। এক ঘন্টার পথ অনেক সময় পাঁচ থেকে ছয় ঘন্টায় পাড়ি দিতে হচ্ছে।
এর সাথে যুক্ত হয়েছে অতিরিক্ত যাত্রী ভাড়া। বছরের অন্য সময়ের চেয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। তাই অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে বেড়াতে বের হয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
হাওরের বুকে নৌকা নিয়ে ঘন্টা চুক্তিতে ঘুরে বেড়ানোর সুবিধা রয়েছে। অন্য সময়ের চেয়ে এখানেও বাড়তি ভাড়া আদায় করছে নৌকা মালিকেরা। এসব কারণে অনেকেই পাড়ে বসে হাওরের মুক্ত বাতাস গায়ে লাগিয়ে ফিরে যাচ্ছেন। এতে বিনোদন পিয়াসীদের আনন্দে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে।
অন্য জেলা থেকে হাওরাঞ্চলে বোনের বাড়িতে বেড়াতে এসেছেন একজন। তিনি বলেন, কিশোরগঞ্জের হাওরের অনেক গল্প শুনেছি, বিভিন্ন জায়গায় হাওরের ছবিও দেখেছি তাই হাওরে ঘুরতে আসা। তবে কিছু অসাধু লোক মানুষকে জিম্মি করে বেশি টাকা আদায় করছে। যা মোটেও শোভনীয় নয়। হাওরপ্রিয় দর্শনার্থীদের স্বার্থে প্রশাসনের এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
হাওরের সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। এখানে এলে যতই মন খারাপ থাকুক না কেনো, মন ভাল হতে বাধ্য। তবে এখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো না থাকায় সন্ধ্যার পর বা রাতে অনেকেই ছিনতাইকারীর কবলে পড়ছেন। হাওর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পর্যটকদের নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবি করছি। যাতে সবাই নির্বিঘ্নে আনন্দ উপভোগ করতে পারেন।
এত প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও হাওরাঞ্চলে সৌন্দর্যপিয়াসী মানুষের ঢল থেমে নেই। উপযুক্ত ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা দিতে পারলে কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চল দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারে বলে মনে করেন দর্শনার্থীরা।