শুক্র. এপ্রি ১৯, ২০২৪
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements
খােলাবাজার ২৪,রবিবার,০৬অক্টোবর,২০১৯ঃ হাওড়ের মাঝখানে দ্বীপ। আর সে দ্বীপে জনসমুদ্র। দুর্গম অঞ্চল হওয়া সত্ত্বেও প্রায় লক্ষাধিক দর্শকের সমাগম। হাওড় অঞ্চলের জীবন-জীবিকা, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তুলে ধরে জলে ও ডাঙ্গায় শতাধিক নৌকা রেখে নির্মাণ করা হয়েছিল নান্দনিক মঞ্চ। আর এ মঞ্চেই ধারণ করা হয়েছিল বহুল প্রশংসিত ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’র এবারের পর্ব। এ ধারণ কার্যটি করা হয়েছে কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার হাওড়ের মাঝখানে দ্বীপের মতো ভেসে থাকা নৈসর্গিক স্থান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ পল্লীতে। চারিদিকে অথৈ পানি ঘেরা দ্বীপের মধ্যে ট্রলারে করে ভেকু, ট্রাক নিয়ে কাটা হয়েছিল পুরো পল্লীজুড়ে বিস্তীর্ণ ছনের বন। অনুষ্ঠানের শুরুতে ক্ষণিকের কিছু চিত্র দেখে সেই মহা কর্মযজ্ঞের বিষয়টি হয়তো উপলব্ধি করতে পেরেছেন দর্শকরা।
অনুষ্ঠানের বিভিন্ন অংশে কিশোরগঞ্জের বিচিত্র রূপ, সৌন্দর্য দেখা গেছে। যাতে মনে হয়েছে এবারের ‘ইত্যাদি’ যেন প্রকৃতি প্রেমের এক মায়াবী কাব্য। এমন কিছু মানুষকে এবারের অনুষ্ঠানে তুলে ধরা হয়েছে যাদের কর্মে, তারা মানুষের মর্মে ঠাঁই করে নিয়েছেন। আর হাওড়ের নান্দনিক সৌন্দর্য আগে কখনোই এমনিভাবে টিভি পর্দায় দেখানো হয়নি। পাশাপাশি কিশোরগঞ্জ জেলা, চন্দ্রাবতীর মন্দির ও বাড়ি, সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক ভিটা, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, বর্তমান রাষ্ট্রপতির বাড়ি, শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান, দিল্লির আখড়া, এগারসিন্দুর দুর্গ, জঙ্গলবাড়ী দূর্গ, দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ পয়েন্ট, কেপ অব গুড হোপ, বাতিঘর ও পেঙ্গুইন নিয়ে করা প্রতিবেদন-সবক’টিতেই ছিল মেধা, নিষ্ঠা, পরিশ্রম, আন্তরিকতা এবং সুনিপুণ নির্মাণশৈলী। বিভিন্ন অসংগতি তুলে ধরে সমাজকে পরিশুদ্ধ করতে ‘ইত্যাদি’ যেমন নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে, তেমনি আমাদের নাগরিক সচেতনতা, কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে ধরে রাখতেও ভূমিকা রাখছে আন্তরিকতার সঙ্গে। এই পর্বেও ছিল টনক নড়ানো তেমন কিছু সমসাময়িক বিষয়। ‘ইত্যাদি’র এবারের আয়োজনে উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল প্রথমবারের মতো টেলিভিশন অনুষ্ঠানে কোনো রাষ্ট্রপতির সাক্ষাৎকার প্রদান। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের অত্যন্ত স্বল্প সময়ের ব্যতিক্রমধর্মী এই সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি তার জীবনের নানা অজানা দিক। ক্ষমতার শীর্ষে গিয়েও যার ব্যক্তিত্ব এবং এলাকার মানুষের সঙ্গে সম্পর্কের কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। পক্ষ-বিপক্ষ সবাই যাকে এক দৃষ্টিতে দেখেন। সবার কাছেই রয়েছে যার সমান গ্রহণযোগ্যতা। কলেজ জীবন থেকেই যিনি এলাকার শিক্ষা এবং হাওড় অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য কাজ কওে গেছেন। হাওড় অঞ্চলে নিয়েছেন বিদ্যুৎ, তৈরি করেছেন ডুবো রাস্তা-যাকে বলা হয় ‘টু ওয়েদার রোড’। গড়ে তুলেছেন শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সেসব প্রতিষ্ঠানের তিনি নিয়মিত
খোঁজ-খবর নেন। নিজ হাতে তৈরি এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতি রয়েছে তার আলাদা মমত্ববোধ। ইত্যাদি’র এবারের আয়োজনে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর থানার একটি গ্রামের অবিশ্বাস্য অবস্থানে অবস্থিত স্কুলটির উপর পরিবেশিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটি ছিল খুব হৃদয়ছোঁয়া। স্কুলটির উন্নয়ন সহায়তায় ইত্যাদির মাধ্যমে ১০ লাখ টাকার চেক প্রদানের বিষয়টিও ভালো লেগেছে। এছাড়া অনুষ্ঠানে গাওয়া কুমার বিশ্বজিতের গান, শামীম আরা নীপার নাচ, ইলিয়াস কাঞ্চনের অংশগ্রহণে দর্শক পর্ব এবং নানি-নাতি ও মামা-ভাগ্নে পর্বগুলিও ছিল বেশ আকর্ষণীয়। বরাবরের মতো এবারের ‘ইত্যাদি’ও বিষয় বৈচিত্র্য, স্থান নির্বাচন সবদিক থেকেই হয়েছে ব্যতিক্রমী ও উপভোগ্য। এ কারণে অনুষ্ঠানটির নির্মাতা হানিফ সংকেত ব্যাপক ধন্যবাদের দাবিদার। সে সঙ্গে এমন একটি চমৎকার অনুষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে স্পন্সর করে যাওয়ার জন্য এর পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান কেয়া কসমেটিকস্‌ লিমিটেডকে অভিনন্দন।