শুক্র. মার্চ ২৯, ২০২৪
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলাবাজার ২৪,বৃহস্পতিবার,৩১অক্টোবর,২০১৯ঃমেহেদী হাসান,জবিঃ মিড পরীক্ষায় নম্বর জালিয়াতির অভিযোগ এবার রাজধানীর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষকের বিরুদ্ধে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ৩০তম একাডেমিক কমিটির সভায় বিভাগের শিক্ষক ও অধ্যাপক ড.মিল্টন বিশ্বাসের বিরুদ্ধে বিভাগের অন্য সকল শিক্ষকরা এ অভিযোগ তোলেন। এছাড়া এ শিক্ষকের বিরুদ্ধে সহকর্মীর কাছে অশালীন ভাষায় উড়োচিঠি,সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাজে মন্তব্য শেয়ারসহ,একাডেমিক কাজে অবহেলাসহ নানান অভিযোগ তোলেন শিক্ষকরা। এ ঘটনায় বাংলা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবার তাদের মিডটার্ম পরীক্ষা বর্জন করে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে। মিছিলটি ক্যাম্পাসের রফিক ভবন থেকে শুরু করে করে বিজ্ঞান ভবন,প্রশাসনিক ভবন,সামাজিক ভবন হয়ে রফিক ভবনে এসে শেষ হয়। এসময় শিক্ষার্থীরা অধ্যাপক মিল্টন বিশ্বাসের পরীক্ষা খাতার মূল্যায়নে অনৈতিকার আশ্রয় নেয়ার দায়ে তাকে বহিষ্কারসহ চার দফা দাবি জানায়।
শিক্ষার্থীদের দাবি গুলা হল: মাস্টার্স ১ম সেমিষ্টারের ৫১০১ কোর্সটির মিডটার্ম সহ ফাইনাল পরীক্ষার খাতা তৃতীয় পরীক্ষক দ্বারা মূল্যায়ন করতে হবে। মির্ডটার্মের খাতা মূল্যায়ণের পর আজ বৃহস্পতিবার দুপুর তিনটার মধ্যে নোটিশ বোর্ডে টানাতে হবে। মিল্টন বিশ্বাসকে বিভাগ থেকে বহিষ্কার করতে হবে। ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের অধ্যাপক মিল্টন বিশ্বাসের পর্বের সকল কোর্সের খাতাগুলো পূর্ণমূল্যায়ন করতে হবে।
এদিকে অধ্যাপক ড.মিল্টন বিশ্বাস তার নামে আনীত অভিযোগ সত্য নয় দাবি করে পরিকল্পিতভাবে একাডেমিক কমিটি আলোচ্য বিষয় ছাড়াই তার নামে অভিযোগ আনা হয় দাবি কলে বিভাগের চেয়ারম্যান ড.আরজুমন্দ আরা বেগম,অধ্যাপক ড.চঞ্চল কুমার বোস,অধ্যাপক ড. হোসনে আর জলির নামে পৃথক দুইটি আইনী নোটিশ পাঠান।
জানা যায়, গত ১ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ৩০ তম একাডেমিক কমিটির সভা হয়। সভায় বিশ^বিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের মাষ্টার্সের ১ম সেমিষ্টারের বাংলা কবিতা (কোর্স নং-৫১০১) শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ড. মিল্টন বিশ্বাসের বিরুদ্ধে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে নম্বর বেশি ও কম দেয়ার বিষয়টি উপস্থাপিত হয়। এ শিক্ষক তার ঘনিষ্ঠ তিন শিক্ষার্থীকে মিড টার্ম পরীক্ষায় ১০ এর মধ্যে ১০ এবং তার বিরুদ্ধে ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনা শিক্ষার্থীসহ তার পক্ষ নেয়া কয়েক শিক্ষার্থীকে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ১০ এর মধ্যে তিন নম্বর দেন। বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড.চঞ্চল কুমার বোসের নামে অশালীন ভাষায় উড়ো চিঠি দেন। বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. হোসনে আরা জলির নামে চিঠি, সহকারী অধ্যাপক সোহেলী জান্নাতের নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অশালীন পোস্ট, ক্লাসের কথা বলার অপরাধে ছাত্রীকে নগ্ন হয়ে নাচতে বলেন, পরীক্ষার খাতা গ্রহনের সময় স্বাক্ষর না দিয়ে খাতা গ্রহন যথাসময়ে খাতা মূল্যায়ন না করা, কোর্স শিক্ষক হয়ে প্রতি ব্যাচের পরীক্ষার প্রশ্ন পত্র জমা না দেয়াসহ প্রতি ব্যাচের পরীক্ষায় একই প্রশ্ন পত্র জমা দেয়ার অভিযোগ উত্থাপিত হয়। এসময় ৩০তম একাডেমিক কমিটির সভায় বিভাগের সকল শিক্ষক তাকে বিভাগের পরবর্তী চেয়ারম্যান হিসাবে নিয়োগ না দেয়ার পক্ষে কথা বলেন। নিয়োগ দেয়া হলে তার সাথে কাজ করবেন না বলে জানান। এদিকে এ ঘটনার পরীপ্রেক্ষিতে অধ্যাপক ড মিল্টন বিশ^াস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আরজুমন্দ আরা বানু,অধ্যাপক ড.মিল্টন বিশ্বাস,ড. হোসনে আরা জলির নামে গত ২০ অক্টোবর ও ২৯ অক্টোবরে পৃথক আইনজীবির মাধ্যম্যে আইনীনোটিশ পাঠান। ২৮ অক্টোবর বাংলা বিভাগের ৩১ তম একাডেমিক সভায় মিল্টন বিশ্বাস ছাড়া সবাই পূর্ববর্তী বিষয়গুলো আবার উত্থাপন করে আবার তাকে চেয়ারম্যানর হিসাবে না মানার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন। এদিকে গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সাথে বিভাগের শিক্ষকরা দেখা করতে গেলে উপাচার্য ড.মীজানুর রহমান বাংলা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের মাষ্টার্সের ১ম সেমিষ্টারের বাংলা কবিতা (কোর্স নং-৫১০১) এর মিডটার্ম ফাইনাল পরীক্ষার খাতা তার কাছে জমা দিতে বলেন। এদিন বিভাগের শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক সাবরিন নাহার ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের ৪র্থ সেমিষ্টার ভাইভা পরীক্ষা কয়েক শিক্ষার্থী উদ্দেশ্যপ্রনোদিত ভাবে দুপুরের খাবারের সময় একাই ভাইভা নিয়ে কম নম্বর দেয়ার অভিযোগ করেন।
এবিষয়ে বাংলা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী পারভেজ মোশারফ বলেন,আমি মাস্টার্স ১ম সেমিষ্টারে মিল্টন বিশ্বাসের প্রতিটি ক্লাস ও মিড টার্মে অংশগ্রহন করেছি। কিন্তু আমাকে মিডটার্মে অনুপস্থিত দেখানো হয়েছে। উপস্থিতি কোন নম্বরই দেয়া হয়নি।
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েল বাংলা বিভাগের শিক্ষক ও বাংলা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের মাষ্টার্সের ১ম সেমিষ্টারের পরীক্ষা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. চঞ্চল কুমার বোস বলেন, ড.মিল্টন বিশ্বাস বিভাগের একাডেমিক কাজে অসততার আশ্রয় নিয়েছেন। বিশেষ করে তিনি বিভিন্ন সেমিষ্টারে শিক্ষার্থীদের নাম্বার প্রদানে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন।
বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড.আরজুমন্দ আরা বেগম বলেন, ড.মিল্টন বিশ্বাসের বিরুদ্ধে একাডেমিক কাজে গাফেলতি,সহকর্মীদের অশালীন চিঠি,শিক্ষার্থীদের নম্বর জালিয়াতিদর ঘটনাসহ কয়েকটি অভিযোগ একাডেমিক কমিটির সভায় উত্থাপিত হয়। পরবর্তীতে সেগুলা আমরা উপাচার্যেও কাছে জানিয়েছি। উপাচার্য মহাদয় এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিবেন। আর লিগ্যাল নোটিশের বিষয়ে উপাচার্যের পরামর্শে কোন ব্যবস্থা নিবনা।
এ বিষয়ে ড.মিল্টন বিশ্বাস এর সাথে একাধিক বার যোগাযোগ করার পর তিনি বলেন, আমি কাউকে নম্বর কম দেয় নি, যারা কম পেয়েছে তারা তাদের মেধার ভিত্তিতে পেয়েছে । এখানে একদল শিক্ষক আমার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দিয়ে ভড়কে দিচ্ছেন। যেটা অত্যন্ত দুঃখ জনক। আমি গত কালকেই নম্বর পত্র সহ পরীক্ষার খাতা উপাচার্যের নিকট জমা দিয়েছি এবং আশা করি তিনি এটার বিশ্লেষণ করে দেখবেন ।
বাংলা ডিপার্টমেন্টের কোন মিড পরীক্ষায় দশে-দশ পাওয়া যায় কি না তা সম্পর্কে কিছু বলেন নি।
এদিকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান শিক্ষার্থীদের বলেন,আমরা ইতিমধ্যে এই কোর্সটির খাতা অন্য বিশবিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে মূল্যায়ন করতে দিয়েছি। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১৫০ শিক্ষক মিডটার্মের ফলাফল শিক্ষার্থীদের কাছে প্রকাশ করে না। তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে।