খোলা বাজার২৪, রবিবার , ১৮ অক্টোবর ২০১৫ : বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে বড় উদ্বৃত্ত নিয়ে অর্থবছর শুরু করেছে বাংলাদেশ সরকার, যা বছরের শেষ পর্যন্ত ধরে রাখা সম্ভব হবে বলে আশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক বৃহস্পতিবার যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম দুই মাস, অর্থ্যাৎ জুলাই-অগাস্ট সময়ে উদ্বৃত্তের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৮ কোটি ২০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ২৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার। চলতি হিসাবের ভারসাম্য বা ব্যালেন্স অফ পেমেন্টে ১৬৫ কোটি ডলারের বড় ঘাটতি (ঋণাত্মক) নিয়ে শেষ হয়েছিল গত অর্থবছর। এই হিসেবে এ অর্থবছরের শুরুটা সরকারের জন্য বেশ ‘স্বস্তি’র। গভর্নর আতিউর রহমান বলছেন, বিশ্ববাজারে জ্বলানি তেল ও খাদ্যপণ্যের দাম কমায় বাংলাদেশের আমদানি ব্যয় কমেছে। পাশাপাশি বেড়েছে রপ্তানি আয়। এ কারণেই ‘স্বস্তিদায়ক’ এই উদ্বৃত্তি। নিয়মিত আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য আয়-ব্যয় চলতি হিসাবের অন্তর্ভুক্ত। এই হিসাব উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হল, নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, এবার জুলাই-অগাস্ট সময়ে রপ্তানি আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে আমদানি খাতে ব্যয় কমেছে ৩ শতাংশ। অর্থনীতির গবেষক জায়েদ বখত বলেন, দুই মাসের তথ্য দিয়ে লেনদেন ভারসাম্যের গতি বোঝা যাবে না। তবে কৃষি উৎপাদনে গত কয়েক বছরের সাফল্যের ধারা অব্যাহত থাকলে আমদানি ব্যয়ের লাগাম টেনে রাখা সম্ভব। আর বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দামও সহসা ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার কোনো আভাস না থাকায় পরিস্থিতি বাংলাদেশের অনুকূলে থাকবে বলেই বি আইডিএসের এই গবেষকের ধারণা। তিনি বলেন, “এ সব বিবেচনায় আমদানি ব্যয় খুব বেশি বাড়বে বলে মনে হয় না। রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা গেলে চলতি অর্থবছর শেষেও লেনদেন ভারসাম্যে উদ্বৃত্ত থাকার কথা।” আগামী কয়েকটি মাস রেমিটেন্স ও আমদানি-রপ্তানি পরিস্থিতি দেখলেই প্রকৃত সম্ভাবনা আরও স্পষ্ট বোঝা যাবে বলে জায়েদ বখত মনে করছেন। অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের প্রবাসী আয়ের তথ্যে দেখা যায়, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এবার ২ শতাংশ রেমিটেন্স কম এসেছে। বাণিজ্য ঘাটতিও কমেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জুলাই-অগাস্ট সময়ে পণ্য বাণিজ্যে সামগ্রিক ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৬০ কোটি ৩০ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ১০১ কোটি ৫০ লাখ ডলার। আর গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরের পুরো সময়ে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল প্রায় এক হাজার কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরের জুলাই-অগাস্ট সময়ে বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে (এফওবিভিত্তিক, ইপিজেডসহ) মোট ৫৭০ কোটি ৭০ লাখ ডলার ব্যয় করেছে বাংলাদেশ। আর পণ্য রপ্তানি থেকে (এফওবিভিত্তিক, ইপিজেডসহ) আয় হয়েছে ৫৩০ কোটি ৪০ লাখ ডলার। সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতিও কমেছে। গত অর্থবছরের জুলাই-অগাস্ট সময়ে এ খাতের ঘাটতি ছিল ৯০ কোটি ৮০ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা কমে ৬৩ কোটি ২০ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে। মূলত বিমা, ভ্রমণ ইত্যাদি খাতের আয়-ব্যয় হিসাব করে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি পরিমাপ করা হয়।