Fri. Jun 20th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬: পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) সংশোধনের 6kকাজ বন্ধ করে দিয়েছে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগ। এই অনুবিভাগ নির্বাচন কমিশনের অধীনস্থ হলেও এ সিদ্ধান্তের ব্যাপারে কমিশনের কোনো অনুমোদন নেয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন একাধিক নির্বাচন কমিশনার। হঠাৎ এই সিদ্ধান্তের ফলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা কয়েক হাজার মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন। এদের অনেকেরই বিদেশে যাওয়ার এবং চাকরির জন্য জরুরিভিত্তিতে এনআইডি সংশোধনের প্রয়োজন। কিন্তু আবেদন করার সুযোগ না পেয়ে তারা হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
অনুবিভাগ থেকে জানানো হয়েছে, ‘পরিচয়পত্র সংশোধনের কাজ এখন উপজেলা পর্যায়ে সম্পন্ন হবে। কেন্দ্রীয়ভাবে এ সংক্রান্ত কোনো আবেদন গ্রহণ করা হবে না।’ যদিও দেশের অনেক উপজেলা নির্বাচন অফিসে কর্মকর্তা-কর্মচারী সংকট রয়েছে। মাঠ পর্যায়ের সার্ভার স্টেশনগুলো সচল হয়নি। মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত সারা দেশে ইউপি নির্বাচন নিয়ে উপজেলা নির্বাচন অফিস ব্যস্ত সময় কাটাবে। ফলে পরিচয়পত্র সংশোধন নিয়ে নাগরিকদের চরম ভোগান্তির আশংকা রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসি কার্যালয়ের সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ১৫ ফেব্র“য়ারি থেকে এনআইডি সংশোধনের জন্য সবাইকেই সংশ্লিষ্ট থানা অথবা উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে আবেদন করতে হবে। সেখান থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পরেই জাতীয় তথ্য ভাণ্ডার থেকে তথ্য সংশোধন করার সুযোগ পাওয়া যাবে। তিনি বলেন, ইসির এনআইডি উইংয়ে অতিরিক্ত চাপ সামলাতেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কেন্দ্রীয়ভাবে এনআইডি সেবা বন্ধের প্রথমদিনে গতকাল হাজার হাজার সেবাগ্রহীতা লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু কাউন্টার থেকে এনআইডি সংশোধনের কোনো আবেদন নেয়া হচ্ছে না। ফলে হতাশ হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সংশ্লিষ্টরা। মাজহারুল ইসলাম নামের এক ভুক্তভোগী জানান, উপজেলা পর্যায়ে ৬ মাস আগে আবেদন করেও এখনো কার্ড পাননি তিনি। কার্ড নেয়ার জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনে অবস্থিত এনআইডি অনুবিভাগে ঘোরাঘুরি করছেন তিনি। কিন্তু কেন্দ্রীয়ভাবে সেবা বন্ধ করায় কবে নাগাদ এ কার্ড পাবেন–তার নিশ্চয়তা নেই বলে জানান তিনি।
এদিকে আইনে না থাকলেও জাতীয় পরিচয়পত্রের ব্যবহার এক প্রকার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্রতিনিয়ত জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে পাসপোর্ট অধিদপ্তর, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, সরকারি ব্যাংকও রয়েছে। সরকারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানি, বেসরকারি ব্যাংক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহারের শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে। যদিও ২০১০ সালে ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন এবং তদসংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিধানাবলী প্রণয়নকল্পে প্রণীত আইনের ১১ ধারায় জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার বাধ্যতামূলক না করতে বলা হয়েছে।
তবে অলিখিতভাবে বাধ্যতামূলক করায় জাতীয় পরিচয়পত্রের প্রয়োজন ও গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। এতে করে অনেক জাল-জালিয়াতি বন্ধ সহজ হয়েছে। নামে জাতীয় পরিচয়পত্র হলেও শুধু ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিরাই এই পরিচয়পত্র পাচ্ছে। কোনো ধরনের দালিলিক প্রমাণাদি ছাড়াই ২০০৮ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন করায় অসংখ্য জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল রয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষ ভোগান্তির মধ্যে পড়েছে।
বিশেষ করে যাদের জন্ম তারিখ পরিচয়পত্রে ভুল এসেছে, তাদের ভুল সংশোধন করতে জটিলতা দেখা দিচ্ছে। অলিখিত বিধান করা হয়েছে, জন্ম তারিখ ও নাম সংশোধন করতে হলে এসএসসি পাসের সনদ লাগবে। যাদের এই সনদ নেই, তারা ভুল সংশোধনের সুযোগ পাচ্ছে না। এমনকি আদালতে গিয়ে এফিডেভিট করে ভুল সংশোধন করা যাচ্ছে না। জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের সাত বছর অতিবাহিত হলেও এখনো অসংখ্য ভোটারের নামের বানান, ঠিকানা অথবা জন্ম তারিখ ও পিতা-মাতার নামের বানান নির্ভুল করতে পারেনি ইসি।
ইসি সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, তাদের হিসাব অনুযায়ী জাতীয় তথ্য ভাণ্ডারে নয় কোটি ৯৮ লাখ ৯৮ হাজার ৫৫৩ জন ভোটার রয়েছে। ২০০৮ সালে দেশে প্রথমবারের মত ছবিসহ ভোটার তালিকা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। ওই বছর আট কোটি ১০ লাখ ছবিসহ ভোটার তালিকা জাতীয় তথ্যভাণ্ডারে সংযুক্ত হয়। এরপর থেকে ছবিসহ ভোটার তালিকায় ভোটারদের নাম সংশোধন নিয়ে নানা ধরনের হয়রানির অভিযোগ ওঠে।
২০১৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর জাতীয় বেতন স্কেলের গেজেট জারির কারণে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আইডি সংশোধনের জন্য দুই লাখ ৬৫ হাজার ১৪৮টি আবেদন জমা পড়ে এনআইডিতে। নতুন স্কেলে বেতন নির্ধারণ করতে চাকরিজীবীদের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহারের নির্দেশনা দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। ইসির পক্ষ থেকে এগুলো জরুরি ভিত্তিতে সংশোধনের জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়। এসব আবেদনকারীকে জরুরি ভিত্তিতে ঢাকা থেকে এনআইডি সংশোধন করে দেয়া হয়। এছাড়াও ইসির পক্ষ থেকে সব নাগরিককে স্মার্ট এনআইডি দেয়ার উদ্দেশ্যে জাতীয় তথ্য ভাণ্ডারে নাগরিকদের দেয়া তথ্য সংশোধনেরও সুযোগ দেয়া হয়।
ইসি কার্যালয়ের সচিব সিরাজুল ইসলাম বলেছেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দ্রুত কার্ড সংশোধন করে দিতে গিয়ে এনআইডি উইংয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটে। এখন আর কাউকে ঢাকা থেকে কার্ড সংশোধনের সুযোগ দেয়া হবে না। তবে প্রবাসীদের মধ্যে যারা স্বল্প সময়ের জন্য দেশে অবস্থান করে এনআইডি সংশোধনের আবেদন করবেন তাদের বিষয়টি কমিশন বিবেচনায় নিতে পারে।
আইন মানছে না এনআইডি উইং
জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে গেলে সাধারণ ও জরুরি ফি জমা দিয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকা থেকে উত্তোলনের সুযোগ রয়েছে। জরুরি ফি দিলে আইনানুযায়ী ৩ থেকে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তা দেয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু তা মানছে না জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ (এনআইডি উইং)। গতকাল টাঙ্গাইলের গোপালপুরের শিপু নামের একজন হারানো এনআইডি তোলার জন্য সোনালী ব্যাংকে ৩৬৮ টাকা জমা দেন। নিয়ম অনুসরণ করে আবেদন জমা দিলে আগামী ২৮ ফেব্র“য়ারি এনআইডি দেয়া হবে বলে রিসিট দেয়া হয়। ওই ভুক্তভোগী জানান, টাঙ্গাইল থেকে ঢাকায় এসে জরুরি ভিত্তিতে কার্ড নেয়ার জন্য সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আবেদন করেন। কিন্তু সাধারণ ফি গ্রহণ করলে যে সেবা দেয়া হয়, জরুরি ফি দিয়েও তেমনি সেবা পাওয়া যাচ্ছে।