খোলা বাজার২৪, শনিবার, ২৩ এপ্রিল ২০১৬: সারা দেশে ব্লগার হত্যার আঘাতের ধরনের সঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকী (৫৮) হত্যার মিল রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশের ধারণা, ইসলামি চরমপন্থীদের হাতে তিনি খুন হয়েছেন।
হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. শামসুদ্দিন এ কথা বলেন।
আজ শনিবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে মহানগরের শালবাগান এলাকায় নিজের বাসার কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে হত্যা করা হয়। লাশ উপুড় হয়ে পড়ে ছিল। তাঁর ঘাড়ে কোপ দেওয়া হয়। এতে গলার সামান্য অংশ বাদে পুরোটাই কেটে যায়।
হত্যার প্রতিবাদে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক আধা ঘণ্টা অবরোধ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
রেজাউল করিমের ভাই সাজিদুল করিম সিদ্দিকীর তথ্যমতে, আজ সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস ধরতে রেজাউল করিম বাসা থেকে বের হন। সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে ছাড়ে ওই বাস। কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর আগেই বাসা থেকে একটু দূরে আরেকটি বাসার মেইন গেটের সামনে রেজাউল করিমের লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়।
সাজিদুল করিম নাটোরের সিংড়া থানার শিক্ষা কর্মকর্তা। ভাই রেজাউল করিমসহ তাঁরা ২৬১ শালবাগান (সপুরা) এলাকায় পৈতৃক বাড়িতে একসঙ্গে বাস করছেন। সকালে তিনিও বাসা থেকে কর্মস্থলের দিকে রওনা হন। শালবাগান রেলগেটে যাওয়ার পর তাঁর (সাজিদুল) স্ত্রী ফোন করে তাঁকে ভাই খুন হওয়ার খবর জানান।
রেজাউল করিমের পরনে ছিল সাদা শার্ট, প্যান্ট, পায়ে স্যান্ডেল।
বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাদাত হোসেন খানসহ পুলিশের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
শিক্ষক রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যা ও গতকাল বৃহস্পতিবার রাজশাহী শহরের আবাসিক হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাসের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মিজানুর রহমানের লাশ উদ্ধারের প্রতিবাদে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক আধা ঘণ্টা অবরোধ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে সকাল সোয়া ১০টা থেকে বেলা পৌনে ১১টা পর্যন্ত অবরোধ চলে।
এর আগে ২০১৪ সালের ১৫ নভেম্বর দুপুরে খুন হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম শফিউল ইসলাম। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে ফেরার পথে বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন চৌদ্দপাই এলাকায় নিজ বাসার সামনে দুর্বৃত্তদের হামলায় তিনি গুরুতর আহত হন। পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর কর্তব্যরত চিকিৎসা কর্মকর্তা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনার পাঁচ ঘণ্টার মাথায় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে ‘আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশ-২’ নামের একটি পেজ খুলে এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে স্ট্যাটাস দেওয়া হয়।
এরও বেশ আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও দুজন শিক্ষক খুন হন। ২০০৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর ভোরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসংলগ্ন বিনোদপুর এলাকায় প্রাতর্ভ্রমণের সময় কুপিয়ে হত্যা করা হয় অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনুসকে। ২০০৬ সালের ১ ফেব্র“য়ারি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের আবাসিক এলাকা থেকে নিখোঁজ হন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এস তাহের। দুই দিন পর ক্যাম্পাসের বাসার পাশের ম্যানহোলের ভেতরে তাঁর লাশ পাওয়া যায়।
