Wed. Mar 12th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার২৪, বুধবার, ১০ আগস্ট ২০১৬: মুন্সিগঞ্জ : মুন্সীগঞ্জ আদর্শ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ জামাত নেতা মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে প্রশাসন। মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার জামাত পূর্ব এবং পশ্চিমে দুটি কমিটি রয়েছে। সদর উপজেলা জামাতের পূর্বের দায়িত্বে আছেন মাহাবুবুর রহমান। মুন্সীগঞ্জ আদর্শ মাদ্রাসার শিক্ষক ও ছাত্রদের সূত্রে জানা যায়, জামাত নিয়ন্ত্রিত এই মাদ্রাসাটিতে উপজেলা জামাতের আমিরই কেবল মাদ্রাসার অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করতে পারেন। অন্য কোন শিক্ষক অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করতে পারবে এমন কোন রেজুলেশন নেই এই মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির রেজুলেশনে। জামাতের নিয়ম অনুসারেই মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা জামাতের আমির মাহাবুবুর রহমান অধ্যক্ষের দায়িত্বে আছেন দীর্ঘ দিন ধরে। আর এই মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটিতে সভাপতি পদে রয়েছেন সাবেক জেলা আমির ও কেন্দ্রীয় জামাত নেতা খলিলুর রহমান প্রি-ক্যাডেট স্কুল এন্ড কলেজের পরিচালক এ.বি.এম. ফজলুল করিম, মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা জামাতের আমির মাহাবুবুর রহমান, জেলা জামাতের সদস্য, নুরুল হক মাদবর, নুরুল হক পাটোয়ারী, সাহার বানু জামাত নেতাসহ ৭ জন বর্তমান কমিটির সদস্য বলে মাদ্রাসার রেজুলেশন বহি সূত্রে জানা যায়। কমিটির সাত জনের মধ্যে ২ জন শিক্ষক প্রতিনিধি মোনায়েম খান ও সাহাব উদ্দিনসহ সকল শিক্ষিক অধ্যক্ষের অপসারণের জন্য বিভিন্ন জায়গায় আবেদন করেন।

ইতিপূর্বে এই জামাত নেতাকে পুলিশ ২/৩ বার আটক করে মামলা দিলেও পরিবর্তন হয়নি এই জামাত নেতার কর্মকান্ড। এই মাদ্রাসায় বসেই জামাতের পুরো জেলার ছাত্র শিবির, জামাতের সকল অঙ্গ সংগঠনের দলীয় কর্মকান্ড পরিচালিত হয়। জামাত নেতা মাদ্রাসার ভিতর বসে থেকে তার আপন ভাগিনা সরকারী শিক্ষক শাকিব কামালকে দিয়ে বিভিন্ন সময়ে মাদ্রাসা ছাত্রীদের সাথে পর্ণ ভিডিও তৈরী করে আসছিল। আর এসব পর্ণ তৈরীতে সরাসরি মদদ দিতেন জামাত নেতা মাহাবুবুর রহমান। এছাড়া মাদ্রাসা প্রিন্সিপাল মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে মাদ্রাসার টাকা আত্মসাৎ, ছাত্র-ছাত্রীদের মারধরের অভিযোগ আছে। তিনি মাদ্রাসার পরিচালিত এতিমখানার টাকাও আত্মসাৎ করে বলে এতিমখানা সূত্রে জানা গেছে। ৩ ঘন্টার পর্ণ ভিডিও এক মাস আগে মাদ্রাসার ছাত্রদের কাছে চলে আসে। এই ভিডিও নিয়ে এখন সর্বমহলে আলোচনা- সমালোচনার ঝড় বইছে। এ বিষয়ে একাধিক জাতীয় পত্র- পত্রিকা ও অনলাইন মিডিয়াতে ধারাবাহিক প্রকাশ হওয়ার পর এই অধ্যক্ষ তার ভাগিনা আর ভাতিজিকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেন। পরে মাদ্রাসার ছাত্র ও অভিভাবক সমাজ মাদ্রাসার অধ্যক্ষের অপ- সারনের দাবীতে মানব বন্ধন কর্মসূচী পালন করেন। মাদ্রাসা ও পত্রিকা সূত্রে জানাযায়, ২১ জুলাই আদর্শ মাদ্রাসার ছাত্ররা অধ্যক্ষের অপসারন চেয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর ডকুমেন্টসহ আবেদন করেন। জেলা প্রশাসক পর্ণ ভিডিওটি দেখে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে তদন্ত করার নির্দেশ দেন। পরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশ সুপারকে নির্দেশ প্রদান করেন। এই নির্দেশনা পাওয়ার পর সদ্য যোগদানকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নেন। এই জামাত নেতা মাহাবুবুর রহমান ও তার ভাগিনা শাকিব কামালের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পত্র- পত্রিকায় ও অনলাইনে মিডিয়াতে ভিডিও পর্ণগ্রাফী তৈরী, নানা অনিয়ম দূর্নীতির খবর প্রচার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। গত ৭ আগষ্ট সহকারী অধ্যক্ষ মোনায়েম খাঁনের নেতৃত্বে শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধি দল জেলা শিক্ষা অফিসার শরিফুল ইসলাম এর কাছে ডকুমেন্টসহ লিখিত আবেদন করেন। তার এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানালে গত ১০ আগস্ট সিনিয়র কম্পিউটার শিক্ষক আব্দুস সালামকে কম্পিউটার ল্যাবে সাড়ে ৩টা থেকে সাড়ে ৪টা এক ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন এবং নানা রকম মানসিক চাপ প্রয়োগ করেন। সবশেষ তাকে চাকুরীচ্যূত করার হুমকি দেয়া হয়েছে।

মাদ্রাসা ছাত্র হুজায়ফা বলেন, আমরা এতোদিন ভয় আর আতংক নিয়ে দিন কাটাচ্ছিলাম জামাত নেতার ভয়ে। তিনি আরো বলেন, জেলা প্রশাসক সাইফুল হাসান বাদল ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম স্যারকে আন্তরিক ধন্যবাদ। দোয়া করি তারা দীর্ঘজাীবী হোক। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ জামাত নেতার বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে এই খবর শোনার পর সন্তোষ প্রকাশ করেন।

ঘটনার বিষয়ে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির একাধিক সদস্যের সাথে যোগাযোগ করেও তাদের পাওয়া যায়নি। মাদ্রাসার অধ্যক্ষকে তার মাদ্রাসায় গিয়েও পাওয়া যায়নি। পরে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একধিকবার কল করিলেও তিনি ফোন রিভিস না করে বন্ধ করে দেন।

এ ব্যাপারে জামায়াতের সদর পূর্ব জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান বলেন, যেহেতু সব সমাধান করে ফেলেছেন এ ব্যাপারে আমার কোন বক্তব্য নেই বলে সেল ফোনটি সেল ফোনটি রেখে দেন।

মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি জামায়াতের সাবেক আমির ও কেন্দ্রীয় জামায়াতের নেতা অধ্যাপক ফজলুল করিম বলেন, ছাত্র-ছাত্রীদের হুমকি প্রদর্শণের বিষয়ে যে অভিযোগ উঠেছে সেটি আমার জানা নেই। আর যদি সেটা প্রমাণিত হয় তাহলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জেলা শিক্ষা অফিসার শরিফুল ইসলাম বলেন, এই মাদ্রাসার বিষয়টি আমি বিভিন্ন মাধ্যমে জেনেছি তবে শিক্ষকদের অভিযোগটি এখনও আমার হাতে এসে পৌছায়নি।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম বলেন, এই মাদ্রাসার বিষয়ে জেলা প্রশাসক আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে এবং এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসকের সাথে আলাপ হয়েছে।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( শিক্ষা, আইসিটি ও সার্বিক) হারুন অর রশিদ বলেন, আমরা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইতিপূর্বে শিক্ষা মন্ত্রনালয় ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে চিঠি পাঠিয়েছি। আমাদের যে দায়িত্ব তা আমরা সঠিকভাবে পালন করেছি। মন্ত্রনালয়ের পরবর্তী আদেশ হাতে পাওয়া মাত্র আইনগত ব্যবস্থা নিব।

প্রশাসন এই জামাত নেতাকে আটক করে আইনের আওতায় এনে ভিডিও পর্ণ তৈরীর মূল হোতা শিক্ষক শাকিব কামলকে আটক এবং মাদ্রাসাটিকে জামাতমুক্ত করার লক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে প্রশাসন এমনটাই দাবি শিক্ষক, ছাত্র এবং অভিভাবক মহলের। এ ব্যাপারে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা শিক্ষামন্ত্রনালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ শিক্ষা মন্ত্রীর জরুরি হস্তক্ষেপ ও নজরদারিও কামনা করছেন।