পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দ্বিপাক্ষিক বিষয়ক অতিরিক্ত সচিব কামরুল আহসান পাকিস্তানের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার সামিনা মেহতাবকে তার দফতরে তলব করে ঢাকার পক্ষ থেকে ইসলামাবাদের দেয়া বিবৃতির তীব্র প্রতিবাদ জানান।
পাকিস্তানের দূত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বেরিয়ে গেলে কামরুল আহসান সাংবাদিকদের জানান, ‘মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ড নিয়ে পাকিস্তান যে বিবৃতি দিয়েছে সেটি সম্পূর্ণ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের শামিল।’
তিনি বলেন, ঢাকা ইসলামাবাদকে জানিয়েছে মীর কাসেম আলীর বিচার সবার সামনে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জানান, আমরা পাকিস্তানের দূতকে জানিয়েছি, মীর কাসেম আলীর আপিল করার সুযোগ ছিল। আপিলের সুযোগ তিনি নিয়েছেন। সর্বোচ্চ আদালত মনে করেছেন, তিনি ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী যে অপরাধ করেছেন, এটাই তার উপযুক্ত শাস্তি।
সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তারা জানান, পাকিস্তানের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার সামিনা মেহতাব আজ বিকেল ৩টা ১৫মিনিটে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত সচিব কামরুল আহসানের দফতরে আসেন এবং তিনি ৩টা ৩৫মিনিটে বেরিয়ে যান।
কামরুল আহসানের দফতর ত্যাগের সময় দূত সাংবাদিকদের বলেন ‘কিছুই বলার নেই’।
পরে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, মেহতাবকে বলা হয়েছে যে, ইসলামাবাদ বারবার মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত বাংলাদেশী যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নিচ্ছে। পাকিস্তান আবারও স্বীকার করে নিচ্ছে যে, তারা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল। তাই তারা ৪৫ বছর আগে বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারে অবিরাম বিরোধিতা করে আসছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই দণ্ড কার্যকর হয়েছে বলে পাকিস্তান যে দাবি করেছে, বাংলাদেশ তা দৃঢ়তার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করছে। কারণ মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ রয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তার রাজনৈতিক পরিচিতির ভিত্তিতে এই বিচার করেনি।
বিবৃতিতে বলা হয়, পাকিস্তানের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারকে সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, মীর কাসেম আলী জামায়াতের তৎকালীন ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। শুধু তাই নয়, তিনি ১৯৭১ সালে কুখ্যাত আল-বদর বাহিনীর তৃতীয় সর্বোচ্চ কমান্ডার ছিল।
এই আল-বদর বাহিনী ১৯৭১ সালে তখনকার পাকিস্তানী বাহিনীর সঙ্গে যোগ দিয়ে বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে। তারা বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় ও দণ্ড কার্যকরের বিরোধিতা করে পাকিস্তান বাংলাদেশের জনগণের মনোভাব এবং ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি চরম অসম্মান প্রদর্শন করেছে।
এ পর্যন্ত বাংলাদেশ ছয় জন যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে। এর মধ্যে পাঁচজন ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধী জামায়াতের নেতা। প্রতিটি মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর পরই পাকিস্তান এর নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়ে আসছে।
গতরাত ১০ টা ৩৫ মিনিটে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী জামায়াতের সিনিয়র নেতা ৬৩ বছর বয়সী মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এর পর পরই পাকিস্তান এই দণ্ড কার্যকরে নিন্দা জানায়।