শনি. এপ্রি ২০, ২০২৪
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

imagesখোলা বাজার২৪,সোমবার,০৫ সেপ্টেম্বর  ২০১৬ঃ সমালোচকদের মতে, স্বল্প মেয়াদি সমাধান দেখিয়ে এসব জ্বালানি তেল চালিত রেন্টাল এবং কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাছ থেকে মাত্রাতিরিক্ত খরচে বিদ্যুৎ ক্রয়ের সাফাই গাইছে সরকার।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত মোট আট মাসে ভারতের সরকারি এবং বেসরকারি সরবরাহ প্রতিষ্ঠান থেকে ১৯৬.২৩ কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ কিনেছে পিডিবি। এতে খরচ হয়েছে ১,০১৭.২৪ কোটি টাকা। এছাড়া বহরমপুর-ভেড়ামারা হাই-ভোল্টেজ গ্রিড লাইনের মাধ্যমে ভারতের বেসরকারি কোম্পানিগুলো থেকে আরো ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
১ নভেম্বর ২০১৪ স্মরণকালের ভয়াবহতম বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কবলে পড়েছিল দেশ। এর আগে সারা দেশে একযোগে কখনো বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেনি। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের মতে, ভারত থেকে আসা বিদ্যুতের সরবরাহ লাইনে ক্রটি দেখা দেয়ায় সারা দেশে একযোগে বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটে। বিদ্যুতের এমন বিপর্যয় আগে কখনো ঘটেছে বলে কেউ স্মরণ করতে পারেননি। বিভিন্ন সময় জাতীয় গ্রিডে যান্ত্রিক বিভ্রাট বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিদ্যুৎ সরবরাহে সমস্যা দেখা দিলেও তা ছিল সাময়িক। ১ নভেম্বরের মতো একযোগে সারা দেশ বিদ্যুৎবিহীন হয়ে যাওয়া আগে কখনো দেখেনি দেশবাসী। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের মতে, ভারতীয় ও বাংলাদেশের সরবরাহ লাইনের সংযোগস্থলে ক্রটির কারণে বিদ্যুতের এ বিপর্যয় ঘটে। এ জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কায়কাউসের নেতৃত্বে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দেয়া হয়। যদিও তা সম্ভব হয়নি।
প্রাথমিক অবস্থায় কখন বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে তারও কোনো সদুত্তর ছিল না বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে। ঘটনার সময় দুপুরে বলা হয়, বিকেল ৫টার মধ্যে বিদ্যুৎ আসবে। ৫টায় বলা হয় আরো ছয়-সাত ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে। (সূত্র: দৈনিক নয়াদিগন্ত ২ নভেম্বর ২০১৪)
বিদ্যুৎব্যবস্থায় গ্রিড একটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর অঙ্গ। গ্রিড বন্ধ হয়ে বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটার অনেক কারণ আছে। অতি পুরোনো ও জরাজীর্ণ সঞ্চালন লাইনে (গ্রিড) যদি তার ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ সঞ্চালন করা হয়, তাহলে গ্রিডের সার্কিট পুড়ে বিপর্যয় ঘটতে পারে। সঞ্চালন লাইনে যদি ছিদ্র দেখা দেয়, তা থেকে স্পার্ক করে গ্রিড বন্ধ হতে পারে।
বিদ্যুৎ সঞ্চালনের ফ্রিকোয়েন্সিতে হেরফের হলে গ্রিড বন্ধ হতে পারে। এমন আরও অনেক কারণ রয়েছে। এমনকি চালু বা সক্রিয় অবস্থায় সঞ্চালন লাইনে কোনো পাখি বসলে কিংবা কোনো গাছ বা গাছের ডালপালা ভেঙে পড়লেও গ্রিড বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
এর যে কোনো একটি কারণের প্রয়োগ যত তীব্র হবে, বিপর্যয়ও হবে তত ব্যাপক। তবে যে কোনো দেশের জাতীয় গ্রিডের একটি প্রধান অংশ (ব্যাকবোন) থাকে। তার সঙ্গে যুক্ত থাকে একাধিক আঞ্চলিক গ্রিড। সে বিভক্তিগুলো আবার এক সুতায় গাঁথা থাকে। এর মধ্যে এমন কারিগরি ব্যবস্থা রয়েছে, যাতে জাতীয় গ্রিডের কোনো আঞ্চলিক অংশে উক্ত যে কোনো কারণে কোনো ক্রটি দেখা দিলে বা বন্ধ হয়ে গেলে সম্পূর্ণ গ্রিড বন্ধ হবে না। তবে ব্যাকবোন বন্ধ হওয়ার কোনো কারণ ঘটলে তার প্রভাব সর্বব্যাপী হয়।
বাংলাদেশে জাতীয় গ্রিড বন্ধ (ট্রিপ) হয়ে বিদ্যুৎ বিপর্যয় একেবারে বিরল নয়। ১৯৯০ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত অসংখ্যবার নানা মাত্রায় ঘটনাটি ঘটেছে। তবে ছয়-সাত বছর ধরে গ্রিড বিপর্যয় প্রায় বিরল। সারা দেশে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছিল ২০০৭ সালে। তখন একটি ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে বিদ্যুতের গ্রিড ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ওই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। কিছু সময়ের ব্যবধানে দুবার গ্রিড বন্ধ হওয়ার ঘটনাও এর আগে ঘটেছে। এরপর ১ নভেম্বর ২০১৪ যে মাত্রায় ঘটনাটি ঘটেছে, তাতে অতীতের সব জানা রেকর্ড ভঙ্গ হয়েছে।  (সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো ২ নভেম্বর ২০১৪)
২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার বিদ্যুৎ সরবরাহব্যবস্থায় ট্রিপ বা বিভ্রাটের জন্য ৪৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন ছিল যুক্তরাষ্ট্র। সুতরাং এ রকম ঘটনা খুবই বিরল হলেও বিশ্বে অদৃষ্টপূর্ব নয়।
জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ে সাত বছর আগে বিদ্যুৎ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা জাতীয় গ্রিডকে দুর্বল হিসেবে চিহ্নিত করে তাকে শক্তিশালী করা এবং প্রয়োজনে যেকোনো অংশকে বিচ্ছিন্ন করার ব্যবস্থা নিতে যে সুপারিশ করেছিলেন তা পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে ১ নভেম্বরের মতো বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব হতো। ২০০৭ সালে সংঘটিত একই ধরনের বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের পর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগ মত দিয়েছিল যে দেশের জাতীয় গ্রিড দুর্বল। তখন জাতীয় গ্রিড শক্তিশালী করাসহ গ্রিডের নিরাপত্তা বিশ্লেষণ এবং গ্রিড বিপর্যয় হলে তা পুনরুদ্ধারে করণীয় সম্পর্কে তারা বেশ কিছু সুপারিশ করেছিল।
২০০৭ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে গ্রিড বিপর্যয়ে দেশ অন্ধকার হওয়ার পর বুয়েটের ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপকেরা বিদ্যমান গ্রিডকে দুর্বল বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। তখন সরকার কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির অনুরোধে বুয়েট ওই মত দিয়েছিল।
ওই প্রতিবেদন জমা হওয়ার বছর খানেক পর জাতীয় গ্রিড পরিচালনাকারী সংস্থা, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) গ্রিড সিস্টেমকে অটোমেটিক লোডশেডিংয়ের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিপর্যয় থেকে রক্ষার কোনো উপায় আছে কি না, তা জানতে চায় বুয়েটের ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের কাছে। ওই বিভাগের পক্ষ থেকে তখন মত দেওয়া হয়, গ্রিড দেশজুড়ে বিস্তৃত থাকলেও এটাকে বিচ্ছিন্ন করে কয়েকটি এলাকা রক্ষা করা সম্ভব। এটাকে বলা হয় আইল্যান্ডিং, যার অর্থ গ্রিডকে খ-িত করে কয়েকটি দ্বীপের মতো করে রক্ষা করা। এর ফলে সিলেটে জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয় হলে ঢাকা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। সে ক্ষেত্রে জাতীয় গ্রিডকে ছয়টি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে বলে মত দেওয়া হয়েছিল।
ওই প্রতিবেদনের সঙ্গে জড়িত প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আবদুল হাসিব চৌধুরী বলেছেন, ‘আমরা পিজিসিবিকে জানিয়েছিলাম, সিস্টেমকে অটোমেটিক লোডশেডিংয়ের মাধ্যমে দেশকে বিদ্যুৎ বিপর্যয় থেকে রক্ষা করা সম্ভব। তবে সরকারের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের সিদ্ধান্ত এবং অবকাঠামাগোত বিনিয়োগ ছাড়া এ কাজ করা সম্ভব নয়। পিজিসিবি এর পর আর কিছুই জানায়নি।’
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে করণীয় সম্পর্কে বুয়েটের একাধিক অধ্যাপক তিনটি উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছেন। এগুলো হচ্ছে-বিদ্যুৎ উৎপাদন কীভাবে, কতটুকু হবে তা নিয়ে সামগ্রিক সমীক্ষা (কমপ্রিহেনসিভ স্ট্যাডি) করা, সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে গ্রিড সাজানো এবং গ্রিডের নিরাপত্তা বিশ্লেষণ করা, যাতে কোনো ঘটনা ঘটলে গ্রিড কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং তা থেকে গ্রিডকে রক্ষার উপায় বের করা। বিদ্যুৎ সঞ্চালনব্যবস্থায় নিরাপত্তা বিশ্লেষণ বলতে বিশেষজ্ঞরা সামগ্রিক ব্যবস্থা কতটা টেকসই এবং বিদ্যুৎ প্রবাহের অস্থিরতা কতটা মানিয়ে নিতে সক্ষম তাকেই বোঝানো। বাইরের হুমকি বা হামলাকে বোঝানো না।
২০০৭ সালের পর গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য ও বুয়েটের অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেছেন, ‘আমরা প্রতিবেদন দিয়েছিলাম। এর পর কী হয়েছে তা জানা নেই।’ (সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো ৩ নভেম্বর ২০১৪)
বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে রাজধানীসহ সারা দেশের মানুষকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। বিশেষ করে ইট-বালু ঘেরা রাজধানীসহ সারা দেশের শহরগুলোতে দুর্ভোগ হয় বেশি। সারা দিন বিদ্যুৎ না থাকায় হাসপাতালগুলোর অপারেশন থিয়েটার অচল হয়ে পড়ে। অপারেশন চলাকালে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় রোগীরা পড়েন মহা বিপাকে। বিদ্যুতের কারণে পানির পাম্প অচল হয়ে যায়। এ কারণে পানির তীব্র সঙ্কটের মুখে পড়ে। ফ্রিজে থাকা মাছ-তরকারি নষ্ট হয়ে যায়। সিএনজি স্টেশনগুলো বিদ্যুৎ না থাকায় অচল হয়ে যায়। এ কারণে জ্বালানির অভাবে রাস্তায়ই বন্ধ হয়ে যায় গাড়ি। মোট কথা সারা দেশে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের সাথে অচল হয়ে যায় মানুষের জীবনযাত্রাও।
১ নভেম্বর দুপুরে রামপুরায় সারা দেশ বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, সারা দেশে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের জন্য আমরা দুঃখিত। এ নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। এ রকমটা কখনো কখনো হতেই পারে। নিউ ইয়র্কেও কয়েক ঘণ্টার জন্য বিদ্যুৎ ছিল না।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ভেড়ামারা বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের ক্রটির কারণে জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয় দেখা দেয়। এ সময় (বেলা পৌনে ১টা) আশুগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ছয়টি ও রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের তিনটি ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন একযোগে বন্ধ হয়ে যায়।
এ দিকে আশুগঞ্জের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ হওয়ার পরপরই একে একে সারা দেশের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ হয়ে যায়।  ভারত থেকে প্রতিদিন ৪৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হয়। এটি কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা কেন্দ্রের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়ে থাকে। কিন্তু ১ নভেম্বর বেলা সাড়ে ১১টার সময় ভারত থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। সাধারণত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে চাপ কমানোর জন্য সমপরিমাণ বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করতে হয়। কিন্তু লোড ডেসপাস কোম্পানি সমপরিমাণ বিদ্যুৎ চালু না করায় ভারতীয় ও বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনের সংযোগ স্থলে বিপর্যয় ঘটে। এর ফলেই সারা দেশ ব্ল্যাক আউট হয়ে যায়। এ দিকে সারা দেশে সন্ধ্যার মধ্যে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিকের আশার কথা কর্তৃপক্ষ দিলেও ক্রটি সারতে গিয়ে ফের বিপর্যয় দেখা দেয় জাতীয় গ্রিডে। ফলে বিদ্যুৎ সঙ্কট দীর্ঘায়িত হয়।
১ নভেম্বর দেশে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ছয় হাজার ৬০০ মেগাওয়াট। অন্যদিকে বেলা ৩টা পর্যন্ত মাত্র ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছে। কিন্তু ৩টার পর তা আবার বেড়ে ৭৫০ মেগাওয়াট হলেও ৪টা ২৫ মিনিটে আবারো বিপর্যয় হওয়ায় ৪টা ২৫ মিনিটের পর বিদ্যুৎ উৎপাদন ১০০ মেগাওয়াটে নেমে আসে। এ দিকে জাতীয় গ্রিড বিপর্যয়ের কারণে আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৯টি ইউনিট বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। দ্রুত মেরামত করে পাঁচটি ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার তা বন্ধ হয়ে যায়। রাত সাড়ে ৭টার পর আবার তা সচল হয়।
রাত ৮টার পর বন্ধ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো মেরামত শেষে একে একে সচল হতে শুরু করে। ৮টার পর এক হাজার ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। এ দিয়ে বিমানবন্দর ও এর আশপাশের এলাকায় এবং গণভবন, বঙ্গভবন ও এর আশপাশ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। রাতে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু ও বিদ্যুৎসচিবকে তলব করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় প্রতিমন্ত্রী ও সচিবের সাথে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যান পিডিবি’র চেয়ারম্যানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
১ নভেম্বর ২০১৪ ঘটনা সম্পর্কে কোনো না কোনোভাবে সাধারণের মধ্যে দু’টি ভাষ্য ছড়িয়েছে। প্রথমত, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে আন্তসঞ্চালন লাইনে ত্রুটির কারণে ঘটনা ঘটেছে। দ্বিতীয়ত, দেশের মধ্যে সঞ্চালন লাইনে ত্রুটি দেখা দেয়ার পর ভারত থেকে বিদ্যুৎ আনা বন্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়া ঘটনাটি নাশকতা হতে পারে বলে অনেকে ধারণা করেন। কিন্তু কিসের ভিত্তিতে তাঁরা এই ধারণা করছেন, তা কেউ বলতে পারেননি।
ঘটনা সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের ভাষ্য থেকে যে বিষয়টি জানা যায় তা হলো, জাতীয় গ্রিডে সমস্যা দেখা দেওয়ায় ভারত থেকে স্বাভাবিকভাবে বিদ্যুৎ নেয়া যাচ্ছিল না। জাতীয় গ্রিডের সমস্যাই প্রথম কারণ। এই অবস্থায়, গ্রিড যখন নিতে পারছে না, তখনো যদি ভারতে থেকে সরবরাহ অব্যাহত থাকে, তাহলে বাংলাদেশ-ভারত সঞ্চালন লাইনটি ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কথা। তাই বিদ্যুৎ আনা বন্ধ করা হয়।
এরপর সমগ্র প্রক্রিয়াটি পুনরুজ্জীবিত করে উৎপাদন প্রায় ৫০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করার পর, বিকেল সোয়া চারটায় আবার জাতীয় গ্রিড বন্ধ হয়ে যায়। পিজিসিবি, পিডিবি ও বেসরকারি খাতে কর্মরত পেশাজীবীদের অভিমত, জাতীয় গ্রিডেই সমস্যা ছিল। তবে তাঁরা একটি বিষয়ে একমত যে সমস্যা যা-ই হোক না কেন, তা হয়েছিল গ্রিডের ব্যাকবোনে এবং তার কেন্দ্রবিন্দু ছিল ভেড়ামারার গ্রিড উপকেন্দ্র, যার মাধ্যমে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করা হয়।
গ্রিডে সমস্যা হলেও তার তীব্রতা নিয়ন্ত্রণের প্রযুক্তি রয়েছে। যেমন, বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে গ্রিডের সঙ্গে এমনভাবে যুক্ত করা যায়, যাতে গ্রিড বন্ধ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি গ্রিড থেকে বিযুক্ত হয়ে যাবে। এর ফলে গ্রিড বন্ধ হলেও কেন্দ্রটি বন্ধ হবে না। গ্রিড মেরামতের সঙ্গে কেন্দ্রটি আবার গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত করা যাবে। এই ব্যবস্থায় প্রাথমিক ব্যয় বেশি। কিন্তু গ্রিডে সমস্যার কারণে কখনোই বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে না। দেশে এখন এ ব্যবস্থাটি সক্রিয় নেই।
যে বিস্তৃত ও জটিল প্রক্রিয়ায় বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদিত ও বিতরিত হয়, তার মধ্যে পাওয়ার ফল্ট হরহামেশাই ঘটে। পুরো প্রক্রিয়াটাই এমন যে সেই ফল্ট বা চ্যুতিগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবেই সামলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণের ব্যবস্থা আছে। কিন্তু যখনই এ ধরনের ব্যাঘাত হিসাবের বাইরে চলে যায়, তখনই ‘ব্ল্যাকআউটের’ মতো ঘটনা ঘটে। এ জন্য আগে আমাদের বিদ্যুৎব্যবস্থার কারিগরি প্রক্রিয়াটা বোঝা দরকার।
বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য আমাদের জাতীয় গ্রিড একটা বিরাট নেটওয়ার্ক এবং এটাই দেশে একমাত্র নেটওয়ার্ক। যেখানে যা যা বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়, সব এই পাওয়ার গ্রিডে চলে আসে। এখান থেকে আবার কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনার সাহায্যে ব্যবস্থাটি ঠিক রাখা হয়। এখান থেকেই যা যা লোড, তা নেওয়া হয়। এই প্রক্রিয়ায় যখন পাওয়ার জেনারেশন ট্রিপ করে, তখন কোনো একটি মেশিন বন্ধ হতেই পারে। তখন ন্যাশনাল লোড ডেসপাস কর্তৃপক্ষ এটাকে ম্যানেজ করে। এ রকম করে বিদ্যুৎব্যবস্থাকে স্থিতিশীল রাখা হয়। বিদ্যুৎ ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় উৎপাদিত হলেও ন্যাশনাল গ্রিডের মধ্যে সেগুলোকে সমন্বিত করা হয়। এর মধ্যে জেনারেটরগুলোও সমন্বিত থাকে। যদি বড় বিভ্রাট হয়, তাহলে সেটার কাছাকাছি দু’টি জায়গা চিহ্নিত করে সমস্যার সমাধান করা হয়। বাকি গ্রিডকে সমস্যার বাইরে রাখা হয়।
যেখানে বিদ্যুতের চাহিদা দৈনিক ৬৭০০ মেগাওয়াট সেখানে ভারত থেকে মাত্র ৪৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির জন্য সারা দেশকে সাধারণভাবে ১০ ঘণ্টা এবং দেশের অর্ধেকেরও বেশি অঞ্চলকে কমপক্ষে ১৭ ঘণ্টা  বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় থাকতে হলো। কিশোর, যুবক, পৌঢ় এবং বৃদ্ধ নির্বিশেষে সকলে একবাক্যে বলছেন যে, তাদের সমগ্র জীবনে এমন ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিপর্যয় তারা দেখেননি বা শোনেননি। কিন্তু ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির খেসারত এভাবেই ১৬ কোটি মানুষকে দিতে হলো। জাতীয় জীবনে ১৬ কোটি মানুষের জন্য এর চেয়ে চরম পরিতাপের বিষয় আর কী হতে পারে?
২ ডিসেম্বর ২০১৪ সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু জানিয়েছেন, ১ নভেম্বর ২০১৪ সারা দেশে একযোগে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের পেছনে সুনির্দিষ্ট কোন কারণ খুঁজে পায়নি তদন্ত কমিটি। খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কমে যাওয়ায় এবং লোড ম্যানেজমেন্ট না থাকায় সারা দেশে ওই বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছিল । কায়কাউসের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি নির্ধারিত সময়ে ব্যর্থ হয়ে পঞ্চম কার্যদিবসে প্রাথমিক রিপোর্ট দেয়। প্রাথমিক রিপোর্টে বলা হয়, অভ্যন্তরীণ কারণেই বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটে। নির্দিষ্ট কারণ চিহ্নিত করা যায়নি। তদন্ত কমিটি প্রণীত সুপারিশমালা সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ করা হয়। সেখানে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী জানান, চাহিদা ও সরবরাহের সঙ্গে লোড ম্যানেজমেন্ট না থাকায় বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটেছিল। মূল কারণ হলো ‘অ্যাডজাস্টমেন্ট’ করতে পারেনি। ব্ল্যাকআউটের পর এখনও জাতীয় গ্রিড ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী। বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের উৎপত্তি বাংলাদেশে নাকি ভারত থেকে হয়েছিল-সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, লোড বেশি হওয়ায় আন্ডার ফ্রিকোয়েন্সির জন্য এ ঘটনা ঘটেছিল। চাহিদার সঙ্গে ভারসাম্য না থাকায় এ অবস্থার তৈরি হয়। তিনি বলেন, ঝুঁকি এড়াতে ফিডারের নির্দিষ্ট ও যৌক্তিক লোড অটোমেটিক কন্ট্রোল হবে। এই সমস্যাগুলো কিভাবে সমাধান করা যায়, সেজন্য আমাদের আরও আধুনিক হতে হবে। এজন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে পরিকল্পনা গ্রহণের সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। তবে এজন্য সময় লাগবে বলেও জানান তিনি।
এছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের বেশ কিছু পুরনো সিস্টেম রয়েছে, বেশ কিছুর ঘড়ির সময় জিপিএস’র সঙ্গে সিনক্রোনাইজ নেই। ফ্রিকোয়েন্সি আপ অ্যান্ড ডাউন হলে অনেক জায়গায় ম্যানুয়ালি ফোন দিয়ে কন্ট্রোল করতে হয়, সময়মতো বন্ধ না করলে ট্রিপ করে যায় বলেন প্রতিমন্ত্রী। পলিসি মিসটেকের কারণে বিপর্যয় ঘটেনি দাবি করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সময়ের কারণে বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। যত দ্রুত আমরা ডেভেলপ করেছি, তত দ্রুত আমরা পার্টিসিপেট করতে পারিনি। এখন আর বসে থাকার সময় নেই। আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, জাতীয় গ্রিড বিপর্যয়ের ঘটনা তদন্ত কমিটি ২২টি স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা এবং ১০টি মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশ করেছে। এ ঘটনার জন্য কাউকে দায়ী করা যাবে না উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ম্যানুয়ালি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার কারণে এমনটি হয়েছে। এ কারণে যারা ব্যবস্থাপনায় দায়িত্ব পালন করেন তারাও ঝুঁকির মধ্যে আছেন। (সূত্র: দৈনিক আমার দেশ ৩ ডিসেম্বর ২০১৪)
ভারতীয়পক্ষ থেকে যে বক্তব্য দেয়া হয়েছে সে বক্তব্যে ভারত ধোয়া তুলসী পাতা হিসেবে নিজেকে চিত্রিত করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের তরফ থেকে যেসব বক্তব্য দেয়া হয়েছে সেগুলো অত্যন্ত দ্ব্যর্থবোধক। তবে গভীর মনোযোগের সঙ্গে পড়লে মনে হয়, আসল কথাটি বলতে কোথায় যেন তাদের একটি সংকোচ রয়েছে। তারা সাহস করে সত্য কথা বলতে পারছেন না এবং না পেরে মনে হয় সব দোষ নিজেরাই নিজেদের ঘাড়ে নিয়েছেন।
কলকাতায় বিবিসি বাংলার সংবাদদাতা অমিতাভ ভট্টশালী এ ব্যাপারে জানান, ভারতের পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ১ নভেম্বর ভারতীয় সময় ১১টায় (বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ১১টায়) বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহের যে ভেড়ামারা-বহরমপুর লাইন রয়েছে-তার একটি লাইন ‘ট্রিপ’ করেছিল বা বসে গিয়েছিল। তবে ভারতীয় কর্মকর্তারা এটাও নিশ্চিত করেছেন যে, লাইন ‘ট্রিপ’ করার পরপরই দ্বিতীয় আরেকটি লাইন সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং বিদ্যুৎ সরবরাহে কোনো বিঘ্ন ঘটেনি। ভারতীয় অংশে বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত আছে। কিন্তু ভারতীয় অংশে লাইন ‘ট্রিপ’ করার কারণেই বাংলাদেশ অংশে বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটেছে কিনা-তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে ভারতীয় অংশে বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত আছে।
পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে যে পাওয়ার গ্রিড করপোরেশন তার চেয়ারম্যান আর এন নায়েক বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন যে, তাদের লাইনে কোনো সমস্যা হয়নি। তবে ভারতের পূর্বাঞ্চলে বিদ্যুৎ সঞ্চালন পরিচালনা করে যে ইস্টার্ন রিজিওনাল লোড ডেসপ্যাচ সেন্টার আরইআরএলডিসি, কলকাতায় তাদের কন্ট্রোল রুম থেকে জানানো হয়েছে, ইআরএলডিসি এই অঞ্চলের প্রতিটি বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনের ওপরে ২৪ ঘণ্টা নজর রাখে। বাংলাদেশের গ্রিড বিপর্যয় ভারতীয় গ্রিডের কারণে হয়নি বলেই দাবি পাওয়ার গ্রিড করপোরেশনের ওই শীর্ষ কর্তাদের। (সূত্র: দৈনিক ইনকিলাব ৩ নভেম্বর ২০১৪)
২  নভেম্বর ২০১৪ দৈনিক যুগান্তর-এ বলা হয়েছে, ‘…..নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশের বেশক’জন বিদ্যুৎ বিশেষজ্ঞ জানান, মোট সঞ্চালন লাইনের ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ যদি গ্রিডলাইনে না থাকে কিংবা হঠাৎ করে কমে যায় তাহলে গ্রিডের চাহিদায় ধস নামবে। আর সরাসরি এর প্রভাব গিয়ে পড়বে জাতীয় গ্রিডে। অনেকে ধারণা করছেন, ভারত থেকে আসা বিদ্যুতের ভোল্টেজ চাহিদার তুলনায় অনেক কম ছিল। যার কারণেই মূলত এই বিপর্যয় ঘটেছে।’
২  নভেম্বর ২০১৪ দৈনিক সমকালের খবরে প্রকাশ, ভারতের বহরমপুর থেকে বাংলাদেশের ভেড়ামারায় আমদানিকৃত বিদ্যুৎ আসার ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় ২ লাখ ৩০ হাজার ভোল্টেজ। কিন্তু প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ ভোল্টেজ না পাওয়ার কারণে বন্ধ রয়েছে ভেড়ামারার সাব-স্টেশন। তখন থেকেই জাতীয় গ্রিড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে ভারতীয় বিদ্যুৎ। এ সময় অটোমেটিক কায়দায় বাংলাদেশের সব বিদ্যুৎ কেন্দ্রই বন্ধ হয়ে যায়। অপর  একটি সূত্র বলেছে, ভারতীয় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশের সচল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোও এখন অচল হয়ে গেছে।
২০১৩ সালের ১ নবেম্বর দেশব্যাপী স্মরণকালের ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ঘটনায় ভারতীয় সঞ্চালন লাইনের ক্রটিকে দায়ী করেই তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে বুয়েট। যদিও ঐ ঘটনার পর বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ভারতীয় সঞ্চালন লাইনে কোন ত্রুটি ছিল না বলে প্রচার করা হয়েছিল। কিন্তু ঘটনার প্রায় সাড়ে ছয় মাস পরে বুয়েটের তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে ঐ ঘটনায় প্রচারিত সব তথ্যই ছিল ভুল। ভারত থেকে ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ আমদানির ক্ষেত্রে সরকারকে আরো বেশি সতর্ক হওয়ারও পরামর্শ দেয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।
দেশের স্মরণকালের বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের তদন্ত প্রতিবেদন বিদ্যুৎ বিভাগের নিকট জমা দিয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। ‘অ্যান অ্যানালাইসিস অব দ্য ব্ল্যাক আউট অব ১ নবেম্বর ২০১৪ বাংলাদেশ পাওয়ার সিস্টেম: কজ, ইফেক্ট অ্যান্ড রেমিডিস’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এস শাহনেওয়াজ।
এখানে উঠে এসেছে নানা তথ্য।  বিদ্যুৎ বিভাগের দুটি তদন্ত প্রতিবেদনেও ওই ঘটনার জন্য অভ্যন্তরীণ সরবরাহ ব্যবস্থার দুর্বলতাকে দায়ী করা হয়। কিন্তু পরে দেখা গেঝে সরকারের প্রচারিত ঐসব তথ্য ছিল ষোলআনাই ভুল। ভারতের সঞ্চালন লাইনের ক্রটির কারণেই মূলত বাংলাদেশে ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছিল।
বুয়েটের তদন্ত প্রতিবেদনে আরো বলা  হয়, ঐ দিনের বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে প্রথমে ভারত থেকে আসা সরবরাহ লাইনে বিপর্যয় ঘটে। এর প্রভাবে ভেঙে পড়ে (ট্রিপ) ভেড়ামারা বিদ্যুৎকন্দ্রের সরবরাহ ব্যবস্থা। ১০ সেকেন্ডের মধ্যে ব্যাকআপ ব্যবস্থা কাজ না করায় বিপর্যয় দেখা দেয় জাতীয় গ্রিডেও। ফলে ব্ল্যাক আউটে চলে যায় পুরো দেশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৪ সালের ১ নবেম্বর ভারত থেকে ৪৪৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছিল। সঞ্চালন লাইনের সার্কিট ব্রেকারে ক্রটি দেখা দিলে বেলা ১১টা ২৭ মিনিট ২৮ সেকেন্ডে ভারত-বাংলাদেশ বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায়। পিক আওয়ারে এ ঘটনা ঘটায় চাপ পড়ে ওই এলাকা-সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থায়। ২ সেকেন্ডের মধ্যে ট্রিপ করে ভেড়ামারা কেন্দ্রের ২৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ। একে একে সব লাইন ট্রিপ করায় সারা দেশের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ৩০ মিনিটের মধ্যে সারা দেশ ব্ল্যাক আউটে চলে যায়।
বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারিগরি ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে অধ্যাপক শাহনেওয়াজ বলেন, ২০০৭ সালেও একবার জাতীয় গ্রিড বিপর্যয় হয়। তবে সেবার ব্ল্যাক আউট হয়নি। কারণ বিপর্যয় হয়েছিল অফ পিক আওয়ারে। কিন্তু এবার পিক আওয়ারে বিপর্যয় দেখা দেয়ায় দ্রুত তা ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইঞ্জিন তুলনামূলক কম ক্ষমতাসম্পন্ন হওয়ায় গ্রিড বিপর্যয় ত্বরান্বিত হয়েছে।
এদিকে বেশকিছু সুপারিশও তুলে ধরা হয়েছে বুয়েটের প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, ভবিষ্যতে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে হাইড্রো পাওয়ার আমদানির পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ। এতে ভবিষ্যতে সঞ্চালন লাইনে ক্রটি ও তার পভাবে এ ধরনের বিপর্যয় হতে পারে। এছাড়া ভারত থেকে বিদ্যুৎ আনার ক্ষেত্রেও এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে পারে। তাই আগে থেকেই এ বিষয়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। (সূত্র: দৈনিক সংগ্রাম ১৭ এপ্রিল ২০১৫)
সত্তরের ঘূর্ণিঝড়ের পর আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী লিখেছিলেন, শুধু শোকসভা তারই নাম আজ বাংলাদেশ/বাংলা তোমার শোকের নেইকো শেষ। সেই দুর্যোগের জন্য তিনি পাকিস্তানিদের অভিযুক্ত করেছিলেন। আজ সুন্দরবন ধ্বংসের আমরা কাদের অভিযুক্ত করব? এই সুন্দরবন  উপকূলের কিংবা কূলের লাখ লাখ মানুষকে বাঁচায়।