Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

jamalpurখোলা বাজার২৪, শনিবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬:  জামালপুরের সরিষাবাড়ী প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে সীমাহীন দুর্নীতির মহোৎসব চলছে। টাকা ছাড়া কোন ফাইল নড়ে না উপজেলা শিক্ষা অফিসে। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফেরদৌস ও সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ রোকনুজ্জামান যোগসাজশে বদলি বানিজ্য, ভূয়া বিল-ভাউচারে অর্থ আত্মসাৎ, শিক্ষক হয়রানীসহ নানা অনিয়ম করে আসছেন বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা।

শিক্ষা অফিস সুত্র জানায়, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফেরদৌস নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলা থেকে গত বছরের ২১ জানুয়ারি সরিষাবাড়ীতে যোগদান করেন। তারপর থেকেই এ উপজেলায় প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তরে নানা অনিয়ম শুরু হয়।

উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি সোহরাব আকন্দ ও সাধারন সম্পাদক নিয়ামুন নাসির ভুঁইয়া জানান, ‘শিক্ষক বদলি বানিজ্য ও প্রতি পরীক্ষার ফি থেকে ভূয়া বিল-ভাউচারে শিক্ষা কর্মকর্তা লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। সামান্য কাজেও টাকা ছাড়া এ অফিসে কোন ফাইল নড়চড় হয় না। এখানে শিক্ষক হয়রানীর ঘটনা নিত্যদিনের ব্যাপার।’ এদিকে ৩০০ শিক্ষক নতুন জাতীয় স্কেলের আওতায় বর্ধিত সুবিধা পাওয়ার যোগ্য হলেও টাকার বিনিময়ে মাত্র ১৪ জনকে এ সুবিধা দেওয়া হয়েছে বলেও তারা অভিযোগ করেন।

জানা গেছে, জানুয়ারি ও মার্চ মাসের শিক্ষা কমিটির বৈঠকে ৪৩ জন শিক্ষকের বদলির আবেদন পাস হয়। নিয়মানুযায়ী সবগুলো বদলির আবেদন একত্রে শিক্ষা কমিটির বৈঠকে পাস করে একই কার্যবিবরনীতে সেগুলো জেলা শিক্ষা অফিসে পাঠানোর নিয়ম থাকলেও তা না করে পৃথকভাবে প্রেরন করা হয়। এক্ষেত্রে শিক্ষা কর্মকর্তা প্রত্যেকের কাছ থেকে ১০-৩০ হাজার টাকা আদায় করেন। শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সহকারী শিক্ষক জাহিদুল ইসলামকে চর সরিষাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ও মো. রোকনুজ্জামানকে ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে মাজালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলির জন্য ৩০ হাজার টাকা করে এবং মমিনুল ইসলাম তারাকে শিশুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ডোয়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি বাবদ ১০ হাজার টাকা নেওয়া হয়। এভাবে সবগুলো শিক্ষক বদলি বাবদ শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফেরদৌস ১০ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে শিক্ষকরা জানান।

এদিকে পনেরশ’ প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রকল্পে ডেপুটেশনে শিক্ষক বদলির নিয়ম থাকলেও তা না করে মহাদান পুষ্প-পপি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কামরাবাদ আব্দুল মালেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাত্র তিনজনের মধ্যে দুইজন করে শিক্ষককে উৎকোচের বিনিময়ে সরাসরি অন্যত্র বদলি করেন শিক্ষা কর্মকর্তা। কামরাবাদ আব্দুল মালেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিয়ামুন নাসির মিন্টু বলেন, ‘মাত্র তিনজন শিক্ষকের মধ্যে দুইজনকেই বদলি করায় বিদ্যালয়ে লেখাপাড়ার পরিবেশ নাই। নানা সমস্যা বিরাজ করছে।’

অপর এক অভিযোগে প্রকাশ, তারাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা সুরাইয়া আক্তার মীরা গত ১৬ মার্চ মেডিকেল ছুটির আবেদন করে ঢাকায় তার স্বামীর কর্মস্থলে বেড়াতে যান। সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ রোকনুজ্জামান উৎকোচের বিনিময়ে ওই শিক্ষিকাকে নিয়মিত উপস্থিতি দেখাতে ছুটির আবেদনটি গোপন করেন। পরে শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফেরদৌস সুরাইয়া আক্তার মীরাকে ৩০ মার্চ তার অনুপস্থিতিতেই তারাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বাটিকামারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করেন। ছুটিকালীন কোন শিক্ষককে বদলি করার নিয়ম না থাকলেও সুরাইয়া আক্তার মীরাকে সরিয়ে ওই পদে অন্য একজনকে উৎকোচের বিনিময়ে যোগদান করানো হয় বলে অভিযোগ ওঠে। সুরাইয়া আক্তার মীরা স্বামীর কর্মস্থল থেকে ফিরে বিষয়টি জানতে পারলে শিক্ষা অফিসে তোলপাড় শুরু হয়। পরে বাধ্য হয়ে শিক্ষা কর্মকর্তা তাকে স্বপদে বহাল রাখেন।

সব অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফেরদৌস বলেন, ‘অফিসে কোন অনিয়ম হয়েছে কী-না তা জানা নাই। আমি যা করেছি, নিয়ম মেনেই করেছি। আর বদলির বিষয়ে আমার কোন হাত নাই, শিক্ষা কমিটিই সব করে।’

এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল আলীম বলেন, ‘বিষয়গুলো আমার জানা নাই। যদি বদলি বানিজ্য হয়ে থাকে তাহলেতো জানিয়ে করবে না। এ বিষয় নিয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাই ভাল বলতে পারবে।’