খোলা বাজার২৪,শনিবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬: লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা নদীর তীর ঘেষে প্রত্যন্ত এক পল্লী এলাকার নিজ গড্ডিমারী গ্রামে একই পরিবারে ৫ সন্তানের মধ্যে ৪টি সস্তানই শারীরিক প্রতিবন্ধী (বামন) মানবেতর জীবন যাপনের মাঝেও উচ্চ শিক্ষা অর্জনসহ জীবন যুদ্ধে এগিয়ে চলছে।
বাবা-মা দুজনেই স্বাভাবিক হলেও ছেলে মেয়েদের মধ্যে দুই ভাই শাহ আলম ও কাবেল মিয়া এবং দুই বোন ফরিদা আক্তার ও রাশেদা খাতুন জন্মগত ভাবেই শারীরিক প্রতিবন্ধী বামনরুপে বেড়ে উঠেছে। উপজেলার নিজ গড্ডিমারী গ্রামের সোলেমান আলী ও স্ত্রী মোছাঃ সাহেরা বানু উভয়ে উচু লম্বায় স্বাভাবিক হলেও তাদের দাম্পত্য জীবনে একে একে ৫টি সন্তানের বাবা-মা হন। দুঃখের বিষয় প্রকৃতির নিশানা ৫ ছেলে-মেয়ের মধ্যে ১টি মেজো মেয়ে মোছাঃ মরিয়ম নেছা (২১) উচু লম্বায় স্বাভাবিক হওয়ায় গত প্রায় ৭ বৎসর পূর্বে ধার দেনা করে পার্শবর্তী উপজেলা পাটগ্রাম এলাকায় পাত্রস্থ করেছে। অপর শারীরিক প্রতিবন্ধী বামন ৪টি সন্তানকে ঘিরে সমাজে বিভিন্ন আলোচনা সমালোচনা আর ব্যঙ্গ তিরস্কারের মাঝে শত দুঃখ কষ্টে জীবন যুদ্ধে এগিয়ে যাচ্ছে সোলেমান। সরেজমিনে দেখা যায় বামন হয়েও লেখা পড়ায় পিছিয়ে নেই ছোট মেয়ে মোছাঃ রাশেদা খাতুন (১৯) উচু লম্বায় আড়াই ফিট শারীরিক গঠনও ভাল জ্ঞান বুদ্ধি আর দশ জনের চেয়ে কম নয়। চলতি ২০১৬ ইং সালে অনুষ্ঠিত এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ হয়। অপর দিকে বড় মেয়ে মোছাঃ ফরিদা আক্তার (২৬) বাবার সংসারে বোঝা না হয়ে এনজিও থেকে টাকা ঋণ নিয়ে গড্ডিমারী এলাকায় অবস্থিত তালেব মোড়স্থ বাজারে একটি মুদি দোকান দিয়েছে। বাড়ী থেকে প্রায় ৫ শত গজ দূরত্ব হলেও ভ্যান গাড়ীতে চলে প্রতিদিন সকালে দোকানে আসে এবং সারাদিন বেচা-কেনা শেষে সন্ধ্যা বেলা আবার ভ্যান যোগে বাড়ীতে ফিরে। দোকান থেকে যা আয় তা দিয়ে দরিদ্র বাবার সংসার চালায় এবং নিজ নামীয় প্রতিবন্ধী ভাতা দিয়ে ছোট ভাই শাহ আলম ও বোন রাশেদার লেখা-পড়ার খরচ চালায়। ফরিদা আক্তার জানায় আমার জ্ঞান হওয়ার পর থেকে মনে করছি আমি একজন প্রতিবন্ধী সমাজের লোকজন আমাকে তিরস্কার ব্যঙ্গ করে কথা বলে- জীবনে আমার বিয়ে হবে না। অপর দিকে বাবাও বৃদ্ধ হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় আমি কারও বোঝা হয়ে না থেকে বে-সরাকারী সংস্থা এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে মুদি দোকান চালু করেছি। এমনিতে উচু লম্বায় আড়াই ফুট শরীর ভারী হওয়ার কারণে বেশীক্ষন দাঁড়াতে এবং পায়ে হেটে চলাফেরা করতে পারি না। তাই আমার চেলাফেরার একমাত্র বাহন ভ্যান। ভ্যানে চরে নিয়মিত দোকানে যাতায়াত করি। অপর দিকে ছোট ভাই শাহ আলম বামন হলেও শারীরিক গঠনে স্বাভাবিক ও বুদ্ধিমান তাই বিয়ে করেন স্বাভাবিক মেয়েকে। এখন সে পেশায় জেলে, সংসারে তার ২ ছেলে ১ মেয়ে সন্তানরা তাদের মত না হয়ে স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে উঠছে। শাহ আলমে স্ত্রী রাহেলা খাতুন জানায় আমার স্বামী প্রতিবন্ধী (বামন) হলেও আমার কোন দুঃখ নেই। তার উপার্জনে কষ্ট দুঃখে সংসার চলে আসছে। অপর দিকে রাদেশা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পেরিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক এগিয়ে আছে। ভবিষ্যতে তার প্রত্যাশা উচ্চ শিক্ষা অর্জন শেষে সরকারী চাকুরী করার স্বপ্ন দেখছে। তেমনি কনিষ্ঠ ভাই কাবেল মিয়া জানায় বামন হয়ে জন্ম নিয়েছি দু’বেলা ঠিকমত খেতে পারিনা। আমাদের এ প্রতিবন্ধী পরিবারটির জন্য কেউ এগিয়ে আসেনা। সবাই উপহাস ব্যঙ্গ করে এজন্য আমি পড়া লেখার মাঝে বিভিন্ন হকারের সাথে গানের জোকারী করি। জীবন যুদ্ধে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। বর্তমান গড্ডিমারী উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণীতে অধ্যায়নরত লেখা পড়ার ফাঁকে বিভিন্ন জেলার গিয়ে গান গেয়ে উপার্জন করে সংসারে যোগান দিচ্ছি। পরিশেষে সোলেমান আলী ও স্ত্রী মোছাঃ সাহেরা বানু ইঘঝ প্রতিনিধি কে জানান, সাবেক চেয়ারম্যান জালাল উদ্নি বুলু এক মেয়ের নামে প্রতিবন্ধি ভাতা করে দিয়েছে। আমার ২ ছেলে ও ২ মেয়েকে আল্লাহ পাক প্রতিবন্ধী (বামনরুপে) পাঠিয়েছেন। এই পরিবারে কেহই দৃষ্টি না দিলেও দুঃখে সুখে সংসার আল্লাহ চালায় এবং ভবিষ্যতেও চালাবে। অপর দিকে গড্ডিমারী ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করা হলে ইউপি চেয়ারম্যান ডাঃ আতিয়ার রহমান জানান, প্রতিবন্ধি পরিবারটির প্রতি আমার সুদৃষ্টি আছে আমি যতটুকু পারি তাদের ভবিষ্যত উন্নয়নে চেষ্টা চালিয়ে যাব।