Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

22খোলা বাজার২৪, শনিবার, ৫ নভেম্বর ২০১৬ :
সরিষাবাড়ী (জামালপুর) : সবাই যেখানে নিজেদের স্বাভাবিক উচ্চতা ও শারীরিক সৌন্দর্যের গর্বে থাকেন পঞ্চমুখ; সেখানে ক্ষুদ্রাকার শারীরিক গড়নেই প্রাত্যহিক কাজে ব্যস্ত সময় কাটায় সীমা খাতুন (১৫)। মাত্র ৩৬ ইঞ্চি উচ্চতার মেয়ে সীমা খাতুন এ বছর জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার পিংনা ইউনিয়নের পিংনা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী সে।
সীমার বাবা শফিকুল ইসলাম পেশায় কৃষক। নিজের সামান্য কিছুসহ অন্যের জমি বর্গা চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। যমুনা নদীর ওপারে গভীর চরাঞ্চল পিংনা ইউনিয়নের নলসোন্ধা চরে স্ত্রী, দুই ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে বসবাস তার। সীমার পারিবারিক সুত্র জানায়, অন্যান্য শিশুর স্বাভাবিক গড়নের চেয়ে অনেক ক্ষুদ্রাকার শরীর নিয়ে জন্ম হয় তার। বর্তমানে তার দৈহিক উচ্চতা মাত্র ৩৬ ইঞ্চি। নলসোন্ধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা উত্তীর্ণ হয়ে পিংনা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হয় সে। আর পিংনা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে জেএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে এবার।

বৃহষ্পতিবার দুপুর ১২.০৫টায় পরীক্ষার কেন্দ্রে ১৬নং কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, পরীক্ষার নির্ধারিত দুই ঘন্টা সময়ের পর বাড়তি সুবিধা (প্রতিবন্ধী কোটা) হিসেবে তাকে ২০ মিনিট সময় দেয় কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। এ সময় তাকে ইংরেজি ১ম পত্র পরীক্ষায় গভীর মনোযোগে প্রশ্নের উত্তর লেখতে দেখা যায়। অন্যদের তুলনায় অত্যন্ত ঝকঝকে ও সুন্দর তার হাতের লেখা। সময় শেষ হওয়ার ১০ মিনিট আগে প্রশ্নোত্তরগুলো পুনরায় মিলিয়ে কক্ষ পরিদর্শকের কাছে উত্তরপত্র জমা দিয়ে শান্তভাবে বাইরে বেরিয়ে যায় সে।
কেন্দ্র সচিব খন্দকার নাসির উদ্দিন জানান, ‘সীমা খাতুন অন্যান্য পরীক্ষার্থীদের চেয়ে অনেকটা শান্ত ও মনোযোগী। তাকে পরীক্ষার হলে সময় নষ্ট করতে দেখা যায়নি। নির্বিঘেœ তার পরীক্ষা সম্পাদনে সব ধরনের (প্রতিবন্ধী সুবিধা) ব্যবস্থা করা হয়েছে।’ পিংনা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘সীমা অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রী। সে সব সময় শান্ত ও পরিপাটি হয়ে চলাফেরা করে। তার জন্য ৭ম শ্রেণি থেকে সম্পূর্ণ বিনা বেতন ও ফ্রি ফরম ফিলাপের ব্যবস্থা করেছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।’
সীমা খাতুন জানায়, ‘প্রায় ১০ কিলোমিটার পায়ে হেটে ও নদী পেরিয়ে গভীর চরাঞ্চল থেকে প্রতিদিন তাকে বিদ্যালয়ে যেতে হয়। এ জন্য বিদ্যালয় শুরুর ২ ঘন্টা আগেই বাড়ি থেকে বের হতে হয়। শুকনো মওসুমে প্রচন্দ রোদ ও গরম বালুতে হেটে এবং বর্ষাকালে বন্যার পানি পেরিয়ে বিদ্যালয়ে যেতে তার অনেক কষ্ট হয়।’ সীমা খাতুনের দাবি, ‘বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বা সরকারি-বেসরকারী উদ্যোগে বিদ্যালয়ের কাছাকাছি কোথাও তার থাকার ব্যবস্থা করা হোক।’ পড়াশোনা করে অনেক বড় হওয়া তার স্বপ্ন বলে সে সাংবাদিকদের জানায়।

সীমা খাতুনের বাবা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মেয়ে ক্ষুদ্রাকার বলে তার কোন দুঃখ নেই। বাবা-মায়ের বড় সন্তান সীমা তার কাছে অন্য সন্তানদের মতোই। তবে সামান্য কৃষি কাজ করে বড় সংসারের হাল টানতে তার খুব কষ্ট হয়। মেয়ের জন্য সরকারি কোন সহায়তা পেলে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করা তার স্বপ্ন।’ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কয়েকবার প্রতিবন্ধী তালিকায় তার নাম লেখা হলেও কোন সহায়তা মেলেনি বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
এ ব্যাপারে পিংনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খন্দকার মোতাহার হোসেন জয় বলেন, ‘বিষয়টি জানা ছিল না, কয়েকদিন আগেই শুনেছি। মেয়েটি সম্পর্কে বিস্তারিত খোজ-খবর নিয়ে শীঘ্রই যাবতীয় সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইয়েদ এজেড মোরশেদ আলী বলেন, ‘এ ব্যাপারে খোজ-খবর নিচ্ছি, তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।’