খোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ৮ নভেম্বর ২০১৬: বিশ্লেষকদের মূল্যায়ন-এর শেষ পর্ব আজ। আমরা কথা বলেছি সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও বিশ্লেষক আবুল হাসান চৌধুরী’র সঙ্গে। বহুল আলোচিত ওই নির্বাচন কেবল যুক্তরাষ্ট্রই নয়, সারা দুনিয়ার জন্য গভীর চিন্তার বিষয় বলে মনে করেন তিনি। ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন এবং রিপাবলিকান পার্টির ডনাল্ড ট্রাম্পের তুলনামূলক বিশ্লেষণও করেছেন তিনি। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ইতিহাস থেকে শুরু করে বর্তমান বাস্তবতাও স্থান পেয়েছে তার মূল্যায়নে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে নিক্সন-কিসিঞ্জারের ঘৃণ্য ব্যবহার আমাদের মনকে ভারাক্রান্ত করে। ঠিক তেমনি ওই সময়ে সিনেটর কেনেডিসহ অসংখ্য রাজনীতিবিদ, কংগ্রেসম্যান, শিক্ষাবিদ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এমনকি কর্পোরেট ওয়ার্ল্ডের প্রতিনিধিরাও বাংলাদেশকে সমর্থন করেছিলেন। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ মর্মে একটি ঘোষণা দেন। যা পরবর্তীতে বহির্বিশ্বের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের মূলনীতি হিসেবে রূপান্তর করেন। বঙ্গবন্ধুর আমলেই সিনেটর কেনেডি ঢাকায় আসেন। একটি আত্মমর্যাদাসম্পন্ন দেশ হিসেবে আমাদের গৌবর অক্ষুণœ রেখেই বঙ্গবন্ধু সেদিন আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে যে প্রত্যাশা দেখানো হয় তার প্রতি আন্তরিকভাবে এগিয়ে যান। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক বহুমাত্রিক। আমরা বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল বা এমডিজি’র লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছি। এটি এশিয়ার অন্য কোনো দেশ অর্জন করতে পারেনি। আমাদের এই অর্জন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্ব দরবারে নন্দিত হয়েছে। একই সঙ্গে শান্তিরক্ষা বাহিনীতে আমাদের অংশগ্রহণ, শুধুমাত্র সংখ্যার বিচারে নয়, আমাদের সামরিক বাহিনীর সদস্যদের শৃঙ্খলাবোধ ও সাহসিকতা বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। একই সঙ্গে আমাদের তৈরি পোশাক শিল্পের বৃহৎ অংশ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা হয়। আমার প্রত্যাশা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের জিএসপি সুবিধা এবং শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার দেয়ার বিষয়টি দেশটির নতুন নেতৃত্ব অত্যন্ত ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখবেন। আমার বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি এবং শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশই নাম্বার ওয়ান বা প্রথম দাবিদার দেশ।
হিলারি ক্লিনটন দীর্ঘ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন রাজনীতিবিদ। পথ পরিক্রমায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভুল সিদ্ধান্ত যেমন- ইরাক আক্রমণ, লিবিয়ায় বোমাবর্ষণের মতো ঘটনা তাকে বিতর্কিত করেছে। তারপরও একজন মেধাসম্পন্ন এবং আজকের বিশ্বায়িত পৃথিবীর নানা জটিলতা নিয়ে একেবারে প্রথম সারিতে থাকা চিন্তাশীল সক্রিয় অংশগ্রহণকারীদের অন্যতম তিনি। একটি কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় হিলারি রেকলেস বা বেপরোয়া হবেন না। অন্যদিকে ট্রাম্প মুসলিমবিদ্বেষী, স্প্যানিশ বিদ্বেষী, নারী বিদ্বেষী এবং হোয়াইট সুপ্রিমেসিস্ট (সর্বক্ষেত্রে শ্বেতাঙ্গদের শ্রেষ্ঠত্বে বিশ্বাসী)। আরেকটি কথা বলতে হয় তা হলো- ট্রাম্প রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ এবং দৃশ্যমানভাবে তিনি কট্টরপন্থি। সার্বিক বিবেচনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এবারের নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি পৃথিবীর জন্য গভীরভাবে চিন্তার বিষয়। মানবজমিন