Sat. Mar 15th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

17খোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ১৫ নভেম্বর ২০১৬:
আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নরসিংদীর রায়পুরার চরাঞ্চল নীলক্ষায় দুইদল গ্রামবাসীর মধ্যে ভয়ানক টেঁটাযুদ্ধ সংঘঠিত হয়েছে। পুলিশ ও ৭টি গ্রামের দুইদল গ্রামবাসীর ত্রিমুখী সংঘর্ষে ৪ জন নিহত হয়েছে। গুলি ও প্রতিপক্ষের টেটার আঘাতে আহত হয়েছে রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা,তিন এস আই ও দুই কন্সস্টেবল সহ কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছে। আটক করা হয়েছে ১৩ টেটাঁবাজকে ।

আজ সোমবার দুপুরে জেলার রায়পুরা উপজেলার নিলক্ষায় হরিপুর, আমিরাবাদ, সোনাকান্দি, বীরগাও এলাকায় এই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। গুরুত্বর আহতবস্থায় ওসি আজাহারকে ঢাকায় প্রেরন করা হয়েছে। গ্রেপ্তার এড়াতে ঘটনার পর থেকে পুরুষ শূন্য হয়ে পরে বেশ কয়েকটি গ্রাম।
গুলিবৃদ্ধ হয়ে নিহতরা হলেন, আমিরাবাদ গ্রামের মৃত আলতু মিয়ার ছেলে মানিক মিয়া (৫৫) সোনাকান্দি গ্রামের মরফত আলীর ছেলে খোকন মিয়া (৩৫) একই গ্রামের মঙ্গল মিয়ার ছেলে মামুন (২৩), সালামত মিয়ার ছেলে শাহজাহান (৪০)। নিহততরা সকলেই সাবেক চেয়ারম্যান হক সরকারের সমর্থক বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
আহত পুলিশ সদস্যরা হলো- রায়পুরা থানার ওসি আজহার উদ্দিন, রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজহারুল ইসলাম সরকার, উপ-পরিদর্শক আসাদ মিয়া, মোজাম্মেল হক, জিয়াউর রহমান ও কনস্টেবল জিল্লুর রহমান।

পুলিশ ও এলকাবাসী জানায়, রায়পুরা উপজেলার নিলক্ষা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতিক নিয়ে নির্বাচন করেন মোঃ তাজুল ইসলাম। আনারস প্রতিক আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্ধন্ধিতা করেন তৎকালিন চেয়ারম্যান আব্দুল হক সরকার। নির্বাচনে মোঃ তাজুল ইসলাম বিজয়ী হয়। এর পর থেকে এলাকার নিয়ন্ত্রন ও আধিপত্ব্য বিস্তারকে কেন্ত্র করে বিজয়ী চেয়ারম্যান ও পারজিত চেয়ারম্যান সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা ও সংঘর্ষে শুরু হয়। গত সাত মাসে দফায় দফায় কমপক্ষে ১৫ বার সংঘর্ষে লিপ্ত হয় দুই প্রতিদন্ধি প্রার্থীর সমর্থকরা। এতে কমবেশি তিন শতাধিক লোক হতাহত হয়। ভাংচুর করা হয় শতাধিক বাড়িঘর।

লুট করা হয় গোয়ালের গরু,ধান সহ বিভিন্ন মূল্যবান জিনিসপত্র। ক্ষয় ক্ষতি হয় কোটি টাকার মালামাল। এসব ঘটনায় সাবেক চেয়ারম্যন আব্দুল হক সরকার গ্রেপ্তার করে জেলা হাজতে প্রেরন করেন পুলিশ। শুরু হয় পুলিশের সারাশি অভিযান। উদ্ধার হয় টেঁটা,বল্লম সহ দেশেীয় অস্ত্র-সস্ত্র। পুলিশের বিশেষ তৎপরতায় সাময়িক ভাবে বন্ধ হয় গ্রামবাসীর সংঘর্ষ। অতিসম্প্রতি সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হক সরকারের সমর্থক শহীদ হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন। এর পর থেকে প্রতিপক্ষের উপর প্রতিশোধ নেয়ার জন্য সংঘবদ্ধ হতে শুরু করেন। এ নিয়ে এলকায় উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এরই মধ্যে গত শনিবার সকালে দুই পক্ষের সমর্থকরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। ৩দিন যাবৎ দফায় দফায় চলতে থাকে সংঘর্ষ। গত দুই দিনের সংঘর্ষে উভয় পক্ষের প্রায় শতাধিক লোক আহত হয়। অর্ধশতাধিক বাড়িঘর ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয় । পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে এলকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সর্বশেষ সোমবার সকালে দুই পক্ষ পুনারায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে চেষ্টা চালায়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হুমায়ন কবিরের উপস্থিতিতে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়ে। এসময় উত্তেজিত গ্রামবাসী পুলিশের উপর ককটেল ও টেটা নিক্ষেপ শুরু করেন। এসময় পুলিশ ও গ্রামবাসী ত্রিমূখী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের বাহিরে চলে গেলে পুলিশ টিয়ার সেল,রাবারবুলেট ,সাউন্ড গ্যানেড ও শটগানের গুলি সহ প্রায় তিন শতাধিক গুলি ছুড়েন। এতে ককটেলের স্প্রিন্টারে আহত হয় রায়পুরা থানার ওসি আজহার উদ্দিন। টেটা বিদ্ধ হয় রায়পুরা থানার এসআই আসাদ। গুরুত্র আহত হয় এস আই জিয়া,তোফাজ্জল ও ২জন কনস্টেবল সহ উভয় পক্ষের ৫০ জন আহত হয়েছে। পরিস্থতি নিয়ন্ত্রনের বাহিরে চলে গেলে নরসিংদী থেকে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা চালায়। আহতদের উদ্ধার করে রায়পুরা,ভৈরব,নরসিংদী ও পার্শ্ববর্তী বি-বাড়িয়া জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহত পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে ভর্তি করেন। এদের মধ্যে রায়পুরা থানার ওসি আজহার উদ্দিনকে ঢাকায় প্রেরন করা হয়। খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান পুলিশ সুপার আমেনা বেগম,জেলা প্রশাসক আবুহেনা মোরশেদ জামান,অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাসিবুল আলম,এএসপি হেটকোয়াটার রেজুয়ান চৌধুরী, গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা সাইদুর রহমান,সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা।
সরেজমিন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নিলক্ষা ইউনিয়নের হরিপুর এলাকায় বাতাসে ভেসে আসছে পোড়া গন্ধ। একটু সামনে এগুতেই দেখা গেল পোড়া বাড়ির দৃশ্য। ঘরগুলোর ভিতরে কিছুই নেই শুধু পোড়া কাঠ, কয়লা আর ছাই। টিন গুলিও পুড়তে পুড়তে ভঙ্গুর হয়ে দলা-মোচরা হয়ে গেছে। ঘরে আগুন দেওয়ার পূর্বে ইচ্ছেমত লুটপাট চালিয়েছে দস্যুরা। যতই সামনে যাওয়া যায় ততই বাড়তে থাকে পোড়া বাড়ির দৃশ্য। বাড়ির সামনে খড়ের পাড়ায় দাও দাও করে আগুন জ্বলছে। বাড়ির মোটা লোহার গ্রীল ভেঙ্গে বাহিরে ফেলে রাখা হয়েছে। ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে ঘরের দেয়াল তারপর দেয়া হয়েছে আগুন।
হরিপুর ,গোপিনাথপুর,কান্দাপাড় ও বীরগাও সহ মোট চারটি গ্রামের কয়েক হাজার লোক ককটেল,টেটা বল্লম সহ দেশীয় অস্ত্র-স্ত্র নিয়ে সম্মুখ যুদ্ধে লিপ্ত হয়। একর পর এক টেটা ছুড়ে মারা হচ্ছে প্রতিপক্ষের দিকে।
ঘটনাস্থল থেকে এ এস পি সার্কেল মোঃ বশির উদ্দিন বলেন, প্রায় ৭টি গ্রামের লোকজন সংঘবদ্ধ হয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আননে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পরিস্থিতি ও জান-মাল নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা চালাই। গ্রামবাসী আমাদের উপর হামালা চালায়। এতে ওসি সহ ৬ পুলিশ সদস্য আহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে টিয়ার সেল,রাবারবুলেট ,সাউন্ড গ্যানেড ও শটগানের গুলি সহ প্রায় তিন শতাধিক গুলি ছুড়েন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাসিবুল আলম বলেন, আধিপত্ত্ব বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। তাদের বিরোধ নিস্পতির পুই পক্ষের নেতাদের সাথে আলোচনা চলছিল। এর মধ্যে তাদের সমর্থকরা পুনরায় সমর্থকরা সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। পুলিশ বাধা দিলে তারা পুলিশের উপর হামলা চালায়। পরস্থিতি নিয়ন্ত্রন করতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে ১৩ জনকে। এসব ঘটনায় থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
পুলিশ সুপার আমেনা বেগম বলেন,সংঘর্ষে ৪ জন নিহত হয়েছে। এদর মধ্যে এক জনের মৃত দেহ আমরা পেয়েছি।