Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার২৪, বুধবার, ২১ ডিসেম্বর ২০১৬: 43 প্রশাসনের নাকের ডগায় সরকারি স্কুলে ষষ্ঠ ও নবম শ্রেণিতে ভর্তির পূর্বে রমরমা প্রাইভেট বানিজ্য। জন প্রতি ১৫দিনে ৩০০০ হাজার টাকা করে দিতে হচ্ছে অভিভাবকদের। অভিভাবকদের একটিই ভয় তাদের কাছে প্রাইভেট না পড়ালে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারবে না। এই দুর্বলতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণির শিক্ষক-ছাত্র প্রাইভেট ও কোচিং বানিজ্য খুলে বসেছে। বিষয়টি নিয়ে দৈনিক সভ্যতার আলো পত্রিকায় সংবাদ ছাপানোর পরেও কিভাবে দেদারছে চলছে রমরমা প্রাইভেট বানিজ্য সে নিয়ে হতাশ স্থানীয় পাঠক। পাঠকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। পত্রিকায় দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে সংবাদ আসার পরও কেন কোন কর্যকরি পদক্ষেপ নেন না প্রশাসন? জেলা শহরের একমাত্র সরকারি দুটি স্কুলে শিক্ষক স্বল্পতা দীর্ঘদিন ধরে। দুটো স্কুলেই ৫০জন করে শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও আছে ২৫জন করে। অর্ধেকের বেশী শিক্ষক কম। যেখানে ৫০ জন শিক্ষক কর্মরত থাকলেও পাঠদান কর্মসূচি পরিচালিত করতে সমস্যা হয় সেখানে ৫০জন শিক্ষকের পাঠদান ২৫জন শিক্ষক কিভাবে করবে? ফলে শিক্ষা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যহত হচ্ছে একমাত্র সরকারি দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। ফলে ক্লাসে পাঠদানের পরিবর্তে প্রাইভেট কোচিংয়ে ঝুকছে শিক্ষকগণ। ছাত্র-ছাত্রীরাও যেহেতু স্কুলে পাঠদান হয় না সেহেতু প্রাইভেট পড়ার উপরই নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে।
সরকারি বেসরকারি স্কুলগুলোর শিক্ষকদের প্রাইভেট বানিজ্য বন্ধ করতে না পারলে শিক্ষা ব্যহত হবে। মুন্সীগঞ্জে শিক্ষার মান দিন দিন কমে যাচ্ছে। প্রাইভেট পড়ার উপর নির্ভর করছে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া।
এছাড়া উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, রনছ স্কুল, মুন্সীগঞ্জ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় শিক্ষকগণও পিছিয়ে নেই। তাদের বাড়িতেও দেখা যায় একেকটি মিনি স্কুল। একজন শিক্ষক যেখানে ৩০জন ছাত্র-ছাত্রীকে ক্লাসে পাঠদান করাতে ব্যর্থ হন সেখানে প্রাইভেট বা তার কোচিং সেন্টারে ৫০-৬০জনের ব্যাচ প্রাইভেট পড়াতে তাকে বেগ পেতে হয় না। শিক্ষকগণ ইচ্ছা করেই ক্লাসে পাঠদানে অবহেল করেন প্রাইভেট ব্যবসা জমজমাট করার জন্য। মাঠপাড়া, খালইস্ট, কোর্টগাও এলাকায় গড়ে উঠেছে প্রাইভেট ও কোচিং সেন্টার। এ সকল সেন্টারে দেখা যায় ফজর নামাজ পড়তে না পড়তেই কোমলমতি ছেলে মেয়েরা এ সকল কোচিং সেন্টারে এসে হাজির হয়। কোচিং সেন্টারগুলোতে ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষক সম্পর্ক বন্ধু সম্পর্কে পরিণত হয়েছে। ফলে শিক্ষকের মর্যাদার হানি ঘটছে। শিক্ষকের মর্যাদার জায়গায় এখন আর শিক্ষক সুলভ নাই। পর্যাবেক্ষন করে দেখা যায় এ.ভি. জে. এম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কে কে গভ: ইনস্টিটিউশনের অনলাইন আবেদন গত বছরের তুলনায় খুবই কম পড়েছে। কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে স্কুল দুটিতে ক্লাসে পাঠদানে অবহেলা। পড়াশুনার মান খুবই দুর্বল।

১৫দিন পড়িয়ে একেকজন প্রায় ৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এ.ভি. জে.এম সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের বেশিরভাগ শিক্ষক ক্লাসে পাঠদান না করিয়ে বাসায় স্কুল খুলে বসেছেন। ব্যতিক্রম হয় ডিসেম্বর মাস। এই মাসে ভর্তি বানিজ্যকে কেন্দ্র করে আলাদা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন এ সকল শিক্ষক। তাদের কাছে প্রাইভেট পড়তে হলে ১৫দিনে ৩০০০ (তিন) হাজার টাকা গুনতে হচ্ছে প্রতিজন শিক্ষার্থীকে। সরোজমিনে গিয়ে দেখা যায় এ.ভি. জে.এম সরকারি বালিকা বিদ্যালয় ও কে. কে. গভ: ইনস্টিটিউশনের শিক্ষকদের বাসাবাড়ি বা ভাড়াটিয়া বাসাবাড়ি এক একটি মিনি স্কুলে পরিণত হয়েছে। সরকারি স্কুল দুটির কর্তৃপক্ষ তাদের স্কুলে শিক্ষকদের চাহিদার ব্যপারে মুখ খুলতে রাজি নন। কারণ শিক্ষক স্বল্পতা দেখিয়ে কোচিং বানিজ্যটা জমজমাট করে নিয়েছেন এই দুই স্কুলের শিক্ষক।

মুন্সীগঞ্জ শহরে সর্বজন স্বীকৃত রীতিতে পরিণত হয়েছে যে এই দুই স্কুলের শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট না পড়ালে ৬ষ্ঠ ও নবম শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারবে না। ২০১৫ সাল থেকে অনলাইনে আবেদন করার কারণে বিষয়টি এখন টক অব দ্যা টাউনে পরিণত হয়েছে। লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার এই সুযোগটি কাজে লাগাচ্ছেন জেলা শহরের একমাত্র সরকারি এই দুটি স্কুলের শিক্ষকগণ।

প্রশাসনের নাকের ডগায় কিভাবে সরকারি চাকুরিবিধি লংঘন করে প্রাইভেট পড়িয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন এ সকল শিক্ষক। এদের বিরুদ্ধে কেন কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। অভিভাবকগণ এখন এ সকল শিক্ষকের কাছে জিম্মি হয়ে রয়েছেন। জিম্মিদশা থেকে অভিভাবকগণ কি মুক্ত হতে পারবেন না? শিক্ষকগণ কেন এত লোভী? তাদের তো এত লোভ থাকার কথা না? এমন হাজারো প্রশ্ন সাধারণ অভিভাবকদের কাছে?

এই স্কুল দুটির বিরুদ্ধে কোন বছর কোন ক্লাসের সিলেবাস শেষ করার খবর পাওয়া যায়নি। প্রত্যেকটি শিক্ষার্থী তাদের বাড়িতে প্রাইভেট শিক্ষক অথবা স্কুলের শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়ে সিলেবাস শেষ করতে হয়। তবে কি স্কুল দুটিতে কোন লেখাপড়া হয় না?
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোহা: হারুন-অর-রশিদ জানান, বিষয়টি নিয়ে ফলোআপ হয়েছে। জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলাপ আলোচনা হয়েছে। কঠোর সিদ্ধানত নেয়া হবে।