মঙ্গল. এপ্রি ২৩, ২০২৪
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪। মঙ্গলবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১৭: একসময় ঠিকমতো কথাই বলতে পারতাম না। যোগাযোগে ছিলাম খুবই দুর্বল। নিজের মনের ভাবগুলো ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারতাম না। পরে বিতর্কই আমার জীবনকে অনেকটা বদলে দিয়েছে। সূক্ষ্মভাবে যুক্তি খণ্ডন করে একে একে বিতর্কে নয়টি চ্যাম্পিয়ন ট্রফি ও সাতটি রানারআপ ট্রফি জয় করেছি। আর এর পুরোটার কৃতিত্ব ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটির (ডিইউডিএস)।’

কথাগুলো বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কবি জসীমউদদীন হল ডিবেটিং সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিহাদ আল মেহেদী।

ডিইউডিএসের বর্তমান সভাপতি মাহমুদ আবদুল্লাহ বিন মুন্সী জানান, মেহেদীর মতো বহু শিক্ষার্থীর জীবন পাল্টে দিয়েছে ঢাবির ডিবেটিং সোসাইটি। তাঁদের অনেকেই এখন দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদে দায়িত্ব পালন করছেন।

মেহেদী জানান, স্কুল-কলেজে কোনো ধরনের বিতর্ক দলের সঙ্গে ছিলেন না তিনি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে পা দেওয়ার পর বড় ভাইদের দেখে আগ্রহ জাগে বিতর্কে। তখন থেকেই হল ক্লাবের প্রতিটি পর্বে অংশ নেন জিহাদ। প্রথমে কাজ করছিল ভয়। তবে ক্লাবের বড় ভাইদের উৎসাহে সেই ভয়কে জয় করে ক্রমে হয়ে ওঠেন বিতর্কে পারদর্শী।

ডিইউডিএস সূত্রে জানা যায়, সারা দেশ বিবেচনায় ডিইউডিএস একটি ছোট সংগঠন হলেও এর কার্যকারিতা একেবারেই খাটো করে দেখার নয়। ১৯৮২ সালের ১৭ অক্টোবর প্রতিষ্ঠিত হয় ডিইউডিএস। এই সংগঠন প্রগতিশীল শিক্ষকদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে শুরু হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে ছাত্রদের মধ্যে দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়।

প্রতিষ্ঠাকালে হাতেগোনা কয়েকজনকে নিয়ে যাত্রা শুরু হলেও আজ সংগঠনটির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী। আন্তর্জাতিক মানের বিতার্কিক তৈরি, বিতর্ক আন্দোলন, তরুণদের উগ্রবাদ-জঙ্গিবাদ সম্পর্কে জানানো ও যুক্তিবাদী বিতার্কিক তৈরি করা সংগঠনটির মূল উদ্দেশ্য।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হলের বিতর্ক ক্লাব ও ৩০টি বিভাগের বিতর্ক ক্লাবের বিতর্ক অনুষ্ঠান ডিইউডিএসের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। সংগঠনটির উল্লেখযোগ্য বিতর্ক অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে—জাতীয় বিতর্ক উৎসব, নাফিয়া গাজী আন্তবিভাগ বিতর্ক প্রতিযোগিতা, আন্তবিশ্ববিদ্যালয়, আন্তহল, আন্তকলেজ ও আন্তস্কুল বিতর্ক প্রতিযোগিতা।

বিতর্কের বিষয়ে নির্বাচনের ক্ষেত্রে সমসাময়িক বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয় বেশি। তবে মৌলিক বিষয়গুলো নিয়েও বিতর্ক হয়। বাংলা ও ইংরেজি উভয় মাধ্যমেই বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় বলে জানান সংগঠনটির বর্তমান সভাপতি মাহমুদ আবদুল্লাহ বিন মুন্সী।

মাহমুদ আবদুল্লাহ বিন মুন্সী জানান, ঢাবিতে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী পড়তে আসেন ঢাকার বাইরের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে। পারিপার্শ্বিক কারণে তাঁরা কথা বলায় তেমন দক্ষ থাকেন না। কিন্তু এই সংগঠনটির সংস্পর্শে এসে সেই গ্রাম থেকে আসা শিক্ষার্থীদের মুখে ফোটে কথার ফুলঝুরি। আসে নতুন নতুন যুক্তি।

ডিবেটিং ক্লাব সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রায় ৩০০ জনকে ক্লাবটির সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। গত বছরে বিভিন্ন বিতর্ক প্রতিযোগিতায় নয়টি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ও চারটি রানারআপ ট্রফি ঘরে তোলে ডিইউডিএস। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ২০১৫ সালে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত বিতর্ক টুর্নামেন্টে রানারআপ ও ইন্দোনেশিয়ায় ‘অলিম্পিয়াড ডিবেটিং সেগমেন্ট’-এ সেরা পাঁচের মধ্যে ছিল সংগঠনটি।

এ বিষয়ে ডিইউডিএসের সভাপতি বলেন, ‘অরাজনৈতিক সংগঠন হলেও সেনাশাসন ও ২০০৭ সালের অবৈধ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে মাঠে নেমে আন্দোলন করে ডিইউডিএস।’ এ ছাড়া বন্যার্তদের জন্য সাহায্য, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জঙ্গি হামলাসহ বিভিন্ন বিষয়ে তরুণদের সচেতন করতে ভূমিকা রাখে ডিইউডিএস।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সংগঠনটির অর্থায়নের বিষয়টি নির্ধারণ করে ঢাবি কর্তৃপক্ষ। কেন্দ্রীয় কমিটির জন্য বছরে এক লাখ ৫০ হাজার টাকার বাজেট সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়া হল ক্লাব ও বিভাগ ক্লাবের জন্য আলাদা বাজেটের বরাদ্দ থাকে। তবে কেন্দ্রীয় কমিটি পরিচালনার জন্য এই বাজেটের পরিমাণ যথেষ্ট নয় বলে জানান ডিইউডিএস সভাপতি।

সংগঠনটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন ইলেকটোরাল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হয়। প্রতিটি হল ক্লাব ও বিভাগ ক্লাবের একজন করে প্রতিনিধির প্রত্যক্ষ ভোটে এই নির্বাচন হয়।

এ বিষয়ে ডিইউডিএসের সভাপতি বলেন, ‘সভাপতির দায়িত্ব পালন করাটা অনেক গর্বের। একটি সংগঠনের ইতিহাস-ঐতিহ্য যখন ভালো হয়, তখন সেটা পরিচালনা করা কঠিন। ডিইউডিএসের স্বর্ণযুগটা যাতে বজায় থাকে, সংগঠনের মান যাতে ম্লান না হয়, সে জন্য কাজ করছি আমরা।’

ডিইউডিএসের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমাদের এখানে আন্তর্জাতিক মানের ডিবেটর তৈরি হচ্ছে, যারা প্রতিনিয়তই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়ে ডিইউডিএসের মুখ উজ্জ্বল করছে।’

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, ডিইউডিএস সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য বিতর্কের একটি বড় প্ল্যাটফর্ম । এখান থেকেই তৈরি হয় আন্তর্জাতিক মানের বিতার্কিক। এই বিতর্ক কার্যক্রম তাদের সাংগঠনিক দক্ষতা বাড়াতে সহায়তা করে, যা কর্মজীবন থেকে শুরু করে সামাজিক কর্মকাণ্ডে, এমনকি দেশের সংকটকালেও দেশের স্বার্থে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করে। তাই সংগঠনটিকে যথাযথ পরিমাণ বাজেট ও ভালোভাবে পরিচালনা করতে পারলে এখান থেকে আরো নতুন নতুন মেধাবী তৈরি হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *