Tue. May 6th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪। সোমবার,৬ নভেম্বর, ২০১৭: কিডনি মানুষের শরীরের একটি প্রধান অঙ্গ বৃক্ক বা কিডনি। এটি মূলত রেচন ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। মানবদেহে কোমরের দু’পাশে আছে দুটি কিডনি। যদি কিডনি রোগ হয় তাহলে তা খুব নীরবে শরীরের ক্ষতি করে। এমনকি কিডনি বিকল পর্যন্ত হতে পারে।কিডনি রোগের প্রধান কারণগুলো নিম্মরুপ:

১. উচ্চ রক্তচাপ।
২. ডায়াবেটিস, বিশেষত টাইপ-২।
৩. বংশগত অর্থাৎ পূর্বপুরুষ কারও কিডনি রোগ থাকলে।
৪. কিডনির জন্য ক্ষতিকর এমন খাদ্য খাদ্যাভ্যাসে অন্তর্ভূক্ত থাকলে।

কয়েকটি নীরব উপসর্গ দেখে বলা যায়, কিডনি কতটা অসুস্থ।

শরীরের ত্বকে র‌্যাশ বা দানা ওঠা ও তীব্র চুলকানি হওয়া। সাধারণত কিডনির সমস্যাজনিত ত্বকের র‌্যাশ হলে চিকিৎসায় এ ধরনের সমস্যার খুব কমই লাঘব হয়।

কিডনি সমস্যা কারণে রক্ত সংবহনতন্ত্রে এক ধরনের ক্ষতিকর উপাদান তৈরি হয়। যার ফলশ্রুতিতে মুখের টেস্ট হ্রাসপায় এবং মেটালিক টেস্ট ও মুখের তীব্র গন্ধ অনুভূত হয়। অর্থাৎ যাকে বলা হয় ব্যাড ব্রেথ। অনেকে বলেন, খাবার আহার করলেই এক ধরনের মেটালিক গন্ধ অনুভূত হয়।

প্রায়শই বমি অথবা বমি বমি ভাব অনুভূত হয়। ক্ষুধা বা আহারের ইচ্ছে হ্রাস পায় এমনকি দ্রুত ওজন হ্রাস পেতে থাকে।

সময় অসময় প্রস্রাবের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। অনেকের আবার প্রস্রাব করতে ইচ্ছে করে অথচ ইউরিনেশন হয় না। আবার অনেকের ইউরিনেশনের পরিমাণ বেশি হয়। আবার অনেকের ডায়াবেটিস না থাকা সত্ত্বেও রাতে উঠতে হয় ইউরিনেশনের জন্য।

শুধু প্রস্রাবের তীব্রতা কম বেশি নয়, অনেক ক্ষেত্রে প্রস্রাবের সঙ্গে ব্লাড যাওয়া, প্রস্রাবের রং ডার্কার অথবা লাইটার হওয়া অথবা ফোমি ইউরিন হওয়া। অর্থাৎ প্রস্রাবের পর মনে হয় ফেনা তৈরি হয়েছে।

কিডনির আর একটি কাজ হচ্ছে শরীর থেকে অতিরিক্ত জলীয় উপাদান বা ফ্লুইড বের করে দেয়া। কিন্তু কিডনি ফাংশন যথাযথ না থাকলে শরীর থেকে অপ্রয়োজনীয় ফ্লুইড বের হয় না। ফলে এসব ফ্লুইড হাঁটু, পা, পায়ের পাতা, মুখ ও হাতে জমা হয়। যাকে আমরা বলি হাত, পা, মুখ ফুলে যাওয়া।

কিডনি যদি স্বাভাবিক না থাকে তবে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে। ফলে শরীর হয়ে উঠে দুর্বল ও অলস। এছাড়া বারবার ঠাণ্ডা লাগা।

এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ৪০ থেকে ৮০ লাখ লোক কিডনি রোগে আক্রান্ত এবং প্রতি বছর ৩০-৪০ হাজার লোক এ রোগে মৃত্যুবরণ করে। নতুন করে ৮-১০ লাখ লোক এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তাই আমাদের জানা দরকার কিডনি রোগের প্রতিরোধ ও প্রতিকার সম্পর্কে করণীয়।

কিডনি ভালো রাখতে করণীয়ঃ

১. দৈনিক পরিমিত বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে (৮-১০ গ্লাস)। তবে প্রয়োজনের অধিক পানি পান করবেন না। তাহলে কিডনির উপর চাপ পড়বে। ফলশ্রুতিতে কিডনির বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিবে।

২. ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ব্যথানাশক ঔষধ একদমই সেবন করবেন না। এছাড়া অন্যান্য সমস্যায়ও আন্দাজে ঔষধ সেবন না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। কেননা ঔষধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া থাকে। যা বিশেষ করে কিডনির জন্য ক্ষতিকর।

৩. নিয়মিত ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে।

৪. ওজন স্বাভাবিক রাখা খুবই জরুরি। BMI স্কেলে ওজন ১৮-২৫ এর মধ্যে রাখা উত্তম। তবে ২৯ এর বেশী হলে ডাক্তারের পরামর্শ আবশ্যক।

৫. নিয়মিত রক্তচাপ বা ব্লাড প্রেসার মাপতে হবে।

৬. নিয়মিত রক্তে ক্রিয়েটিনিন ও কোলেস্টেরলের মাত্রা চেক করতে হবে।

৭. পরিবারে অতীতে কারও কিডনি রোগ ছিল কি না জানা উচিত। থাকলে সতর্কতা বজায় রাখতে হবে। অবশ্যই ডাক্তারকে ব্যাপারটি জানাতে হবে।

৮. পুষ্টিকর ও সুষম খাবার গ্রহণ করতে হবে। লবণ, সোডিয়াম ও আমিষ জাতীয় খাবার বিশেষ করে ফাস্ট ফুড ও কোল্ড ড্রিঙ্কস খাওয়া বন্ধ করা আবশ্যক। রেড মিট, চিনি, ডিমের কুসুম ইত্যাদি কম কম খেতে হবে।

৯. ধূমপান, মদ ও নেশা জাতীয় দ্রব্য বর্জন করতে হবে। কোন ধরণের সংক্রমণ বা ইনফেকশন হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

১০. প্রস্রাবের বেগ হলে আটকে না রাখা উত্তম। নিয়মিত প্রস্রাব আটকে রাখলে কিডনি ক্ষতিগ্রস্থ হবে। কিডনি ও এর রোগ সম্পর্কে জানতে হবে।