Wed. May 7th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪। সোমবার , ২৭ নভেম্বর, ২০১৭: ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল থেকে চুরি হওয়া তিন মাসের এক শিশুকে ‘ফেসবুক’-এর সহায়তায় উদ্ধার করা হয়েছে। শিশুটির খালাত ভাইয়ের উপস্থিত বুদ্ধিতে তাকে উদ্ধার করা হয়। শিশুটিকে চুরি করেছিল জুয়েল নামে এক ব্যক্তি। অবশ্য তাকে আটক করা যায়নি। জুয়েলের মোবাইল ফোন নম্বর দিয়ে ফেসবুকে অনুসন্ধান করে তাকে শনাক্ত করে শিশুটির খালাত ভাই রাফসান ফরাজি। ২০ নভেম্বর মধ্যরাতে ঢামেক হাসপাতালের সাত তলার ৭০১ নম্বর ওয়ার্ডের ৪০ নম্বর বেড থেকে জিমকে চুরি করা হয়। শাহবাগ থানার এসআই আবদুল মোত্তালিব জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের সহায়তায় শিশুটিকে পুলিশ উদ্ধার করেছে।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ঢামেক হাসপাতালে ৩১ অক্টোবর গফরগাঁওয়ের সুমাইয়া আক্তার মাজেদা তার অসুস্থ স্বামী জুয়েল মিয়াকে ভর্তি করান। তাদের চার সন্তানের সবাই মেয়ে। তিন মাস আগে জিমের জন্ম হয়। এদিকে, ৭ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জের জুয়েল নামে একজন তার বাবাকে একই ওয়ার্ডে ভর্তি করায়। জিমদের ৪১ (ক) নম্বর বেড়ের পাশেই ৪০ নম্বর বেড পান জুয়েলের বাবা। কাছাকাছি হওয়ায় জুয়েলের সঙ্গে মাজেদার সখ্য গড়ে ওঠে। তারা পরস্পরের পরিবারের খোঁজখবরও নেন। জিম চুরি হওয়ার দু’দিন আগে বাবাকে নিয়ে হাসপাতাল ছাড়ে জুয়েল।

রাফসান ফরাজি বলেন, নিঃসন্তান জুয়েল জিমকে খুব আদর করত। শিশুটিকে কোলে নিয়ে সে ঘুরে বেড়াত। অনেকবার মাজেদাকে জুয়েল বলেছে, ‘আপনার তো চার মেয়ে। ছোট মেয়েটি আমাকে দিয়ে দেন।’ ঘটনার রাতে জিমকে পাশে নিয়ে ঘুমিয়েছিলেন মাজেদা। রাত ১২টার দিকে হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে তিনি দেখেন জিম নেই। ওয়ার্ডের বাইরে গিয়ে রাফসানকে তিনি বলেন, জিমকে খুঁজে পাচ্ছি না। এ সময় তিনি চিৎকার করে কান্নাকাটি করেন। তখন ওয়ার্ডের অন্য লোকজন ছুটে এসে খোঁজাখুঁজি শুরু করে। এ খবর পুলিশ ও আনসার সদস্যদের জানানো হয়। এর মধ্যে রাফসানকে একই ওয়ার্ডের ২২ বছর বয়সী এক রোগী জানান, শিশুটিকে কোলে করে নিয়ে এক ব্যক্তিকে যেতে তিনি দেখেছেন। ওই ব্যক্তির মুখে হালকা দাড়ি আছে।

রাফসান জানান, এটা জানার পর নারায়ণগঞ্জের জুয়েলকে সন্দেহ হয়। কারণ তার মুখেও হালকা দাঁড়ি ছিল। এ ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সহায়তা নেয়া হয়। জুয়েলের বাবার ভর্তির কাগজপত্র থেকে জুয়েলের সংক্ষিপ্ত পরিচয় জানা যায়। জানা যায়, জুয়েলের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। এ ছাড়া কাগজপত্র ঘেঁটে একটি মোবাইল ফোন নম্বরও পাওয়া যায়। তবে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। রাফসান আরও জানান, কোনো উপায় না পেয়ে ওই ফোন নম্বরটি দিয়ে ফেসবুকে ‘সার্চ’ দেয়ার বিষয়টি আমার মাথায় আসে। শাহবাগ থানার এক পুলিশ কর্মকর্তার ফোন নিয়ে নম্বরটি লিখে সার্চ দেই। সার্চে ‘এমডি জ্যাক’ নামে ইংরেজিতে লেখা একটি ফেসবুক আইডি পাওয়া যায়। ওই আইডিতে থাকা ছবি দেখে জুয়েলকে শনাক্ত করি। ফেসবুক প্রোফাইলে দেখা যায় সেখানে একটি বাংলালিংক মোবাইল ফোন নম্বর রয়েছে। নম্বরটি শাহবাগ থানা পুলিশকে দেয়া হয়। ওই নম্বরে এক পুলিশ সদস্য ফোন দিয়ে জিজ্ঞাসা করেন, ‘জুয়েল ভাই নাকি?’ ওপর প্রান্ত থেকে বলা হয় ‘হ্যাঁ জুয়েল বলছি’। তাকে জিজ্ঞাসা করা হয় কোথায় আছেন? তখন জুয়েল বলে আমি পোস্তগোলায়। তার কাছে জানতে চাওয়া হয় আপনাদের গ্যারেজটা কোথায়? জুয়েল বলে নারায়ণগঞ্জের খিল মার্কেটে। হাসপাতালে থাকার সময় জুয়েল জানিয়েছিল তাদের একটি বড় গ্যারেজ আছে।

রাফসান জানান, পুলিশ তাদের নিয়ে নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হয়। কাশিমপুর যাওয়ামাত্র জিমের মার মোবাইল ফোনে একটি অজ্ঞাত নম্বর থেকে ফোন আসে। বলা হয়, ‘আমি জুয়েল বলছি, তোরা আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে বাচ্চা দিছিস। এখন আবার বাচ্চা নিতে চাস কেন।’ এ সময় রাফসান তার খালার কাছ থেকে ফোন নিয়ে কথা বলেন। কথা বলার একপর্যায়ে ১০ হাজার টাকা দিলে বাচ্চা ফেরত দেবে বলে জানায় জুয়েল। এ সময় পুলিশ পাশ থেকে রাফসানকে টাকা দেয়ার আশ্বাস দিতে বলেন। টাকা দিতে সম্মত হলে জুয়েল তাদের নারায়ণগঞ্জের কাশিমপুরে যেতে বলে। তবে দু’জনের বেশি লোক সঙ্গে আনতে নিষেধ করে সে।

রাফসান জানান, প্রথমে কাশিমপুরে যেতে বললেও পরে খিলমার্কেট যেতে বলে জুয়েল। একপর্যায়ে কাশিমপুর খিলমার্কেট সিদ্দিক সাহেবের বাড়িতে আসতে বলা হয়। রাফসান জানান, তখন পুলিশ তাকে ও তার খালা মাজেদাকে কাশিমপুর হাটখোলা বাজারের একটি স্থানে রেখে যায়। পুলিশ সদস্যরা সাদা পোশাকে গিয়ে জিমকে উদ্ধার করেন। পুলিশ সেখান থেকে জুয়েলের স্ত্রী মনোয়ারা বেগমকে আটক করে। তবে জুয়েলের খোঁজ পাওয়া যায়নি।

রাফসান যুগান্তরকে বলেন, জিমকে ফতুল্লা থানায় এনে তার মায়ের কাছে দেয়া হয়। জিম তার মায়ের দুধ পান করায় পুলিশ নিশ্চিত হয় এটিই হারিয়ে যাওয়া শিশু।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহবাগ থানার এসআই আবদুল মোত্তালেব বলেন, বিষয়টি পুলিশ গুরুত্বের সঙ্গে দেখেছে। আমাদের কাছে অনেকটা স্পষ্ট শিশুটিকে চুরি করা হয়েছিল। তিনি আরও জানান, হাসপাতালের ক্যামেরার ফুটেজ দেখে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। শিশুটিকে চুরি করা হয়েছিল না, তাকে দেয়া হয়েছিল তাও জানা যাবে।