Wed. Mar 12th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪। শনিবার, ০২ডিসেম্বর , ২০১৭: পার্বত্য শান্তি চুক্তির কারণে ব্যাপক গতি পেয়েছে পাহাড়ের অর্থনীতি। শিক্ষা, চিকিৎসা অবকাঠামোসহ সব ক্ষেত্রে দৃশ্যমান উন্নয়ন হচ্ছে। পাহাড়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও লেগেছে উন্নয়নের ছোয়া। রাঙামাটির সৌন্দর্য উপভোগে যেখানে আগে পর্যটকরা ভয় পেতো এখন পাহাড়ে বেড়াতে আসছেন দেশি-বিদেশি পর্যটকরা। আগে নাজুক যোগাযোগ ব্যবস্থা ও নিরাপত্তার কারণে ব্যবসা বাণিজ্যে তেমন একটা গতি না থাকলেও এখন সে গতি কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

কাপ্তাই হ্রদে শান্তিচুক্তির আগে যেখানে সেখানে মাছ ধরতে না পারলেও এখন জেলেরা হ্রদের সর্বত্রই নিজ ইচ্ছেমত মাছ শিকার করতে পারে। চুক্তির পর কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকার কয়েক গুণ বেড়েছে। অর্থনীতিতেও এখন কাপ্তাই হ্রদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। চুক্তির আগে সরকার এই হ্রদ থেকে এক কোটি টাকা রাজস্ব না পেলেও এখন এই হ্রদ থেকে সরকার প্রতি বছর প্রায় দশ কোটি টাকার মতো রাজস্ব আদায় করছে। রাঙামাটির কয়েক হাজার পরিবার এখন কাপ্তাই হ্রদের ওপর নির্ভরশীল। পার্বত্য চুক্তির অর্থবছরে ১৯৯৭-৯৮ইং সনে ৬ হাজার ৫৮৬ মে. টন মাছ কাপ্তাই হ্রদ থেকে উৎপাদন হয় যার থেকে সরকার রাজস্ব পায় ২ কোটি ৭৫ লাখ ৫৭ হাজার। আর ২০১৬-১৭ সনে উৎপাদন বেড়ে দাঁড়ায় ৯ হাজার ৯৭৪.৪৪ মে. টন মাছ আর রাজস্ব আদায় হয় ১২ কোটি ৮৮ লাখ ৮৬ হাজার টাকা।

তবে মৎস্য ব্যবসায়ী মো. আনোয়ার ভিন্ন কথা বলছেন। তিনি বলেন, ‘চুক্তির ফলে তেমন কোনও পরিবর্তন হয়নি। আগে নৌকায় মাছ আসতো এখন বোটে করে আসে। পরিবর্তন হয়েছে চাঁদার হারের। আগে একটি গ্রুপকে দিতে হতো এখন তিনটি গ্রুপকে দিতে হয়।’

রাঙামাটি লঞ্চ ও বাস মালিক সমিতির সভাপতি মঈন উদ্দিন সেলিম বলেন, ‘পার্বত্য শান্তিচুক্তির সুফল এখানে বসবাসকারী সবাই পাচ্ছে। আগে সন্ধ্যার পর চলাচল করা কঠিন ছিল। এখন স্বাভাবিকভাবে চলাচল করা যাচ্ছে। কিন্তু বড় সমস্যা হলো সব জায়গায় চাঁদাবাজি বেড়ে গেছে। আগে লুকোচুরি করে চাঁদা নিতো এখন প্রকাশ্যে এই চাঁদাবাজি চলছে। চুক্তির পর মানুষের মধ্যে শান্তি ফিরলেও চাঁদাবাজি ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। আগে চাঁদা নিতো এক গ্রুপ এখন চাঁদা নিচ্ছে তিন গ্রুপ। নতুন আরেকটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে এসব সংগঠন তৈরি হয় চাঁদা আদায়ের জন্য।’

সীমান্তবর্তী উপজেলা বাঘাইছড়ি কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. গিয়াস উদ্দিন আল মামুন বলেন, ‘চুক্তির পর যে খাতটি সবচেয়ে বেশি উন্নতি লাভ করেছে তা হচ্ছে কাঠ ব্যবসা। চুক্তির পর এ অঞ্চলে কাঠ ব্যবসা কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। পাহাড়ের ভেতরে আগে গাছের বাগান না কিনলেও এখন হর-হামেশায় ব্যবসায়ীরা বাগান কিনছেন। কিন্তু এর জন্য দ্বিগুণ হারে চাঁদা দিতে হয় পাহাড়ি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে। চাঁদা না দিলে তারা বাগান থেকে গাছ কাটতে দেয় না।

মাহী এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. আজম বলেন, ‘চুক্তির পর পার্বত্য অঞ্চলে ব্যাপক অবকাঠামোর উন্নয়ন হয়েছে। রাস্তা-ঘাট থেকে শুরু করে সব কিছুর। তার সঙ্গে সঙ্গে আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর চাঁদাবাজির কারণে ব্যবসা করা কঠিন হয়েও পড়েছে।’
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সজীব চাকমা চাঁদাবাজি প্রসঙ্গে বলেন, ‘চাঁদা নেওয়া হয় এটি পুরোপুরি সত্য নয়। আবার চাঁদা বিষয়টি অস্বীকারও করতে পারি না। চাঁদাবাজি, অপহরণ ও অসামাজিক কাজ সারা দেশে কম বেশি রয়েছে, এখানেও হচ্ছে। চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ার কারণে এই বিষয়গুলো রয়েছে আর সময় বুঝে মাঝে মাঝে মাথা চাড়া দিয়ে উঠে। পার্বত্য পরিস্থিতিতে কিছু নেতিবাচক দিক রয়েছে; যদি চুক্তি বাস্তবায়িত হয় এবং চুক্তি বাস্তবায়নের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যেতে থাকে তাহলে আমি মনে করি এই বিষয়গুলো আস্তে আস্তে কমে আসবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘শান্তিচুক্তির পর পাহাড়ে উন্নয়নের গতি বেড়েছে ঠিক। কিন্তু অবৈধ চাঁদাবাজির কারণে কাঙ্খিত উন্নয়নের সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। সাধারণ মানুষ মনে করেন, অবৈধ অস্ত্রবাজি আর চাঁদাবাজি বন্ধ হলে পাহাড়ে মানুষ আরও বেশি শান্তিতে থাকবে।