Wed. Mar 12th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪। বুধবার,, ২০ ডিসেম্বর, ২০১৭: শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক প্রবাসী শ্রমিককে একজন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ‘যোগ্যতাহীন বালের কামলা’ বলায় চরম ক্ষোভ কাজ করছে প্রবাসী শ্রমিকদের মাঝে। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভে এসে ওই অভিযুক্ত আনসার সদস্যের বিচার ও বহিস্কারের দাবি তুলেছেন।

গত শুক্রবার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এ ধরণের ঘটনা ঘটে। নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্য ও একজন প্রবাসী শ্রমিকের ব্যাগ রাখা নিয়ে বিতর্কের এক পর্যায়ে ওই আনসার সদস্য প্রবাসী শ্রমিককে ‘বালের কামলা’ বলে গালি দেয়। ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়লে প্রবাসী শ্রমিকরা লাইভে এসে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করছে।

তুফায়েল আহমেদ সাইফ নামে একজন সৌদি প্রবাসী ফেসবুক লাইভে এসে বলেন, ওই আনসার সদস্যের ব্যবহারে আমি চরম মর্মাহত। বড় কষ্ট হচ্ছে আমাদের। যাদের বিনিময়ে হাজার হাজার মার্কিন ডলার দেশের রেমিটেন্সে যোগ হচ্ছে তাদের বালের কামলা বলে গালি দেওয়া হচ্ছে। যে দেশে পর্যাপ্ত চাকরি নেই, খাদ্য নেই তারা বিদেশে এসে নিজেদের দেশ জাতি ও পরিবারের জন্য কাজ করেন তারা কামলা?

তিনি এ সময় বলেন, আমি একজন অনার্স পড়ুয়া ছেলে। আমি দেশে চাকরির জন্য হন্য হয়ে ঘুরে বেড়িয়েছি। অনেক কষ্ট করেও চাকরি পাইনি। অথচ আমি বিদেশে এসে কামলা হয়ে গেলাম? আমি তো বাংলাদেশের নাগরিক। সরকার আমাকে কী দিতে পেরেছে? আমি যেখানে চাকরির জন্য গিয়েছি আমার কাছে টাকা চাইছে। টাকা হলে চাকরি হবে। যে ভাইটিকে কামলা বলে গালি দিয়েছে এ গালি আমাদের লক্ষ লক্ষ প্রবাসীদের ওপর এসে পড়েছে। আমাদের ব্যথিত করেছে।

বালের এক কামলার খোলা চিঠি!

আরেক প্রবাসী শ্রমিকের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘বালের এক কামলার খোলা চিঠি’ ভাইরাল পড়ে পড়েছে। ওই চিঠিটি হুবহু তুলে ধরা হলো, ‘হ্যাঁ, আমরা কাজ করে খাই ! আমরা খেটে খাওয়া মানুষ । উদয়-অস্ত খেটে, ঘাম ঝরিয়ে আমাদের হালাল উপার্জন ! যিনি কাজ করেন, তিনিই কামলা । কামলা হতে আমাদের কোন আপত্তি নেই । বাংলার, কৃষক-মজুর, কামলা । এই কামলাদের ঘাম জড়ানো শ্রম ছাড়া আপনি ভদ্দরলোকের চিকন চালের ভাত ঝুটবে না । ঘুষের টাকা দিয়েও তখন চাল কিনতে পাবেন না ! কামলাদের ঘাম-আর শ্রমে আপনার দালান ঘর উঠে ! বিনিময়ে তারা অর্থ নেয় । আর আপনি ঘুষের টাকাতে গড়া দালানে শান্তিতে ঘুমুতে চান ! শান্তি কি পান, আসলে ?! হারামে আরাম নাই ! আপনার ঘুষের টাকা আপনাকে কত দুঃস্বপ্নই না দেখায় । অথচ, দিনশেষে এই কামলারা নির্বিঘ্ন, শান্তির ঘুম দেয় । বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, রেমিটেন্স বলে অর্থনীতির কিছু শব্দ আছে, আমরা আশা করছি আপনি-আপনারা বানান করে ওগুলো পড়তে জানেন ! বিদেশিদের রেমিটেন্স না হলে আপনি আনসারের বেতন দিতে পারবে না সরকার, খোঁজ নিয়ে দেখবেন একটু !


কামলা বলে যাদের আপনারা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেন, কি নির্লজ্জ, ছোটলোকের মতইনা এয়ারপোর্ট থেকে বেরুতে গেলে তাদের সামনে হাত পেতে দাঁড়ান ! ‘ভাই কিছু বখশিস দিয়ে যান, বলেন !’ আপনার পাতা হাত এবং আপনাকে তখন ভিক্ষুকের চে’ বেশি কিছু মনে হয় না ! ভিক্ষাবৃত্তি এবং ঘুষ খাওয়া বন্ধ করুন, সেল্ফ রেসফেক্ট বাড়ান । দেখবেন নিজেকে আপনিও মানুষ বলে ভাবতে পারবেন, অন্যকেও সম্মান করতে শিখবেন ! তখন আর আপনার বালের দৈর্ঘকে অত বড় মনে হবেনা ! ঘুষের টাকা ছাড়াই তখন বাল ফালাতে পারবেন ! পুলিশ বিষয়ে এই লেখাতে আলাদা কোনো শব্দ খরচের প্রয়োজন পড়ছে না । একশ্রেণীর পুলিশ এবং পুরিষের পার্থক্য কতখানি বাংলাদেশের প্রতিজন সাধারণ মানুষ জানে । আনসার বাহিনীর জন্ম হয় ভারতে । দেশভাগের পর ক্ষুদ্র একটি গ্রুপ পাকিস্তানে আসে । সেখান থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের আনসার বাহিনীকে নতুন করে সংগটিত করা হয়, দেশের অভ্যন্তরীণ অবকাঠামোতে সহযোগিতার জন্য । এই তৃতীয়শ্রেণীর বাহিনী নিজেরা নিজেদের উপরে কখনই সন্তুষ্ট ছিল না ।

১৯৯৪ সালে বিদ্রোহ করে সারা দেশে এক অরাজক অবস্থা তৈরি করে । সেনাবাহিনী এবং তৎকালীন বিডিআর গিয়ে এদেরকে শায়েস্তা করে লাইনে আনে । উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, সে দফা কমপক্ষে ৪ আনসারকে প্রাণ দিতে হয় । পরবর্তীতে অনেকে জেলবন্দী এবং চাকুরিচ্যুত হয় । এরকম যাদের ইতিহাস, তাদের কিছু কিছু ভিডিও ভাইরাল হয় মাঝে মাঝেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে । মহাসড়কে এবং অন্যান্য আরো জায়গাতে ওনাদের হাত সাফাইয়ের কারুকাজ ভিডিওগুলোতে দেখা যায় । প্রবাসী মাত্রই জানেন, বাংলাদেশের জন্য তাদের বুকের ঠিক কোন জায়গায় গোপন ব্যথা হয় প্রতিদিন । প্রবাসীরা জানেন, দেশের মায়ার জন্য আড়ালে আড়ালে তারা কত চোখের পানি ফেলেন । প্রবাসীরা সকাল-সন্ধ্যা কাজ করেন, কারো কারো প্রায় ১৮ ঘন্টা কাজের বিনিময়ে পাওয়া রেমিটেন্স সরকার ভালোমতনই স্বীকার করে । সরকারি কর্মী হিসেবে আপনারও প্রবাসীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন ! সম্মান দেবার অভ্যাস গড়ে তুলুন । তাহলে আপনিও আমাদের সম্মান পাবেন । কোন বাহিনীর প্রতি আমাদের কোন বিরাগ নেই । বরং যারা সৎভাবে জিবীকা নির্বাহ করেন, সভ্য-ভব্যতা শিখেছেন, দেশের জন্য প্রাণও দেন অনেক সময়, সেইসব সাহসী সৈনিকদের আমরা দাঁড়িয়ে সম্মান জানাই । প্রবাসীদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা অপরাধিদের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করি আমরা ।