Wed. May 7th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪। মঙ্গলবার , ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৭: রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে শেষ হওয়ার পর এবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উপনির্বাচনসহ দেশের বাকি ৫ সিটি করপোরেশন এলাকায় বইছে ভোটের হাওয়া। আগামী ফেব্রুয়ারির শেষার্ধে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উপনির্বাচন দিয়ে শুরু হবে এই ৬ সিটির ভোটযুদ্ধ। এরপর এপ্রিল-মে মাসে রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল ও গাজীপুর সিটিতে নির্বাচন হবে বলে ইসি সূত্রে জানা গেছে। নির্বাচন সামনে রেখে এসব এলাকার চায়ের দোকান, অলিগলি সর্বত্রই এখন ভোটের আলোচনা। মহানগরীগুলোতে শোভা পাচ্ছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের পোস্টার-ব্যানার। রাজনৈতিক দলগুলোতে শুরু হয়েছে প্রার্থী বাছাইয়ের তোড়জোড়। আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু না হলেও সম্ভাব্য প্রাথীদের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ে গোপনে জরিপ চালাচ্ছে বড় দলগুলো। সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে দৌড়ঝাঁপের পাশাপাশি জোর লবিং তদবির করছেন কেন্দ্রে। সব সিটিতেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক প্রার্থীর পাশাপাশি আছে কোন্দলও। তবে সব দলের পক্ষ থেকে গ্রহণযোগ্য, জনপ্রিয় ও বদনাম নেই (উইনেবল) এমন প্রার্থী খোঁজা হচ্ছে বলে দলীয় সূত্রে জানানো হয়েছে। তবে শেষ মুহূর্তে বিদ্রোহী প্রার্থীও বেরিয়ে আসতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। ইতোপূর্বে একাধিক প্রার্থী নিয়ে বিপাকে পড়েছে উভয় দলই।

এদিকে প্রথমে কুমিল্লা এবং গত ২১ ডিসেম্বর রংপুর সিটি করপোরেশনসহ কয়েকটি উপনির্বাচন সুষ্ঠুু ও গ্রহণযোগ্য হওয়ায় ইসিও অগ্নিপরীক্ষায় কিছুটা হলেও উত্তীর্ণ হয়েছে। আগামীতে অন্য ৬ সিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে এবার তাই কোমরবেঁধে নেমেছে নির্বাচন কমিশন। আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিএনপিসহ অন্য দলগুলোর আস্থা বাড়তে এ নির্বাচন ইসির জন্য অগ্নিপরীক্ষাও বটে।

এসব সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রস্তুতি বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, সম্প্রতি কমিশন সভায় ডিএনসিসিসহ অন্য ৫ সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ডিএনসিসি মেয়র পদে উপনির্বাচন এবং মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রাজশাহী এবং জুন মাসে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। এ সময়টাতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আমরাও প্রস্তুতি শুরু করেছি। তবে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার কথা বিবেচনায় রেখে আমরা আগেভাগেই এ বিষয়ে আলোচনা করেছি, যাতে প্রস্তুতি নিতে সুবিধা হয়। পরীক্ষার্থীদের অসুবিধা না ঘটে। তবে যথেষ্ট সময় রয়েছে, পরে বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে।

ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই আগামী বছর (২০১৮) ডিএনসিসিতে উপনির্বাচন ছাড়াও আরো পাঁচটি সিটিতে নির্বাচন করার পরিকল্পনা রয়েছে ইসির। আগামী মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা, সিলেট ও গাজীপুরে নির্বাচন করতে হবে। তাই এসব নির্বাচনের আগে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসব। আগের মতো এবারো রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা ও সিলেট- এ চার সিটিতে একই সঙ্গে নির্বাচন করার পরিকল্পনা রয়েছে কমিশনের।

ইসি সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ১৫ জুন একসঙ্গে রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা ও সিলেট সিটিতে নির্বাচন করা হয়। একই বছরের ৬ জুলাই গাজীপুর সিটি নির্বাচন হয়। নিয়ম অনুযায়ী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিজয়ীরা শপথ গ্রহণের পর প্রথম সভা থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর পর্যন্ত এর মেয়াদ থাকে। আর মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বের ১৮০ দিনের মধ্য নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে ইসির।

এদিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এসব সিটি করপোরেশনে জয়ের বিকল্প ভাবছে না বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। সিটিতে জয়-পরাজয় আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে। যে দল ভালো করবে তারা সংসদ নির্বাচনে বেশ সুবিধাজনক অবস্থায় থাকবে। সেই সুবিধা আদায়ের লক্ষ্যে দুই দলেই মাঠ পর্যায়ের শক্তির মহড়া দেখাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ক্ষমতাসীনরা বেশ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। এসব সিটির প্রার্থী বাছাইয়ে হাইকমান্ড এখন ব্যস্ত। তারা কয়েক দফা বৈঠকও করেছেন। ইতোমধ্যে সম্ভাব্য কয়েক প্রার্থীকে সবুজ সংকেতও দেয়া হয়েছে। যেসব এলাকায় কোন্দল রয়েছে তা মেটানোর দিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী কারা হবেন তা নিয়ে দলে আলোচনা চলছে। তবে আমরা ‘উইনেবল’ প্রার্থী দেব।

বিএনপির নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সিটি নির্বাচনে জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে পারলে নেতাকর্মীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়বে। পাশাপাশি ধানের শীষের জনপ্রিয়তা বাড়ছে এমন একটি বার্তাও সাধারণ ভোটারদের কাছে পৌঁছাবে, যা পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

এ দুদলের পাশাপাশি নির্বাচনী প্রস্তুতিতে পিছিয়ে নেই বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও। রংপুরে বিপুল বিজয়ের পর এবার খুলনায় মেয়র প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে দলটি। বাকি সিটির প্রার্থীও প্রায় চূড়ান্ত।

ছয় সিটির মাঠের চিত্র- ডিএনসিসি : ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুতে এ সিটির মেয়র পদটি শূন্য হয়েছে। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ডিএনসিসিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে ইসি সূত্র নিশ্চিত করেছে। এদিকে এ সিটির মেয়র পদে কারা প্রার্থী হবেন তা নিয়ে চলছে নানা জল্পনা। দুদলই প্রার্থী বাছাইয়ে ব্যস্ত। তবে সরকারি দল আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলামকে প্রার্থী করা হচ্ছে। তাকে এ বিষয়ে সবুজ সংকেতও দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। আর বিএনপির গতবারের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালকে ডিএনসিসি উপনির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হবে বলে দলীয় সূত্রে জানানো হয়েছে। প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের বাইরে জাতীয় পার্টির গতবারের মেয়র প্রার্থী জাপার ঢাকা উত্তরের সভাপতি বাহাউদ্দীন বাবুল ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে প্রার্থী হিসেবে দেখা যেতে পারে।

খুলনা : আমাদের প্রতিনিধি জানান, খুলনা সিটি করপোরেশনের প্রার্থী নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে বড় দুটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন সাবেক মেয়র আলহাজ তালুকদার আবদুল খালেক এমপি, খুলনা সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট সাইফুল ইসলাম এবং নগর যুবলীগের আহ্বায়ক ও খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট আনিসুর রহমান পপলু। বিএনপির প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনি, জেলা বিএনপির সভাপতি এডভোকেট শফিকুল আলম মনা এবং কেসিসির প্যানেল মেয়র-১ আনিছুর রহমান বিশ্বাস। একাধিক প্রার্থী নিয়ে বিপাকে পড়েছে উভয় দলই। এরই মধ্যে প্রার্থী হতে অনড় থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম ও জেলা বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনা। তারা ব্যানার-পোস্টার ছেপে বিলি শুরু করেছেন।

বরিশাল : আমাদের প্রতিনিধি জানান, সিটি নির্বাচনের তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে বরিশালের রাজনৈতিক অঙ্গনে। আগেভাগেই যার যার দলের মনোনয়নের জন্য প্রার্থীরা চালাচ্ছেন তদবির-লবিং। সর্বশেষ এখানে ২০১৩ সালের ১৫ জুন সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সাবেক মেয়র প্রয়াত শওকত হোসেন হিরনকে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপি সমর্থিত আহসান হাবিব কামাল। আগামী নির্বাচনেও দলের মনোনয়ন চাইবেন তিনি। সেই সঙ্গে বিএনপির মনোনয়ন চাইছেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মুজিবুর রহমান সরোয়র, সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরীন, বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম শাহিন, মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন সিকদার প্রমুখ।

এখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে এখন পর্যন্ত আলোচনায় আছেন তিনজন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আফজালুল করিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদেক আবদুল্লাহ এবং ২০০৮-এর নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামিম। তবে তাদের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সমর্থন অবশ্য সেরনিয়াবাত সাদেক আবদুল্লাহর দিকে। সিটি করপোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে ৩-৪ বছর ধরে মাঠ গোছাচ্ছেন সাদেক।

সিলেট : আমাদের প্রতিনিধি জানান, সিলেট সিটি করপোরেশনের গত নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান এবারো দলের মনোনয়ন পেতে পারেন। হাইকমান্ডের সবুজ সংকেত পেয়ে তিনি প্রচারে নেমেছেন বলে দাবি করছেন। যদিও দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আসাদ ও টানা তিনবারের কাউন্সিলর নগর আওয়ামী লীগ নেতা আজাদুর রহমান আজাদ। অন্যদিকে এবারো বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেতে পারেন বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। যদিও সম্প্রতি মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। জাতীয় পার্টির দলীয় প্রার্থী হিসেবে এককভাবে মাঠে রয়েছেন সাবেক পৌর কমিশনার আবদুস সামাদ নজরুলও।

রাজশাহী : আমাদের প্রতিনিধি জানান, রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের মহানগর সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন এবং বিএনপির মহানগর সভাপতি ও বর্তমান মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলই এখন পর্যন্ত ঘোষিত প্রার্থী। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড লিটনকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে।

গাজীপুর : আমাদের প্রতিনিধি জানান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে বর্তমানে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট আজমত উল্লাহ খান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলমের নাম শোনা যাচ্ছে। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে বর্তমান মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান ফের নির্বাচন করতে আগ্রহী। এ ছাড়া সাবেক এমপি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকারের নাম জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে। জাতীয় পার্টি থেকে মেয়র পদে মহানগর জাতীয় পার্টি নেতা মো. আশরাফুল ইসলামকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।ভোরের কাগজ থেকে নেয়া।