Wed. Mar 12th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪।শনিবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৭: ২০১৮ সাল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বছর। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ সব দলই নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত থাকবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করছে দলগুলো। নতুন বছরের শুরু থেকেই প্রচারণা চালাবে তারা। এবার প্রচারণার ক্ষেত্রে চমক দেখাতে চায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি, থাকবে নতুনত্ব। তবে পরস্পরবিরোধী প্রচারণার মাধ্যমে দল দুটির আগামী নির্বাচনী যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে। নির্বাচনের আগ পর্যন্ত এই প্রচারণা যুদ্ধ চলবে। দুই দলেরই প্রধান লক্ষ্য নির্বাচনে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে বিজয় নিশ্চিত করা। তবে বিএনপি নির্বাচনের পাশাপাশি আন্দোলনের প্রস্তুতিও রাখতে চায়।

আগামী নির্বাচনে প্রচারণার কৌশলও নির্ধারণ করেছে দুই দল। জানা গেছে, সম্প্রতি একাধিক দলীয় ফোরামের বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দলের নেতাকর্মীদের জনগণের ঘরে ঘরে গিয়ে বর্তমান সরকারের সফলতা এবং বিএনপি অপশাসনের চিত্র তুলে ধরার নির্দেশ দিয়েছেন। সর্বশেষ গত ২৩ ডিসেম্বর দলের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়ামে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা প্রেসিডিয়াম সদস্যদের বিভাগওয়ারি দায়িত্ব নিয়ে দলকে সুসংগঠিত করার পাশাপাশি সরকারের উন্নয়নের প্রচার ঘরে ঘরে পৌঁছানোর নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া খালেদা জিয়াসহ জিয়া পরিবারের সব অপকর্ম জনগণের সামনে তুলে ধরারও নির্দেশনা দিয়েছেন। এ নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ১৫টি টিম গঠন করা হয়েছে। ১০ জানুয়ারি থেকে প্রেসিডিয়াম সদস্যের নেতৃত্বে টিমগুলো দেশব্যাপী সাংগঠনিক সফর করবে। এ সব সফরে জনসভা, সমাবেশ, বর্ধিতসভা, উঠান বৈঠক, পথসভায় দেশের জন্য আওয়ামী লীগের অবদান, বর্তমান সরকারের সফলতা এবং দেশের জন্য বিএনপির ক্ষতিকর দিক, তাদের আগুন সন্ত্রাস ও হাওয়া ভবন সৃষ্টির বিষয়গুলো তুলে ধরা হবে।

সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগকে আগের চেয়ে আরো বেশি জনসম্পৃক্ত করে তুলতে কাজ করার পাশাপাশি বিএনপির ‘নেতিবাচক’ রাজনীতি, দেশ পরিচালনায় তাদের ব্যর্থতা, বিএনপি এবং জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচার, লুটপাট-দুর্নীতির চিত্র জনগণের মাঝে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি করে তুলে ধরতে কাজ করবেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ বিশ্বপ্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে ইউনেস্কোর স্বীকৃতির বিষয়টি দেশের অনেক বড় অর্জন। এটির পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াতের পুড়িয়ে মানুষ হত্যাসহ জ্বালাও-পোড়াও সহিংস আন্দোলনের দুঃসহ স্মৃতি সামনে এনে জনগণের মন জয় করতে চায় দলটি। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার বিষয়টিও প্রচারণায় স্থান পাবে। একইসঙ্গে বর্তমান সরকারের সাফল্য, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির প্রচারণা নিয়ে নির্বাচন পর্যন্ত জনগণের দুয়ারে যাবে আওয়ামী লীগ। দলটির নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা নতুন বছরে তাদের এ সব টার্গেটের কথা জানান।

আওয়ামী লীগের দুইজন প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ৫ জন সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বলেন, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ সার্বিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ওয়াদার অধিকাংশই বাস্তবায়িত হয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা বহুমুখী সেতু হচ্ছে, বিদ্যুত্ সমস্যার সমাধান হয়েছে। তাই সার্বিক দিক বিবেচনা করে আওয়ামী লীগকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করে আবারও সরকার গঠনের সুযোগ দেবে জনগণ।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, জানুয়ারি থেকেই দলের সাংগঠনিক সফর শুরু হচ্ছে। সাংগঠনিক কর্মসূচির মাধ্যমে প্রচারণা চলবে, আগামী নির্বাচন পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে।

দশম জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিন অর্থাত্ আগামী বছরের ৩১ অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। একই বছরের ২৯ জানুয়ারি নির্বাচিত সদস্যরা সংসদের প্রথম অধিবেশনে বসেছিলেন। এদিন থেকেই সংসদের ৫ বছরের মেয়াদ শুরু হয়েছে। আর সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বেই নির্বাচনকালীন সরকার থাকবে। সেক্ষেত্রে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই থাকবেন নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান।

সহায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি করে আসা বিএনপির ভূমিকা কী হবে, তা নিশ্চিত করে বলা না গেলেও দলটি যে এবার নির্বাচনের বাইরে থাকবে না তা নিজেরাই বলছে। তাইতো নির্বাচনী প্রচারণায় বিএনপির প্রস্তুতিও ব্যাপক। ৭০টি টিম ইতোমধ্যে তৃণমূলে যাওয়া শুরু করেছে। নতুন বছরকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের বছর হিসেবে ধরে নিয়ে সর্বাত্মকভাবে মাঠে নামতে চায় দলটি।

নতুন বছরে দলের কর্মসূচি ও কলাকৌশল সম্পর্কে নেতাকর্মীদের জানাতে হাইকমান্ডের বিশেষ বার্তা নিয়ে তৃণমূল সফর শুরু করেছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। সফরকালে নির্বাচন ও আন্দোলনের জন্য নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনার পাশাপাশি সাংগঠনিক সমস্যা সমাধানে কাজ করছেন নেতারা।

বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন তারা। সরকারের কর্মকাণ্ডের দিকেও তারা গভীর দৃষ্টি রাখছেন। দলীয় কর্মসূচিতে নানা ধরনের কথা বললেও দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসনের সাজা হওয়ার আশঙ্কা তাদের। যে কারণে চেয়ারপারসনের মামলা ও পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপি এখন থেকেই হিসাব কষতে শুরু করেছে। শেষ পর্যন্ত খালেদা জিয়ার সাজা হয়ে গেলে তা মোকাবিলার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন বিএনপি নেতারা। কেন্দ্রীয় নেতারা সফরকালে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে খালেদা জিয়ার সাজা হলে করণীয় কী হবে এ বিষয়েও বার্তা তৃণমূলে পৌঁছে দেবেন।

এ ছাড়া নতুন বছরে রাজনীতিতে নানা মেরুকরণ হতে পারে বলে বিএনপির আশঙ্কা রয়েছে। তবে নতুন বছরে বিএনপি চেয়ারপারসন দেশবাসীর কাছে নতুন বার্তা দেবেন। সূত্র জানায়, ভোটের আগে জনগণের সামনে তথ্য-প্রমাণ দিয়ে বিশ্বাসযোগ্য কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি কিংবা ক্ষমতার অপব্যবহারের নজির তারা প্রচারণায় তুলে ধরতে চায়। এ লক্ষ্যে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছে দলটি। টানা ১১ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি কোনো ফাঁদে পা দিতে চায় না। দলটি কেন্দ্রীয় নেতারা তৃণমূল সফরে যাবেন। সাধারণ মানুষের কাছে নতুন ধারার রাজনীতি, নতুন কিছু প্রতিশ্রুতি নিয়ে হাজির হতে চান তারা।

বিএনপির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের দুই জন নেতা জানান, কোনো ইস্যুতে যাতে পরস্পরবিরোধী অবস্থান না হয়, সেদিকে দৃষ্টি দিতে নেতাদের নির্দেশনা দিয়েছে দলের হাইকমান্ড। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সবাইকে দলের চেয়ারপারসনের সিদ্ধান্তের বাইরে অন্য কারো নির্দেশ না মানতে কঠোর বার্তা দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ২০১৮ সাল হলো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের বছর। বিএনপির একজন স্থায়ী কমিটির সদস্য জানান, আমরা যে সংসদ ভেঙে দিয়ে আগামী নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধীনে চাচ্ছি, কেন সেনা মোতায়েন চাচ্ছি এসব বিষয় নেতাকর্মীদের কাছে ব্যাখ্যা করব। বিএনপির ভিশন-২০৩০ নিয়ে নেতাকর্মীদের ঝালাই দেওয়ার চেষ্টা করব। যা পরে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে।