Wed. May 7th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪। বুধবার, ১০ জানুয়ারি, ২০১৮: তফসিল ঘোষণা হলো ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি)। গত বছরের ৩০ নভেন্বর নির্বাচিত মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুর পর মেয়র পদটি শূন্য হয়। সারা দেশের মতো মুলত ডিএনসিসিতেও লড়াই হবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে। আর তাই অনেক প্রার্থী ঘোষনা দিয়ে দুই দলের মনোনয়ন পেতে চেষ্টা-তদবির করছেন। প্রার্থীতা চুড়ান্ত হলেই শুরু হয় যাবে মাঠের লড়াই।

আনিসুল হকের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র পদে উপনির্বাচন আগামী ২৬ ফেব্রয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রয়াত আনিসুল হকের মতো আরেক ব্যবসায়ী নেতা আতিকুল ইসলামকে প্রার্থী করার ইঙ্গিত দিয়েছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড। বোর্ডের সিদ্ধান্তের পরই প্রার্থী ঘোষণা এবং প্রতীক বরাদ্দ করবে দলটি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, কয়েক দিনের মধ্যেই আমাদের মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠক। বোর্ড সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠকে দলের মেয়র প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে এবং প্রতীক বরাদ্দ করা হবে।

আসন্ন উপনির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হতে আবেদন জমা দেওয়া যাবে আগামী ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত। তা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২৯ জানুয়ারি। আবেদনকারী প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ২১ ও ২২ জানুয়ারি। এর মধ্য দিয়ে প্রার্থী চূড়ান্ত হবে।

তিন বছর আগে অনুষ্ঠিত ডিএনসিসি নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আনিসুল হক। তিনি বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী তাবিথ আউয়ালকে হারিয়েছিলেন। আইন সংশোধনের পর এবার প্রার্থীরা দলীয় প্রতীকে লড়বেন।

বিএনপির প্রার্থী তাবিথ
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন উপনির্বাচনে তাবিথ আউয়ালকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের মেয়রপ্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করা হয়েছে। সোমবার রাতে ২০-দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রবিবার রাতেই দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়ালকে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতির নির্দেশ দিয়েছেন বলে নীতিনির্ধারণী সূত্রে জানা গেছে।

দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেন, আগামী ১৩ জানুয়ারি প্রার্থীর নাম ঘোষণা করবে ২০-দলীয় জোট। ওই দিন বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে এ ঘোষণা দেওয়া হবে।

এদিকে মেয়রপ্রার্থী চূড়ান্তের পর ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সঙ্গে নতুন যুক্ত হওয়া ৩৬টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলরপ্রার্থী চূড়ান্ত করতে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা কাজ করছেন। তবে আলোচনার ভিত্তিতে কয়েকটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলরপ্রার্থী জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতকে ছেড়ে দেওয়া হতে পারে।

বিএনপি এই উপনির্বাচনকে নিরপেক্ষ সরকার দাবি আদায়ের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে দেখছে। তারা মনে করেন, এই উপনির্বাচনে ক্ষমতাসীনরা যদি অনিয়ম করে বা বিএনপি প্রার্থী জয়লাভ করে উভয় ইস্যুকেই পুঁজি করা হবে। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই জোটের মেয়রপ্রার্থীর পক্ষে প্রচারে নামবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

খালেদা জিয়ার প্রচারে কোনো বাধা আসবে কিনা, জানতে চাইলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা বলেন, প্রতিবন্ধকতার প্রশ্নই ওঠে না। উনি (খালেদা জিয়া) বা উনার মতো কেউ প্রচারে গেলে কোনো বাধা দেওয়া হবে না। আমাদের পক্ষ থেকে কোনো বাধা নেই। সবার জন্য সমান সুযোগ দেব আমরা। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোও যেন সহযোগিতা করে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাজাহান বলেন, আমাদের মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়াল। এটি তো আগে থেকেই ঠিক করা। কারণ এর আগেও তাবিথ আউয়াল বিএনপির সমর্থন নিয়ে উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হিসেবে ভোট করেছেন। ওই ভোটে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছিল। যার কারণে আমরা ভোট শুরুর চার ঘণ্টার মধ্যে ভোটবর্জন করতে বাধ্য হয়েছিলাম। ব্যাপক অনিয়মের পরও সেবার তাবিথ আউয়াল তার জনপ্রিয়তার প্রমাণ রেখেছেন। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে উত্তর সিটি করপোরেশনের উপনির্বাচনে তাবিথ আউয়ালই মেয়র হিসেবে বিপুল ভোটে জয়লাভ করবেন।

বিএনপি নেতারা বলেন, অন্য নির্বাচনের মতো উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। এ কারণে ২০-দলীয় জোট উত্তর সিটি করপোরেশনের উপনির্বাচনে নির্বাহী ক্ষমতাসহ সেনা মোতায়েন চায়। তারা মনে করেন, ভোটের মাঠে সেনাবাহিনী মোতায়েন থাকলে ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারবেন।

তফসিল ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পর মঙ্গলবার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এ নির্বাচনে আমরা অবশ্যই সেনাবাহিনী চাই। নির্বাচনের সাত দিন আগে থেকে আমরা সেনাবাহিনী মোতায়েন চাই।

জোট নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মহানগর উত্তরের আমির সেলিম উদ্দিনকে মেয়রপ্রার্থী হিসেবে সম্প্রতি জামায়াতের দলীয় ফোরামে ঘোষণা দেওয়া হয়। জোটের সঙ্গে আলোচনা না করে জামায়াতের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হন ২০-দলীয় জোটের শরিকরা। সোমবার রাতে জামায়াতের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে জোট নেতা খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। যদিও জামায়াতের প্রতিনিধি তাদের মেয়রপ্রার্থীর পক্ষে শক্ত অবস্থান না নিয়ে বলেন, বিএনপি ও জামায়াতের মহাসচিব পর্যায়ের বৈঠক হলে এটি কোনো সমস্যা নয়। এ বৈঠকেই জোট নেতারা মেয়রপ্রার্থী চূড়ান্তকরণের দায়িত্ব দেন খালেদা জিয়াকে। তারা বলেন, মিডিয়ায় মেয়র পদে অনেক প্রার্থীর নাম এসেছে। এর মধ্যে বিএনপির তাবিথ আউয়াল ও বিজেপির ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ ভালো প্রার্থী। কিন্তু আমরা চাই বিএনপি থেকে প্রার্থী দেওয়া হোক।

গতকাল সাংবাদিকদের মির্জা ফখরুল বলেন, ২০-দলীয় জোটের নেতারা খালেদা জিয়ার ওপর দায়িত্ব দিয়েছেন। তিনি যে মনোনয়ন দেবেন, সেই মনোনয়নকে সমর্থন করবেন। আমার ধারণা, এ নিয়ে (জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ঘোষণা) কোনো সমস্যা হবে না।

জামায়াত সূত্রে জানা যায়, ২০-দলীয় জোটের সিদ্ধান্ত মেনে উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জামায়াত মেয়র পদে কোনো প্রার্থী দেবে না। মেয়রপ্রার্থী ঘোষণার পর পরই ২০-দলীয় জোটের প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামবে জামায়াত। জোটের বৈঠক শেষ হওয়ার পর পরই চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে তারা কয়েকটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে জোটের কাছে প্রার্থী চাইবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ওয়ার্ড হচ্ছে ৩৯, ৪০, ৪৭, ৪৯ ও ৫১ নম্বর ওয়ার্ড। সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ১৬ ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ড। একইভাবে দক্ষিণ সিটিতেও কয়েকটি ওয়ার্ডে জামায়াত কাউন্সিলর পদে প্রার্থী দেবে। এরও একটি তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে তা জানা যায়নি।

সূত্র : আমাদের সময়