Tue. May 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements


খোলাবাজার২৪ শনিবার ২৮ জুলাই, ২০১৮ :পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ পার্টি (পিটিআই)  সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। সম্ভবত পাঞ্জাবের সর্ববৃহৎ প্রাদেশিক পরিষদেও তারাই সরকার গঠন করবে; যদিও বিষয়টি স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং অন্য গ্রুপ বা দলের সমর্থন ছাড়া সম্ভব নয়।

তবে পিটিআইয়ের এই আনন্দঘন মুহূর্ত খুব ক্ষণস্থায়ীও হতে পারে। যদি পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ও পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) ভোট জালিয়াতির যে অভিযোগ এনেছে, তা সত্য হয়।

পিএমএল-এন নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছে। দলটির তরফ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগও আনা হয়েছে। অভিযোগটি হলো, তাদের পোলিং এজেন্টদের ‘ফরম-৪৫-এর অনুলিপি সরবরাহ করা হয়নি; যদিও পোলিং এজেন্টদের সুনির্দিষ্ট সংখ্যা উল্লেখ করেনি তারা। এক টুইট বার্তায় পিএমএল-এনের সভাপতি শাহবাজ শরিফ বলেন, “স্পষ্ট ও ব্যাপক অনিয়মের জন্য পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ সাধারণ নির্বাচন ২০১৮ সালের ফলাফল সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করছে। আমাদের এজেন্টদের ‘ফরম-৪৫’ দেওয়া হয়নি। ফলাফল থামিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং আমাদের পোলিং এজেন্টদের অনুপস্থিতিতে ভোট গণনা করা হয়েছে। এর কোনোটিই সহ্য করা যায় না, মেনে নেওয়া যায় না।”

নির্বাচনী নিয়মাবলি ২০১৭ সালে (পরবর্তী সময়ে সংশোধিত) ‘ফরম-৪৫’-এর কথা উল্লেখ করা হয়। এতে জাতীয় বা প্রাদেশিক পরিষদের যেকোনো নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের প্রয়োজনীয় তথ্য উল্লেখ করা হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, এতে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে দেওয়া ভোটের জেন্ডারভিত্তিক পৃথক তথ্য উল্লেখ করা থাকে। পাকিস্তানের ইতিহাসের এমন ঘটনা এটিই প্রথম। এ ছাড়া নিচের বিষয়গুলো এতে যুক্ত করা হয়—

১. প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নাম।

২. প্রত্যেক প্রার্থীর পক্ষে পড়া বৈধ ভোটের সংখ্যা।

৩. প্রত্যেক প্রার্থীর পক্ষে পড়া মোট বৈধ ভোটের সংখ্যা।

৪. গণনা হয়নি এমন ভোটের সংখ্যা।

ফরম-৪৫ বিতরণের আগে সব তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। যেমন নির্বাচনী বিধির ৮০ নম্বর নিয়মানুসারে, প্রত্যেক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটকে প্রিসাইডিং অফিসার পৃথকভাবে গণনা করবেন। এর জন্য প্রত্যেক প্রার্থীর পক্ষে পরা ব্যালট পেপার আলাদা প্যাকেটে রাখতে হবে।  এই প্যাকেটের ওপর পোলিং এজেন্টদের স্বাক্ষর থাকবে। একইভাবে বাকি প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো (তালিকায় যেমন উল্লেখ করা হয়েছে) সংগ্রহ করে (গণনার পর) পোলিং এজেন্টদের মাধ্যমে সত্যতা যাচাই ও তাদের স্বাক্ষরসহ পৃথক প্যাকেটে রাখতে হবে। ‘ফরম-৪৫’-এর যে নমুনা দেওয়া হয়েছে, তা থেকে স্পষ্ট যে ব্যালটের প্রকৃত গণনা ও ফরমে উল্লেখ করা সংখ্যার মধ্যে (অভিযোগে যেমনটি বলা হয়েছে) পার্থক্য থাকতে পারে। ফলে পুরো প্রক্রিয়াটির বিরুদ্ধেই প্রশ্ন ওঠে। পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন (ইসিপি) এ কথা বলে দায় এড়াতে পারে না যে সব পোলিং এজেন্টই নিজ দলের প্রার্থীদের পরাজয়ের আশঙ্কায় আগেই ভোটকেন্দ্র ছেড়ে গেছেন। এখন প্রশ্ন হলো, প্রিসাইডিং অফিসাররা কি সব কটি প্যাকেটের ওপর নির্দেশনামতো পোলিং এজেন্টদের স্বাক্ষর নিয়েছেন? যদি তাঁরা নিয়ে থাকেন, তাহলে ইসিপির তর্কে জড়ানোর একটা মূল্য থাকবে। অন্যথায় নয়।  

ইসিপি ও এর কর্মচারী, বিশেষ করে প্রিসাইডিং অফিসাররা সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত। নির্বাচনপ্রক্রিয়া স্বচ্ছ রাখা তাঁদের সাংবিধানিক দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত। তবে ইসিপির সচিব যে বিবৃতি দিয়েছেন, তাতে তাঁর দায়িত্বজ্ঞানের ঘাটতি রয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে।

এ ছাড়া এ আইনে প্রিসাইডিং অফিসারকে ফলাফলের প্যাকেটের ওপর কোনো স্বতন্ত্র নির্বাচন পর্যবেক্ষকের স্বাক্ষর নিতে বলা হয়েছে। ইসিপি কি স্বতন্ত্র সুধী সামাজিক সংগঠনগুলোর পর্যবেক্ষকদের আলাদাভাবে এ দায়িত্ব পালনের অনুরোধ জানিয়েছে? অভ্যন্তরীণ বা আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের ‘ফরম-৪৫’ বিতরণের সময় কি ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত থাকার কথা বলা হয়েছিল? এ ব্যাপারে ইসিপি যে ব্যাখ্যা দিয়েছে তাকে আর যাই হোক পর্যাপ্ত বলা চলে না।

অতীত পরিস্থিতি বিবেচনায় নিলে দেখা যাবে ইসিপি কখনোই কোনো বিতর্কের বিশ্বাসযোগ্য এবং গ্রহণযোগ্য সমাধান দিতে পারেনি। নিরপেক্ষতা এবং স্বচ্ছতা যেকোনো নির্বাচনী সংস্কৃতি চর্চার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এবার ফলাফল ঘোষণার আগেই নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠল।