খোলাবাজার২৪.মঙ্গলবার,৩১ জুলাই, ২০১৮ঃ বাসচাপায় দুই শিক্ষাথীর্র মৃত্যুর প্রতিবাদ ও দোষীদের বিচারের দাবিতে সোমবার রাজধানীর বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষাথীর্রা ।
বাসচাপায় দুই শিক্ষাথীর্র মৃত্যুর প্রতিবাদে আন্দোলনরত শিক্ষাথীর্রা সোমবার মিরপুর-১, বিমানবন্দর সড়ক ও সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় অবরোধ করে রাখায় তীব্র যানজটে গোটা নগরী স্থবির হয়ে পড়ে। থমকে যায় নগরীর কমর্চাঞ্চল্য। একই সময় আন্দোলনকারীদের অপর একটি অংশ শেওড়া রেলগেটে রেললাইনের ওপর অবস্থান নেয়ায় দুপুর দেড়টা থেকে ঢাকার সঙ্গে সব ধরনের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে সকাল থেকে দিনভর থেমে থেমে বৃষ্টি এবং নগরজুড়ে তীব্র যানজটের প্রভাবে পরিবহন সংকট দেখা দেয়ায় কমর্জীবী মানুষকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। বিশেষ করে বিকালের পিক-আওয়ারে এ সব দুভোর্গ ঠেলে ঘরে ফিরতে নগরবাসীর রীতিমতো নাভিশ্বাস ওঠে।
অন্যদিকে বাসচাপায় দুই শিক্ষাথীর্ নিহতের ঘটনায় নৌপরিবহনমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্র্রমিক ফেডারেশনের কাযর্করী সভাপতি শাজাহান খানের পদত্যাগসহ নয় দফা দাবি জানিয়ে তা পূরণে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষাথীর্রা। দাবি পূরণ না হলে ফের সড়ক অবরোধের হুমকিও দিয়েছে তারা।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, গতকাল সকাল ১০টার দিকে শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষাথীর্রা কলেজের সামনের রাস্তায় মানববন্ধন করতে গেলে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়। এ সময় শিক্ষাথীের্দর রাস্তায় দঁাড়াতেও দেয়নি তারা। তবে অল্প সময়ের মধ্যে বিপুলসংখ্যক শিক্ষাথীর্ জড়ো হয়ে বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করলে আগের মারমুখি ভ‚মিকা থেকে পুলিশ সরে আসে। এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষাথীর্রা বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাথীর্রা এসে বিক্ষোভে অংশ নেয়। দুপুর ১২টা নাগাদ বিএএফ শাহীন কলেজ, ভাষানটেক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আদমজী ক্যান্টনমেন্ট, তেজগঁাও কলেজ, বাংলা কলেজ, গুলশান কমাসর্ কলেজ, গুলশান ডিগ্রি কলেজ, মাইলস্টোন কলেজ, ঢাকা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কলেজ, বনানী বিদ্যানিকেতন কলেজ ও সরকারি বিজ্ঞান কলেজসহ আশপাশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষাথীর্রা বিক্ষোভে অংশ নিয়ে বিমানবন্দর সড়কের উভয় পাশ বন্ধ করে দেয়। এতে ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই এ সড়কের দু’প্রান্তে শত শত যানবাহনের দীঘর্ সারি জমে ওঠে। বনানী থেকে উত্তরা, উত্তরা থেকে বনানী ও কালশি হয়ে উত্তরা যাওয়ার সড়কগুলো অচল হয়ে পড়ে। এ সময় চালকদের কেউ কেউ বিকল্প পথে গাড়ি চালানোর চেষ্টা করলে যানজট আরও তীব্র হয়। বেগতিক পরিস্থিতিতে সেখানে অতিরিক্ত র্যাব ও পুলিশ মোতায়েন করে যানজট নিরসনের পাশাপাশি বিক্ষুব্ধ শিক্ষাথীের্দর রাস্তা থেকে সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালায়।
এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপস) আনোয়ার লতিফ খান শিক্ষাথীের্দর উদ্দেশে বলেন, ‘দুঘর্টনার পর থেকে অভিযান চালিয়ে জড়িত তিনটি বাসের তিনজন ড্রাইভার ও দুইজন সহকারীকে আটক করা হয়েছে। আমি তোমাদের আশ্বস্ত করতে চাই দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তোমরা আন্দোলন প্রশমিত করো।’
তবে শিক্ষাথীর্রা তার কথায় কণর্পাত না করে উল্টো চিৎকার শুরু করেন। তারা নৌমন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে বিভিন্ন সেøাগান দিতে থাকে। এ পযাের্য় র্যাব এডিজি ঘটনাস্থল থেকে সরে আসেন। বিকাল পৌনে চারটার দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আন্দোলনরত শিক্ষাথীের্দর ধাওয়া দিলে তারা ইট-পাটকেল মারতে মারতে শেওড়ার দিকে সরে যায়। ফলে বিকাল সোয়া চারটার দিকে ওই সড়কে যানচলাচল শুরু হয়।
এদিকে এ ঘটনায় রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় ও মিরপুর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে সিটি কলেজ, আইডিয়াল কলেজ ও ঢাকা কলেজের শিক্ষাথীর্রা। এতে সড়কের দুই পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে ব্যস্ততম এ সড়কে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়। যা ঘণ্টাখানেকের মধ্যে রাজধানীর অন্য সড়কগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে।
দুপুর ১২টার দিকে মিরপুর কমাসর্ কলেজ ও বিসিআইসি কলেজের শত শত শিক্ষাথীর্ মিরপুর-১ সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে। এতে ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। মিরপুর থানার সাব-ইন্সপেক্টর আল আমিন জানান, কলেজের শিক্ষাথীর্রা মিরপুর-১ ও সনি সিনেমা হলের মোড়ে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে জড়ো হয়। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে ঘণ্টা দেড়েক পর তারা সড়ক থেকে সরে গেলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়ে আসে।
স্থানীয়রা জানান, আন্দোলনরত শিক্ষাথীর্রা সড়ক হত্যায় জড়িত পরিবহনের মালিক, শ্রমিকদের কঠোর শাস্তি দাবি করে। পাশাপাশি দুই শিক্ষাথীর্র মৃত্যুতে হাসতে হাসতে প্রতিক্রিয়া জানানোয় নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের পদত্যাগ দাবি জানানো হয়।
বেলা দেড়টার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষাথীের্দর একটি অংশ শেওড়া রেলগেটে রেললাইনের উপরে অবস্থান নিলে দুপুর দেড়টা থেকে ঢাকার সঙ্গে সব ধরনের রেল চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে বিকাল পৌনে ৪টার দিকে শিক্ষাথীর্রা অবরোধ তুলে নিলে ঢাকার সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ শুরু হয়।
ক্যান্টনমেন্ট রেলস্টেশন ম্যানেজার মোজাম্মেল হোসেন জানান, দুপুর দেড়টার দিকে শিক্ষাথীর্রা ক্যান্টনমেন্ট রেল স্টেশনের কাছে শেওড়া এলাকায় রেল লাইনের ওপর অবস্থান নিলে তাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে রেল যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে রেলযাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে বলে স্বীকার করেন তিনি।
পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা জানান, বিমানবন্দর সড়ক, সাইন্সল্যাবরেটরি মোড় ও মিরপুর-১ নম্বর সড়কে অবরোধ থাকলেও এর প্রভাব দিনভর গোটা নগরীতেই পড়েছে। তীব্র যানজটের কারণে সিটি সাভিের্সর প্রায় কোনো বাসই অন্যান্য দিনের অধের্ক ট্রিপও দিতে পারেনি। বিশেষ করে উত্তরা-বনানী, গুলশান ও মিরপুর-পল্লবী রুটে ছিল সবচেয়ে বেশি দুদর্শা।
উত্তরার আরএম গ্রæপের কোয়ালিটি ম্যানেজার শাহাদৎ হোসেন জানান, বেলা ১১টায় আজমপুর থেকে রওনা দিয়ে দুপুর আড়াইটায় তিনি মতিঝিলের গন্তব্যে পেঁৗছেছেন। অফিস থেকে ব্যক্তিগত গাড়িতে রওনা দিলেও তা ছেড়ে পথে তিনবার বাস পাল্টেছেন বলে জানান তিনি।
তার মতো একই সুরে ভোগান্তির কথা জানান বনানীর একটি বীমা প্রতিষ্ঠানের জুনিয়র কমর্কতার্। তিনি জানান, বনানী থেকে উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টর পযর্ন্ত যেতে তার প্রায় দু’ঘণ্টা সময় লেগেছে। তবে এ জন্য তাকে প্রায় ৩ কিলোমিটার পথ হঁাটতে হয়েছে।
আন্দোলনরত শিক্ষাথীের্দর ৯ দফা দাবি: বেপরোয়া ড্রাইভারকে ফঁাসি দিতে হবে এবং এই শাস্তি সংবিধানে সংযোজন করতে হবে। নৌপরিবহনমন্ত্রীর গতকালের বক্তব্য প্রত্যাহার করে শিক্ষাথীের্দর উদ্দেশে নিঃশতর্ ক্ষমা চাইতে হবে। শিক্ষাথীের্দর চলাচলে এমইএস ফুটওভার ব্রিজ বা বিকল্প নিরাপদ ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রত্যেক সড়কের দুঘর্টনাপ্রবণ এলাকাতে স্পিড ব্রেকার দিতে হবে। সড়ক দুঘর্টনায় নিহত ছাত্র-ছাত্রীদের দায়ভার সরকারকে নিতে হবে। শিক্ষাথীর্রা বাস থামানোর সিগন্যাল দিলে, থামিয়ে তাদের বাসে তুলতে হবে। শুধু ঢাকা নয়, সারাদেশের শিক্ষাথীের্দর জন্য হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় চলাচল বন্ধ ও লাইসেন্স ছাড়া চালকরা গাড়ি চালাতে পারবে না। বাসে অতিরিক্ত যাত্রী নেয়া যাবে না।