Thu. Jun 19th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

 

খোলাবাজার২৪.বুধবার, ০১ আগস্ট , ২০১৮ঃ  বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে রাজধানী ঢাকার সায়েন্সল্যাব, নিউমার্কেট, বনশ্রী, রামপুরা, খিলক্ষেত, ভাটারা এলাকায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সড়কগুলোতে অবস্থান নিয়েছে। বেশির ভাগ সড়কে বাস চলাচল নেই বললেই চলে। অ্যাম্বুলেন্সকে যেতে দিচ্ছে শিক্ষার্থীরা। লাইসেন্স না থাকায় দুটি বাসকে আটকে রেখেছে শিক্ষার্থীরা। পুলিশের স্টিকার লাগানো একটি গাড়ির চালক লাইসেন্স দেখাতে না পারায় সেই গাড়িটিও আটকে দেওয়া হয়।

যানবাহন না পেয়ে অনেকে হেঁটেই গন্তব্যস্থলের দিকে রওনা দেন। সায়েন্স ল্যাব এলাকায় পুলিশকে ফুল দিতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের। আজ বুধবার সকাল থেকে রাজধানী জুড়ে এ চিত্র দেখা গেছে।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, পুলিশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে গিয়ে কথা বলছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখার অনুরোধ জানাচ্ছে পুলিশ।

রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসের চাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা গত দুদিন ধরে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সড়কে অবস্থান নেয়। এতে নগরজুড়ে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। মঙ্গলবার উত্তরা এলাকায় যাত্রীবাহী দুটি বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। বিভিন্ন জায়গায় বাস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

কাওলা থেকে শাহাজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর চত্বরে পর্যন্ত রাস্তায় বিভিন্ন বেসরকারি স্কুলের শিক্ষার্থীরা নেমে এসেছে। বেলা ১২টার দিকে তারা রাস্তায় নেমে আসে। এখন বিমানবন্দর চত্বর পুরো অবরুদ্ধ করে রেখেছে। টঙ্গি সেতু থেকে ঢাকামুখী শত শত গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। শিক্ষার্থীদের একটি দল উত্তরার জসিম উদ্দিন নড়কের দিকে অবস্থান নিয়েছে। রাস্তায় নামা শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন গাড়ি এমনকি মোটরবাইক থামিয়ে চাবি কেড়ে নিচ্ছে।

ফার্মগেট এলাকায় সরকারি বিজ্ঞান কলেজের শিক্ষার্থীরা রাজপথে অবস্থান নেয়। ওই সময় ওই রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশ এসে যান চলাচল স্বাভাবিক করে। মোহাম্মদপুরে শিক্ষার্থীরা সকাল নয়টার দিকে মিছিল বের করেছে। গতকালের মতো সারা ঢাকায় আজও বাস কম দেখা যাচ্ছে।

শাহবাগে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরাও যোগ দিয়েছেন।

সকালে মিরপুর এলাকায় দেখা যায়, দু-একটা বাস চলছে, তবে যাত্রীদের ভিড় অনেক বেশি। মিরপুর থেকে গাবতলী, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, মহাখালী সব জায়গাতেই বাসস্ট্যান্ডগুলোতে লোকজনকে বাসের জন্য অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে।

গাবতলীর ট্রাফিক সার্জেন্ট সোহেল রানা সকাল নয়টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘অন্যান্য দিনের তুলনায় আজ বাসের সংখ্যা অনেক কম।’

 

শাহবাগ এলাকায়ও অন্যান্য দিনের তুলনায় কম বাস চলতে দেখা গেছে। শাহবাগ জোনের ট্রাফিক বিভাগের সহকারী কমিশনার শাহেদ আহমেদও জানান, অন্যান্য দিনের তুলনায় আজ বাস চলাচল করছে খুব কম।

কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ বাস চলাচল কম হওয়ার কারণ তাঁরা জানেন না। বাস শ্রমিক বা মালিক সংগঠনের পক্ষ থেকে তাঁদের কিছু জানানো হয়নি।

ক্যামব্রিয়ান, রাউজকসহ বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা সকাল থেকে বিক্ষোভ করছে। তাদের একটি অংশ হেঁটে কাওলা ব্রিজ অতিক্রম করে খিলক্ষেতের দিকে গেছে। রাস্তায় কাওলা ব্রিজের সামনে একটি বাস ভাঙচুর করা হয়। ভাটারায় সড়ক অবরোধ করা হয়।

সায়েন্স ল্যাব থেকে শিক্ষার্থীদের একটি দলকে শাহবাগের দিকে যেতে দেখা গেছে। ওই সময় শিক্ষার্থীদের পুলিশকে ফুল দিতে দেখা যায়। বেলা ১১ টার দিকে সায়েন্স ল্যাব থেকে নিউমার্কেট এলাকায় শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসে। ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে অ্যাম্বুলেন্স দেখলেই শিক্ষার্থীদের রাস্তা খালি করে তা ছেড়ে দিতে দেখা গেছে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীরা চালকদের লাইসেন্স পরীক্ষা করে। লাইসেন্স না থাকায় বিহঙ্গ ও সাভার পরিবহনের দুটি বাস আটকে রাখে তারা।

ধানমন্ডির ল্যাবএইড থেকে সায়েন্স ল্যাব ও নিউমার্কেটের দিকে গাড়ি যেতে দেওয়া হচ্ছে না। গাড়ি ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আইডিয়াল, সিটি কলেজ, ঢাকা কলেজ, গর্ভমেন্ট ল্যাবরেটির স্কুলসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসে।

ফজিলাতুন্নেসা কলেজের এক শিক্ষার্থী বলে, লাইসেন্স নেই—এমন কোনো গাড়িকে তারা পথে চলতে দেবে না।

শিক্ষার্থীদের এই প্রতিবাদে সমর্থনের কথা জানিয়ে দেলোয়ার হোসেন নামে এক চালক বলেন, ‘আমি প্রশিক্ষণ নিয়ে গাড়ি চালাই। অন্য চালকদেরও প্রশিক্ষণ নিয়ে গাড়ি চালানো উচিত। শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করে ভালো করেছে। তারা অ্যাম্বুলেন্স বা স্কুল, কলেজের কোনো গাড়িকে আটকাচ্ছে না। এটা দেখে ভালো লাগছে।

দুপুর ১২ টার দিকে সায়েন্স ল্যাবের ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির সামনে পুলিশের স্টিকার লাগানো একটি গাড়িকে থামিয়ে চালকের লাইসেন্স দেখতে চায় শিক্ষার্থীরা। ওই সময় চালকের লাইসেন্স না পেয়ে গাড়িটি আটকে রাখে শিক্ষার্থীরা।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে বনশ্রী থেকে ইমপেরিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীরা রামপুরা ব্রিজের দিকে রওনা দেয়। পৌনে ১২ টার দিকে বনশ্রীর আইডিয়াল স্কুল ও কলেজের ৫০০ শয়ের মতো শিক্ষার্থী রামপুরা ব্রিজ অবরোধ করে রাখে। সেখানে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। মহাখালিতে এক দল ছাত্র অবস্থান নিলেও পরে তারা সরে যায়।

পৌনে ১২ টার দিকে খিলগাঁও সরকারি ও মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল ও কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, সলিমুল্লাহ, সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অবস্থান নেয়। পল্টন থেকে শিক্ষার্থীদের প্রেসক্লাবের দিকে যেতে দেখা যায়। মালিবাগের দিকে চলাচলকারী সব গাড়ি মৌচাকের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। রামপুরার রাস্তা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।