খোলা বাজার ২৪,বুধবার ৩১ অক্টোবর ২০১৮ঃ খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধি এবং সরকারের সংলাপের আমন্ত্রনকে দ্বিমুখী আচরণ হিসেবে বর্ননা করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার মতে, খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে কোনো সংলাপ বা নির্বাচন ফলপ্রসু হবে না। এতে সংলাপের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বলেও মনে করেন তিনি।
বুধবার (৩১ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে সভাপতির বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এই কথা বলেন। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের মামলা প্রত্যাহার ও খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে এই কর্মসূচির আয়োজন করে বিএনপি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে এবং আসন্ন নির্বাচনে যাতে অংশ নিতে না পারে; সেজন্য মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে সাজা দিয়ে কারাগারে আটক রেখেছে। জামিন পেলেও তাকে জামিন দেয়া হয়নি। একটার পর একটা মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে।’
‘আজকে এটা থেকেই প্রমানিত হয়, একদিকে সরকার সংলাপের আমন্ত্রন পাঠিয়েছে, অন্যদিকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধি করা-এই দুটো সাংঘার্ষিক। এটা কখনোই গণতান্ত্রিক কোনো আচরনের প্রতিফলন ঘটায় না। এতে সংলাপের যে আন্তরিকতা সে আন্তরিকতা প্রমান করে না’ এমনটিই বলেন বিএনপির মহাসচিব।
ভোটাধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনতে বিএনপি আন্দোলন করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশনেত্রী খালেদা জিয়া এই বয়সে অসুস্থ অবস্থায় কারাবরণ করছেন শুধু গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার আন্দোলন করার জন্য।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বলতে চাই, বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে করেছি এই গণতন্ত্রের জন্য। আজকে এই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে যারা আত্মাহুতি দিয়েছে তাদের রক্তের বিনিময়ে ও দেশনেত্রীকে খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে কোনো সংলাপ বা নির্বাচন ফলপ্রসু হবে না।’
সরকারকে ‘গণতন্ত্রের পথে’ ফিরে আসার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করুন। নির্বাচন দিচ্ছেন.. কিন্তু সেই নির্বাচনে একতরফাভাবে হেলিকপ্টারে করে জনগণের কাছে যাচ্ছেন আর আমাদের নেত্রী কারাগারে, আমরা পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি, আমাদের কর্মীরা দাড়াতে পাড়ছে না। এই অবস্থায় কখনা সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন হতে পারে না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সেইজন্য আমরা বলেছি, আমাদের সাত দফা দাবি পুরোটাই মেনে নিতে হবে। সবার আগে এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বাতিল করতে হবে এবং নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করে অবাধ নির্বাচন দিতে হবে। জনগণের চাহিদা পুরণ করতে হবে। ইভিএম ব্যবহার করা যাবে না। সর্বপ্রথম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। তার মুক্তি না হলে কোনো নির্বাচন অর্থবহ হবে না।’
বিচারব্যবস্থা সম্পূর্নরূপে সরকারের করায়ত্ত্ব হয়ে গেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘সাবেক বিচারপতি এসকে সিনহা সাহেব বলে গেছেন, বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা সম্পূর্নরূপে সরকারের করায়ত্ত্ব। এখানে বিচার বিভাগের কোনো স্বাধীনতা নেই। এজন্য তাকে জোর করে দেশ থেকে বের করে দেয়া হয়েছে।’
‘গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে’ চলমান সংগ্রামকে আরো সুসংহত করতে এবং খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের দাবি আদায়ে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল।
মানববন্ধনে প্রধান অথিতির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সরকার খালেদা জয়া ও তারেক রহমানকে বাদ দিয়ে ২০১৪ সালের মতো নির্বাচন করতে চায়, কিন্তু বিএনপিকে ছাড়া কোনো নির্বাচন অংশগ্রহনমুলক হবে না, হতে দেয়াও হবে না।’
জাতীয় ঐক্যফ্যন্টের সাত দফা দাবি মেনে নিয়ে একটি অবাধ নির্বাচনের আয়োজন করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তা না হলে সৃষ্ট অরাজকতার জন্য রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার জন্য সরকার দায়ী থাকবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘সংলাপ, আন্দোলন, নির্বাচন একসাথে চলবে।’
তিনি বলেছেন, ‘এতদিন যাবত যে কৌশল নিয়ে শান্তিপূর্ন আন্দোলন করেছি সেটি ফলপসূ হয়েছে। সরকার সংলাপ করতে সম্মত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতাসীন দল দেশের মানুষের মনের কথা উপলদ্ধি করেছে।’
সংলাপে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা দাবির আলোকেই আলোচনা হবে বলে জানান বিএনপির এই নীতি নির্ধারক।
মানববন্ধনে বিএনপি নেতাদের মধ্যে ড. আব্দুল মঈন খান, ভাইস-চেয়ারম্যান বেগম সেলিমা রহমান, বরকত উল্লাহ বুলু, মো. শাজাহান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, রুহুল আলম চৌধুরী, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আব্দুস সালাম, আবুল খায়ের ভূইয়া, যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, বিশেষ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।