খোলা বাজার ২৪,শুক্রবার,০৯ নভেম্বর ২০১৮ঃ ররাজশাহী থেকে মিজানুর রহমান : নির্বাচনের সমান মাঠ তৈরি না হওয়ায় ঘোষিত তফসিল গ্রহনযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আমাদের কথা খুব পরিস্কার নির্বাচনের সমান মাঠ তৈরি করতে হবে, সকল দলকে সমান অধিকার দিতে হবে, দেশনেত্রীকে মুক্তি দিয়ে তাকে কাজ করতে দিতে হবে। অন্যথায় কোনো নির্বাচন তফসিল গ্রহনযোগ্য হবে না।
জনসভার প্রধান অতিথি ফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন অসুস্থতার জন্য রাজশাহী যেতে না পারলেও মোবাইলে জনসভার উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে নির্বাচন কমিশনের ‘তড়িঘড়ি’ করে তফসিল ঘোষণার নিন্দা জানান।তিনি বলেন, তড়িঘড়ি করে তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। এটা জনগনকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা, এটা সংবিধান পরিপন্থি, গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে কাজ হয়েছে বলে আমরা মনে করি।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে সরকারের পদত্যাগ , নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ সুষ্ঠু ও অংশগ্রহন মূলক নির্বাচন মাদার অব ডেমোক্রেসি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দীর নিঃশর্ত মুক্তি ও এবং ৭ দফা দাবী আদায়ের লক্ষে জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে এ জনসভার আয়োজন রাজশাহী মহানগর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। মাঠে দুই পাশের দেওয়ালে টানানো হয়েছে জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ছবি সম্বলিত ব্যানার। দুপুর ১ টার দিকেই সমাবেশ স্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। জিরো পয়েন্ট, আলু পট্টি মোড়, রানী বাজার মোড়, জাদুঘর মোড়, সোনাদীঘি মোড় ও সাহেব বাজারসহ পুরো শহরে জনতার ঢল নামে।জনসভা উপলক্ষে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সড়ক থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন ছিল।
মির্জা ফখরুল বলেন, বক্তব্য দীর্ঘ নয়, সময় খুব সংকীর্ণ, সংকট আরও ভয়াবহ। আজকে প্রশ্ন বাংলাদেশে গণতন্ত্র থাকবে কি থাকবে না। প্রশ্ন বাংলাদেশ স্বাধীন স্বার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকতে পারবে কি পারবে না। আমাদের কথা বলার অধিকার আমাদের ভোট দেওয়ার অধিকার থাকবে কি থাকবে না, সংগঠন করার অধিকার থাকবে কি থাকবে না, মৌলিখ প্রশ্ন হয়ে দাড়িয়েছে। তিনি বলেন, আমরা ঐক্য করেছি, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগে মিটিংয়ে বলেছিলেন, আমি হিংসা চাই না, শান্তি চাই না। আপনারা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করবেন। সকলকে ঐক্যবদ্ধ করবেন।মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা সংলাপে দাবি দিয়ে এসেছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। সংসদ ভেঙে দিতে হবে। দেশনেত্রীকে মুক্তি দিতে হবে। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আমরা জানি আপনারা অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। দেশের গণতন্ত্র পুনপ্রতিষ্ঠার জন্যেই আপনার এই ত্যাগ। মামলা হামলায় আপনারা জর্জড়িত।
এখানে একজনও নেই যার বিরুদ্ধে মামলা নেই। বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল নেতাকর্মীদের মুক্তি দিতে হবে। তাহলেই নির্বাচনে যাব উল্লেখ করে তিনি বলেন, নইলে নির্বাচনে যাব না। দেশনেত্রীকে মুক্তি দিয়ে তাকে নির্বাচনের মাঠে কাজ করতে দিতে হবে। অন্যথায় কোনো তফসিল গ্রহণযোগ্য হবে না হবে না।এই রাজশাহী থেকে অনেকে রক্ত দিয়ে বিদায় নিয়েছে তাদের রক্ত বৃথা যেতে দেওয়া যাবে না। আমরা জানি রাস্তায় আপনাদের বাধা দিয়েছে। কিন্তু সব বাধা উপেক্ষা করে দেশনেত্রীর মুক্তির জন্য গণতন্ত্রের জন্য এখানে এসেছেন।সবশেষে জানতে চাই আপনারা কি দেশনেত্রীর মুক্তি চান? তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনতে চান, গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা চান, তাহলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করতে হবে। আন্দোলন করেই গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে।
এলডিপির সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেল অলি আহমেদ বলেন, নির্বাচন হবে কিনা, নির্বাচনে আমরা অংশগ্রহন করবো কিনা এখনো সেই সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে একটা সিদ্ধান্ত হয়েছে সেটা হচ্ছে আমাদের বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। তরুনদের প্রতি বলব, আমরা মুক্তিযুদ্ধের সময়ে যেভাবে জান দিতে গিয়েছিলাম আপনাদেরকে সেই জান দেয়ার কথা বলব না। কিন্তু রাস্তায় তো সকলে দাঁড়াতে পারেন বেগম খালেদা জিয়ার জন্য। একটু হাত তুলে প্রশাসনকে দেখান, প্রধানমন্ত্রী দেখুক- কতগুলো হাত, কতগুলো লোক। আপনারা ক্ষমতা পেয়ে গেলে এতোগুলো লোক আসবে না। একটু জোরে তালি বাজান সরকার শুনক।
জেএসডি সভাপতি আসম আব্দুর রব বলেন, সংলাপে গিয়েছিলাম, দেশ জাতিকে বাচাতে চেয়েছিলাম। বলছি সংঘর্ষে যাবেন না। আমরা নির্বাচনে আসতে চাই। নির্বাচনে আসতে চাই। নেত্রীকে মুক্তি দেন, নেতাকর্মীদের মুক্তি দেন। ১৭০ দিন হরতাল করে তত্ত্বাবধায়ক দাবির সময় শেরাটনের সামনে বাসে পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ হত্যার কথা আমরা ভুলে যাইনি। সংলাপে দাবি করেছিলাম, সংসদ বাতিল করেন, আপনি পদত্যাগ করেন। শুনলেন না। তরিঘরি করে তফসিল ঘোষণা করে দিলেন। আমরা যাতে নির্বাচনে যেতে না পারি। ৯০ ভাগ ভোটারকে বাদ দিয়ে সাত দফা না মেনে দেশে নির্বাচন হতে পারে না। যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন করেছিলেন সেটা কি সংবিধানে ছিল। আজকে বলছেন তফসিল ঘোষণার পরে আন্দোলন বেআইনী। যখন বিরোধী দলে ছিলেন তখন বেআইনী ছিল না। এসব তালবাহানা করে পার পাবেন। দাবি মানতে হবে। তিনি আরো বলেন, হিন্দু,বৌদ্ধ খ্রীষ্টান মেরেছেন। আল্লাহর নবীর খুৎবার পরিবর্তে মসজিদে সরকারের খুৎবা পড়িয়েছেন। এবার আর রক্ষা নাই। জেগেছে জনতা দেখে যান। পুলিশ দিয়ে বাধা দিয়েছেন। এবার ভোটের দিন লড়াই। এই লড়াইয়ে জিততে হবে। তফসিল যদি না পিছান। জান দেব তো দাবি ছাড়বো না। আপনারা যখন তফসিল ঘোষণার পরে আন্দোলন করেন। তখন বেআইনী হয় না। আমরা করলে বেআইনী হয়ে যায়? কি করবেন জেলে নেবেন। ৬ বছর জেলে ছিলাম, জেল ভয় পাই না। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। তফসিল না পিছালে নির্বাচন কমিশনে পদযাত্রা হবে।
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে চাইলে ঐক্যফ্রন্ট অটুট রাখতে হবে। শেখ হাসিনাকে বলেছিলাম আলোচনায় বসুন, বসেনি। এবার আলোচনায় বসেছে। যেদিন আলোচনায় বসেছে সেদিনই আপনাদের বিজয় হয়েছে। আপনারা কি শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় চান। বাংলাদেশের রাজনীতি মানেই বেগম খালেদা জিয়া , তাকে বন্দি করে রাখা সম্ভব নয়। টাঙ্গাইল থেকে সড়ক পথে এসেছি, রাস্তায় রাস্তায় হাসিনার মাইটা পুলিশ বাধা দিয়েছে। আমাকেও ফিরাতে পারেনি। এই মাঠের মানুষদের পারেনি। যে পুলিশরা ঘুষ দিয়ে ভর্তি হয়েছেন তাদের কথা দিলাম তাদের ঘুষের টাকা ফিরিয়ে দেব। প্রত্যেক পুলিশকে দশ লাখ করে ফিরিয়ে দেব। কারণ মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, পাতিমন্ত্রীরা প্রত্যেকটা পুলিশের কাছ থেকে দশ লাখ টাকা খেয়েছে।
তিনি বলেন, বিএনপি রাজাকারের গাড়িতে পতাকা দেয়নি। আওয়ামী লীগ রাজাকারের গাড়িতে পতাকা দিয়েছে। ষড়িশাবাড়ির নুরু মাওলানার গাড়িতে পতাকা দিয়েছে। রংপুরের আসিকুর রহমান, চাদপুরের মখা আলমগীরের গাড়িতে পতাকা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করে বঙ্গবীর বলেন, পরশু দিন শেখ হাসিনা কথা দিয়েছিলেন জনসভায় বাধা দেবেন না। কিন্তু আমার গাড়ি ৫ বার ধরেছে। তারপর আমাকে অন্য রাস্তা দেখিয়ে দিয়েছে। আমি খুজে বের করেছি। আল্লাহ যদি ২ বছর সময় দেয়, তাহলে খুজে বের করবো, যে বেটা আমাকে অন্য রাস্তা দেখিয়ে দিয়েছে। আমি রাস্তা চিনি বিধায় জনসভায় যোগ দিতে পেরেছি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ, তাকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। চিকিৎসা ছাড়াই জোড় করে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তার কি দোষ ছিল, তিনি দেশের জনগণের ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করছিলেন। সেজন্য এই সরকার তাকে কারাগারে রেখেছে। কারণ এই সরকার জনগণকে ভয় পায়। তার ৫ জানুয়ারি প্রহসন করে গায়ের জোরে ক্ষমতায় আছে।সাবেক প্রধান বিচারপতিকে কিভাবে ঘার ঘরে বের করে দিয়েছে তা আপনারা দেখেছেন। সেই প্রধানবিচারপতি লিখেছে যে দেশের প্রধানবিচারপতি ন্যায় বিচার পায় না, সে দেশের জনগণ কিভাবে ন্যায় বিচার পাবে।আপনারা কি আগামী নির্বাচন বেগম খালেদা জিয়াকে ছাড়া হতে দেবেন? ৫ জানুয়ারি নির্বাচন বেগম খালেদা জিয়া বয়কট করার কারণে নির্বাচন হয়নি।এবারও বেগম খালেদা জিয়াকে ছাড়া জনগণ কোনো নির্বাচন হতে দেবে না।বিএনপির এই নেতা বলেন, সাত দফার আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে, প্রশাসনকে বলতে চাই, আপনারা বাধা দিয়েছেন। কিন্তু রাখতে পারেন না। জনগণের জোয়ার বাধা দিয়ে রাখা যায় না। প্রশাসনকে বলতে চাই, আওয়ামী লীগের সময় শেষ। জনগণের টাকায় আপনাদের বেতন হয়। আপনারা জনগণের পাশে দাড়ান। যদি না দাড়ান তাহলে জনগণ একদিন আপনাদের কাছে তার কৈফিয়ত দাবি করবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ আহমেদ বলেছেন,আমরা সংঘাত-সংঘর্ষ এড়াতে আলোচনার পথ বেঁছে নিয়েছিলাম কিন্তু সংলাপ সফল হয়নি। কারণ এই সরকার ক্ষমতা ছাড়তে চায় না। আমাদেরকে প্রস্তুতি নিতে হবে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো আর কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না।‘আমরা সরকারকে বিনা চ্যালেঞ্জে পার হতে দিতে পারি না। আমরা যদি মাঠে নামি তাহলে জনতার জোয়ারে নৌকা ভেসে যাবে। এদেশের মানুষ এই সরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। গত ১০ বছরে মানুষ ভোটের অধিকার হারিয়েছে। সমানভাবে বিচার পাওয়ার অধিকার হারিয়েছে। এই স্বৈরাচারী সরকার ক্ষমতা ছাড়তে চায় না। এ জন্য একদিনে আমাদের ২২০০ নেতাকর্মী গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আমাদের নেত্রীর ভালো চিকিৎসার কথা বলেছেন। কিন্তু একদিনের মধ্যে বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা না দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন চোখেও দেখেনা, কানেও শোনেনা। আমরা তাদের তফসিল পেছানোর অনুরোধ করেছিলাম, তারা তা করেনি। এই নির্বাচন কমিশন, সরকারের তল্পিবাহক কমিশন। নির্বাচন কমিশন নাকি আজ প্রশাসনের দায়িত্ব নিয়েছেন। এটা মিথ্যা কথা।
নাগরিক ঐক্যর আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, নির্বাচন কমিশনকে এখনো বলব, ২৩ মার্চ ডিসেম্বর না করে ২৩ জানুয়ারি করলে সমস্যা কোথায়? তফসিল বদলান। মাত্র ১০ দিনের মধ্যে তিন শ আসনে আমরা এই জোট নির্বাচনে অংশ গ্রহন করবো। আমরা আন্দোলন করছিলাম সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্যে। আর আপনারা এমন একটা ফাঁদ পেতেছেন যাতে আমরা নির্বাচনে যেতে না পারি। ওই ফাঁদ, ওই বেড়াজাল, ওই অত্যচার ছিন্নভিন্ন আমাদেরকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। নির্বাচন ২৩ জানুয়ারি হলে অসুবিধা হতো না। আমরা নির্বাচনে যেতে চাই, কিন্তু শেখ হাসিনা সরকার যা শুরু করেছে তাতে নির্বাচন করা সম্ভব না। বিমানবন্দর থেকে এখানে আসতে আমার গাড়ি দুবার আটকে দিয়েছে, আমি অপিরিচিত কেউ না। আমার গাড়ি কেন আটকাবে। ওরা মনে করেছে রাস্তা বন্ধ করে, গাড়ি আটকে গ্রেফতার করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হবেন, সে আশায় গুড়ে বালি। তিনি বলেন, সামরিক বাহিনীকে এত ভয় পান কেন। এত কিছু হয়েছে তারাতো ক্ষমতা নেয়নি। আমরা সামরিক বাহিনী চাইনা, কিন্তু শেখ হাসিনাকেও চাই না। ক্ষমতায় থেকে শেখ হাসিনারা যদি মনে করেন এক মাঘে শীত যায় তাহলে ভুল করবেন। এক মাঘ যদি বেগম খালেদা জিয়া জেলে থাকেন তাহলে শেখ হাসিনাকে দশ মাঘ থাকতে হবে।নির্বাচন কমিশনকে বলছি নির্বাচন পিছিয়ে দিন। এমন ফাদ পেতেছেন যেন আমরা নির্বাচন করতে না পারি। কিন্তু আমরা জনগণকে সাথে নিয়ে সকল ফাদ ছিন্নভিন্ন করে ফেলবো, একতরফা নির্বাচন কোনোভাবে হতে দেব না।আপনারা বলছেন নির্বাচনে আসুন, কিন্তু বিএনপির মতো একটি বড় দলের নেত্রীকে জেলে রেখে কিভাবে নির্বাচনে যাবে।
গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করলা। তিনি বলেছিলেন সভা সমাবেশে বাধা দেওয়া হবে না, গ্রেফতার করা হবে না। কিন্তু আমরা কি দেখলাম, তাহলে আমরা কি ধরে নেব হয় প্রধানমন্ত্রীর কথা প্রশাসন মানে না, অথবা তিনি দিনে আমাদের সাথে এক কথা বলেন, আর রাতে প্রশাসনকে এক রকম নির্দেশ দেন।
জনসভা উপলক্ষে রাজশাহীর সাথে সড়ক পথের সকল রুটে বাস চলা বন্ধ :
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জনসভা উপলক্ষে রাজশাহীর সাথে সড়ক পথের সকল রুটে বাস চলা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। রাজশাহী থেকে ঢাকা রুটে সব ধরনের বাস বন্ধ করে দিয়েছেন পরিবহন শ্রমিকরা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজশাহী উদ্দেশে ছেড়ে যায়নি কোন রোডের বাস। পরিবহন নেতারা বলছেন, নাটোরে বাসশ্রমিকের ওপর হামলার ঘটনায় বাস বন্ধ আছে। তবে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু বলেন, রাজশাহীর মাদ্রাসা মাঠে ঐক্যফ্রন্টের জনসভাকে কেন্দ্র করেই আকস্মিকভাবে বাস চলা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর আগে ঐক্যফ্রন্টের জনসভাকে কেন্দ্র করে ঢাকা ও সিলেটেও একই কাজ করা হয়েছিল বলে অভিযোগ করেন মিনু। এদিকে, আকস্মিক বাস চলা বন্ধের কারণে রাজশাহী-ঢাকা রুটে সাধারণ যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েছেন।
পথে পথে ব্যরিকেট ভেঙ্গে রাজশাহীর জনসভায় জনতার ঢল : বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠাসহ সাত দফা দাবিতে রাজশাহী বিভাগীয় জনসভায় জনতার ঢল নামে। গতকাল শুক্রবার পুলিশি বাধা, হামলা, গ্রেফতার উপেক্ষা করে জনসভায় যোগ দেয় নেতাকর্মীরা। রাজশাহী মহানগর ও জেলা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, বগুড়া, নাটোর, জয়পুরহাট, সিরাজগঞ্জ, পাবনা থেকে জনগণ দুপুরের আগেই মাঠ প্রাঙ্গণে আসতে থাকে। অনেকে আবার আগের দিন বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেও রাজশাহী শহরে অবস্থান নেয়। জুমার নামাজের পরমাদ্রাসার মাঠ পূর্ণ হয়ে যায়। এক সময় পুরো শহর পরিণত হয় জনসমুদ্রে। জনসভা স্থলে উপস্থিত হওয়া সকলেই দুর্নীতিবাজ, স্বৈরাচারী সরকার বিদায় চাই, নিতে হবে, ‘এক দফা এক দাবি, স্বৈরাচার তুই কবে যাবি?’ ‘এক দফা এক দাবি, হাসিনা তুই কবে যাবি?’ ‘শেখ হাসিনার সময় শেষ, খালেদা জিয়ার বাংলাদেশ।’ ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই, মুক্তি চাই, ‘খালেদা জিয়ার কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’, ‘আমার নেত্রী আমার মা বন্দি থাকতে দিবো না’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকে।
জনসভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই, তারেক রহমানের মুক্তি চাই। এই মুক্তি কার কাছে চান? আমরা কি তাদের মুক্তি দিতে পারি? তিনি অভিযোগ করে বলেন, আজ যখন এই শহরে আসি তখন দেখি কোন লোক নেই, জন নেই। যেন কারফিউ জারি করা হয়েছে। কোন লোককে আসতে দেবে না। গাড়ি নেই। এর আগে বিভিন্ন শহরে যখন সমাবেশ করেছি। তখনও একই রকম কারফিউ জারি করা হয়েছে। জনতার ঢেউ থেমে থাকে না। এরপরও আমি দেখতে পাচ্ছি আমার সামনে দিয়ে বাধ ভাঙা জোয়ারের মতো মানুষ আসছে। এই মানুষ আসবে। জোয়ার বন্ধ করা যাবেনা। যতো বাধা দেয়া হোক না কোন কাজ হবে না। হামলা মামলা, হত্যা, গুম করে কেউ চিরদিন ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারে নাই। তিনি আরো বলেন, ৭ দফা বাস্তবায়ন না করে নির্বাচনে যাওয়ার চিন্তা ভাবনা করা যাবে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, বিভিন্ন চিন্তা ধারার মানুষ কেন এক মঞ্চে। দেশের ঘটনা কি, আজকে গণতন্ত্র নিখোঁজ। আপনারা কি বিশ্বাস করেন শেখ হাসিনার নেতৃত্ব কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে? আজকে আপোষহীন নেত্রী কারাগারে। তাকে কারাগারে রেখে আপনারা নির্বাচনে যাবেন? ঐক্যফ্রন্টের সাত দফায় প্রধানমন্ত্রী বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়েছেন। সাত দফা না মানলে আপনারা নির্বাচনে যাবেন? নুরুল হুদার অধীনে নির্বাচন, শেখ হাসিনাকে রেখে নির্বাচন, সেই নির্বাচনে আপনারা ভোট দিতে পারবেন? বর্তমান নির্বাচন কমিশন কে এম নুরুল হুদা এবং শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে গেলে হাসিনা আজীবন প্রধানমন্ত্রী, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আমৃত্য কারাগারে এবং তারেক রহমান আজীবন নির্বাসনে থাকবেন। জাতীয় নেতাদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, এ সমাবেশের মতামত দেখেছেনআমরা যদি সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করি এদেশের মানুষ আমাকে আপনাকে ছাড়বেন না। তাই বলছি হুদাকে নামান, শেখ হাসিনাকে নামান তারপরে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিন। আমরা নির্বাচন বিরোধী নই। জনগণের ভোট দেওয়ার পরিবেশ তৈরি করে আমরা নির্বাচনে গেলে জয়ী হবো যদি ভোট দিতে পারি।গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, একাত্তরের পুলিশ ভাইয়েরা চাকরি ছেড়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিল। আজকে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষকে আহ্বান করব। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যোগ দিন। পুলিশের উর্ধোতন কর্মকর্তাদের বলব, আপনারা সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিন। তা নাহলে আপনাকে, আমাকে জনগণ ক্ষমা করবে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, আওয়ামী লীগ বারবার জোড় করে ক্ষমতায় এসেছে। ২০০৮ সালে পাতানো নির্বাচন, ১৪ সালে ভোটার বিহীন নির্বাচনের নামে প্রতারনা করে ক্ষমতা দখল করেছে। এবার তারা একতরফা নির্বাচন তরার জন্য তরিগড়ি করে তফসিল ঘোষণা করেছে যাতে বিরোধী দলে নির্বাচনে না যেতে পারে। জনগণ এবার ভোটার বিহীন নির্বাচন হতে দিবে না। তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায় ভাবে কারাবন্দি করে রেখেছে। নির্বাচনের আগে তাকে মুক্তি দিতে হবে। সরকারের অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাড়িয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করা হবে।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, এই সরকারের ভীত নড়েবড়ে হয়ে গেছে। এই সরকারের ভীত হল পুলিশ, দুর্নীতি, অনাচার, ঘুস। এর বাইরে কিছু নেই। আজকের সমাবেশকে কেন্দ্র করে যানবাহন বন্ধ করে দিয়েছে, বাস বন্ধ করে দিয়েছে। তারপরও সব কিছু উপেক্ষা করে এতো লোক এসেছেন। এতো লোককে কি গ্রেফতার করা যাবে?গ্রেফতার করা সম্ভব? যাবেনা। তাদের ভীত গেছে। পালাবার পথ খুঁজছে। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আজকে দেশের বিচার বিভাগ ও বিচারকরা অসুস্থ হয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি অসুস্থ বিচারবকরা। বিচারকরা সুস্থ্য হলে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে। নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনাদের ভোটের বাজারে আসতে হবে। এবার আপনাদরা বিজয়ী হবেন। বিজয় হলে কি হবে? কৃষক, ছাত্র, জনতার বিজয় হবে।
চেয়াপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মিজানুর রহমান মিনুর সভাপতিত্বে ও মহানগর মহানগর সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলনের পরিচালনায় জনসভায় আরো বক্তব্য রাখেন, জনসভায় জেএসডির আবদুল মালেক রতন, এম এ গোফরান, গণফোরামের, সুব্রত চৌধুরী, জগলুল হায়দার আফ্রিক, মোশতাক আহমেদ, রফিকুল ইসলাম প্রতিক, নাগরিক ঐক্যের এসএম আকরাম, শহীদুল্লাহ কায়সার, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের হাবিবুর রহমান তালুকদার বক্তব্য রাখেন।বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইসচেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, আমীনুল হক, বিএনপি চেয়ারপারসনে উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, অধ্যাপক শাহজাহান মিয়া, হাবিবুর রহমান হাবিব, কামরুল মুনির, আবদুস সালাম, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হারুন অর রশিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ও রাজশাহীর সাবেক সিটি মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাদিম মোস্তফা, সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়া।২০ দলীয় জোটের শরিক এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জমিয়তের উলামায়ের ইসলামের মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী, বিকল্পধারা বাংলাদেশ এর একাংশের শাহ আহমেদ বাদল বক্তব্য দেন।
জনসভায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিসভার সিনিয়র মন্ত্রী মশিয়ুর রহমান যাদু মিয়ার মেয়ে পিপলস পার্টি অব বাংলাদেশ(পিপিবি) আহবায়ক রিটা রহমানকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। গতকাল তার দল ২০ দল যোগ দেয়। এছাড়াও জনসভায় আরো উপস্থিত ছিলেন, জনসভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হেলালুজ্জামান লালু, আবদুল লতিফ খান, ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মমিন তালুকদার খোকন, সহ জলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, সহ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, নির্বাহী কমিটর সদস্য সেলিম রেজা হাবিব, দেবাশীষ রায় মধু, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, বগুড়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ভিপি সাইফুল ইসলাম, বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্যশামসুদ্দিন দিদার, শায়রুল কবির খানসহ লক্ষ লক্ষ মানুষ জনসভায় যোগ দেয়।