বৃহঃ. মার্চ ২৮, ২০২৪
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements


খােলাবাজার২৪,সোমবার,১০ ডিসেম্বর ২০১৮ঃ নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসছে। সরকারদলীয় প্রার্থী এবং অন্যান্য বিরোধী দলের যাঁরা আছেন, তাঁরাও এ নিয়ে একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে আছেন। নির্বাচনের আগে আগে নানা ধরনের চেনা পরিবেশ ও কর্মকাণ্ড দেখা যায়, সেসব শুরু হয়েছে। নমিনেশন পাওয়া না-পাওয়ার বিষয়ে শেষ সময়ের যাচাই-বাছাই চলছে। অনেকে বাদ পড়েছেন। নানা ধরনের অভিযোগ ও অসম্পূর্ণ হলফনামার কারণে প্রার্থিতা প্রাথমিক পর্যায়েই বাতিল করা হয়েছে। এখানে কিছু শোভন ও অশোভন বিষয় দেখা গেছে। কিন্তু নির্বাচনের বিষয়ে এখনই চূড়ান্ত কিছু বলা যায় না। নির্বাচন কেমন হবে, নির্বাচনী পরিবেশ ও পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে, কী হবে—এসব জানার জন্য আমাদের আরো কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। কিছু লক্ষণ যে একেবারে বোঝা যাচ্ছে না, তাও নয়। যদিও নির্বাচনে দলগুলোর ম্যানিফেস্টো এখনো ঘোষণা করা হয়নি। মনোনয়ন চূড়ান্ত হলে তখন এ নিয়ে মন্তব্য করাটা সহজ হবে। সরকারি দলের প্রার্থীরা যেমন, বিরোধী দলে যাঁরা আছেন এবং বিএনপি—সব দলের ভেতর থেকেই নানাভাবে চেষ্টা করছেন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য নিজেদের তৈরি করতে। কিন্তু বিএনপি তো সেভাবে কোনো ক্যাম্পেইন করতে পারছে না। প্রচার-প্রচারণার কথা না হয় বাদই থাকল, গ্রেপ্তার আতঙ্কে বিএনপির অনেক নেতা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাঁরা বাড়িতে থাকতে পারছেন না। ভোটারদের কাছে গিয়ে কথা বলার মতো সুযোগও তাঁরা পাচ্ছেন না। এটা একটা সংকট তৈরি করছে তাঁদের জন্য।

তবে এবারের নির্বাচনে আসলে কী ঘটবে, তা দেখার জন্য সময় লাগবে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দল যারা আছে, চূড়ান্ত পার্থী বাছাই নিয়ে নানা দ্বন্দ্ব ও লড়াই আছে। এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে আরো সময় দরকার। এবারের নির্বাচন অত্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে বলে আন্দাজ করা যাচ্ছে। কিংবা শেষ মুহূর্তে গিয়ে ব্যাপার কী দাঁড়াবে—এখনই আসলে বলা কঠিন।

সুষ্ঠু ও অবাধ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য এখন সবচেয়ে বড় যে জিনিসটা দরকার সেটা হচ্ছে, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা। এটা অত্যন্ত জরুরি। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য এটার দরকার আছে। মানে এর কোনো বিকল্প নেই আর কি। সব দলের জন্য সমান সুযোগ ও অধিকার তৈরির প্রক্রিয়া থাকতে হবে। নির্বাচন কমিশনকেই এটা নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ কোনো দলকে ঢালাওভাবে সুযোগ ও স্বাধীনতা দেওয়া হবে, অন্য বিরোধী দলের নেতাকর্মীকে কোণঠাসা করা হবে, নানা ধরনের নিয়মের বেড়া তৈরি করে গ্রেপ্তারের আওতায় এনে ভয়ের মধ্যে রাখতে হবে—এভাবে হয় না।

কয়েক দিন আগে মাহবুব তালুকদারের একটি লেখা বেরিয়েছে জাতীয় একটি দৈনিকে। তাঁর সেই লেখাটি নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে দেখলাম। অনেকেই বলতে চাচ্ছেন যে তিনি নির্বাচন কমিশনের কাজ ও পরিকল্পনার গোপনীয়তা লঙ্ঘন করছেন। তিনি এটা করতে পারেন না। পারবেন না যে, সে বিষয়ে শপথ নিয়ে তিনি তাঁর দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। কিন্তু আমি মনে করি, নির্বাচন কমিশনের কোনো কর্মকাণ্ড গোপন কিছু নয়। গায়েবি মামলা গায়েবি নয় প্রসঙ্গ এবং আরো নানা বিষয় নিয়ে তিনি যে বিশদ বিবরণ তুলে ধরেছেন, তা নিয়ে মানুষের কৌতূহল ও জানার একটা আগ্রহ তো থাকতেই পারে। ফলে তিনি ভুল কোনো কাজ করেছেন বলে আমি মনে করি না।

নির্বাচনের আগে ভোট বানচাল করার নানা চেষ্টা হতে পারে বলে অভিযোগ ও আশঙ্কা করছে সরকার। এ ক্ষেত্রে  জামায়াত, শিবির ও হেফাজত একটা হুমকি। কিন্তু তারা আলাদাভাবে কোনো হুমকি নয়। ভোট বানচালের জন্য তারা বিশেষ কোনো শক্তি বা কৌশল দেখাতে পারবে বলে মনে হয় না। আর নির্বাচনে জামায়াত স্বতন্ত্রভাবে কোনো সাফল্য পাবে, তা ঠিক মনে হয় না। এটা কারা এবং কেন বলে আমার বোধগম্য হয় না। অতীতে তারা যে নির্বাচন করেছে এবং কিছু আসনে নির্বাচিত হয়েছে বা তাদের দলের কেউ এমপি হয়েছেন, সেটা এককভাবে কিন্তু হয়নি। জোট বেঁধে জোটের ওপর ভর করেই তারা কোনো আসনে জয়লাভ পেয়েছে। ফলে এবারও তারা কোনো সাফল্য পাবে বলে মনে হয় না। কিছু আসন হয়তো পেতে পারে, তবে তা দিয়ে বড় কোনো কিছু হবে না। মোটকথা, তারা এককভাবে এখন কিছু করতে পারবে না। কাজেই জামায়াতকে নিয়ে কোনো শঙ্কার কিছু দেখছি না।

ড. কামাল হোসেন যে ভোটে শেষ পর্যন্ত থাকবেন না, তিনি সেটা জানিয়ে দিয়েছেন। এটা আমরা আগেই জানতাম। তাঁর শারীরিক অবস্থা এত ভালো নয় যে তিনি ভোটের এই বিশাল পরিশ্রমের কর্মযজ্ঞে থাকতে পারবেন। এটা তিনি কুলিয়ে উঠতে পারবেন না। শুরুতেই তিনি জানিয়েও ছিলেন, ভোট তিনি করবেন না। কিন্তু একটা ঐক্য গঠন হলে তিনি সঙ্গে থাকবেন এবং নেতৃত্ব দেবেন। তাঁর সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত পরিচয় আছে। অত্যন্ত ভালো মানুষ। পণ্ডিত লোক। বহুদিন থেকে তাঁকে চিনি। জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া গঠন এবং এটাকে এগিয়ে নিতে তিনি বেশ সময় দিয়েছেন, কাজ করেছেন। এখনো সঙ্গে আছেন। প্রয়োজনে তিনি সহযোগিতা করবেন। এখন তিনি যদি নির্বাচন না করেন, করছেন না তো—এটা জোটের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। এটা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ তিনি আগেই ঘোষণা দিয়েছেন যে নির্বাচন করবেন না।

সব দলই চায়, তারা নির্বাচনে জিতে যাবে এবং সরকার গঠন করবে। কিন্তু একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া ও জনগণের ভোটের মাধ্যমে আসতে হবে। এভাবেই হয়ে আসছে। তবে সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় নির্বাচন হলে কতগুলো অসুবিধা আছে। তারা প্রভাব খাটানোর সব রকম চেষ্টা করবে। করছেও তো। এখন দেখছি নতুন ধরনের মামলা চালু হয়েছে। এটার নাম গায়েবি মামলা। বিরোধী দলের নানা ব্যক্তির নামে গায়েবি মামলা হচ্ছে এবং গ্রেপ্তার চলছে। তা হোক। কিন্তু কথা হচ্ছে, এসব করে শেষ পর্যন্ত কী লাভ? কিংবা এসব মামলা ও গ্রেপ্তারের বিষয়টি কি সাধারণ মানুষ ও ভোটার পছন্দ করছে? নিশ্চয়ই একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কারণ মানুষ এখন অনেক সচেতন। এসব ক্ষেত্রে যেটা করা হচ্ছে—অনেক পুরনো মামলা, যেগুলো অনেক আগে করা হয়েছিল, মামলার পক্ষে কোনো শক্ত প্রমাণ বা যুক্তি নেই, গুরুত্বও তেমন নেই বলে চাপা পড়ে গিয়েছে। সেই মামলাকে নতুনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। সেগুলো দেখিয়ে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। 

এখন পর্যন্ত যে পরিস্থিতি দেখছি, তাতে এবারের নির্বাচন বিগত সময়ের নির্বাচনের মতো হয়তো একপক্ষীয় হবে না। অংশগ্রহণমূলক হবে। ভোট অংশগ্রহণমূলক হলেও সুষ্ঠু ও অবাধ হবে কি না সে বিষয়ে এখনো আমরা সন্দিহান। কারণ এখানে নির্বাচনের আগে যে পরিবেশ ও সুযোগ তৈরি হওয়ার কথা, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড গড়ে তোলার কথা, তার কোনো কিছুই তো দেখতে পাচ্ছি না।

বিভিন্ন সময়ে বিএনপি নানা ধরনের দাবি জানিয়ে এসেছে। তারা অন্যায্য কোনো দাবি করেনি। কিন্তু সেসব দাবির তেমন কিছু বা কোনো কিছুই সরকার পূরণ করেনি। এমনকি ঐক্যজোটের পক্ষে সম্মিলিতভাবে যেসব দাবি তোলা হয়েছিল নির্বাচন সামনে রেখে—তারও খুব একটা বাস্তবায়ন হয়নি। বলা যায়, সরকার সায় দেয়নি। দেখা যাক কী হয়। মামলা ও গ্রেপ্তার এবং নানা রকম বাধাবিপত্তি বা শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি যা-ই দাঁড়াক না কেন, বিরোধী দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। নির্বাচনে না এলে তারা ভুল করবে। এখন যে পরিস্থিতি দেখতে পাচ্ছি, তারা নির্বাচন করবে বলেই মনে হচ্ছে। কোনো রকম সুবিধা করতে পারুক বা না পারুক, তাদের কাজ করে যেতে হবে। নির্বাচন করতেই হবে। গণতান্ত্রিক সুযোগ-সুবিধার অভাব আছে, সেসব পাশ কাটিয়ে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের অভাব সত্ত্বেও বাধা এবং ধরপাকড় উপেক্ষা করেই নির্বাচনে আসতে হবে। বিএনপির সামনে এর কোনো বিকল্প নেই।