শুক্র. এপ্রি ১৯, ২০২৪
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank

শীতের পিঠা

ডিসে ১১, ২০১৮
Advertisements


খােলাবাজার২৪,মঙ্গলবার,১১ডিসেম্বর ২০১৮ঃ  পিঠাপুলির দেশ বাংলাদেশ। পিঠা এ দেশের একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার। পৌষের হিমেল হাওয়া ছাড়া যেমন শীতকে কল্পনা করা যায় না, ঠিক তেমনি পিঠা ছাড়াও বাঙালির ঐতিহ্য ভাবা যায় না। তবে অঞ্চলভেদে ভিন্ন ভিন্ন পিঠা যেমন দেখা যায়, তেমনি একেকটি পিঠার বিভিন্ন নামও লক্ষ করা যায়। আর সেসব পিঠার নামের বাহার যেনও পিঠা খাওয়ার আকাঙ্ক্ষা আরো বাড়িয়ে দেয়। এসব পিঠার মধ্যে বেশ পরিচিত কিছু পিঠা—চিতই, ভাপা, পাটিসাপটা, নকশি, সেমাই, সাঁজের, রসের, তেলের, পাক্কূণ, ডালের, বিউটি পাপড়ি, মাংস, পুলিপিঠা ইত্যাদি ছাড়াও বিভিন্ন অঞ্চলে হরেক নামের বাহারি সব পিঠা দেখা যায়।

গ্রামের মেঠোপথ, ঘোমটা পরা কুয়াশা, সকালের খেজুরের রস, সূর্যের উঁকি দেওয়া কোমল মিষ্টি রোদ, আর মায়ের হাতের পিঠা মনে পড়লে কার না গ্রামে ফিরে যেতে ইচ্ছে করে। বিভিন্ন এলাকার পিঠার তারতম্য থাকায় আমাদের গ্রামবাংলায় ভিন্ন ভিন্ন পিঠাভিত্তিক সংস্কৃতিও গড়ে উঠেছে। আর শীতের আনাগোনায় যেনও পিঠার আধিক্য আরো অনেকাংশেই বেড়ে যায়, সে জন্য অনেকে শীতকালকে পিঠার মৌসুমও বলে থাকে।

শীতের পিঠার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় ভাপা, চিতই ও রসের পিঠা। শীতে সব জায়গাতেই ভাপা ও চিতই পিঠার আধিক্য থাকলেও রসের পিঠা গ্রামেই বেশি দেখা যায়। খেজুরের রসের সঙ্গে দুধ আর নারকেল দিয়ে, রসের পিঠার যে স্বাদ, তা বর্ণনাতে কোনোভাবেই প্রকাশ করা যায় না।

তবে ক্রমেই শহরাঞ্চলেও পিঠার জনপ্রিয়তা বেড়েই চলছে। প্রতিবছরই শীতের মৌসুমে প্রায় সব শহরেই পিঠা উৎসবের দেখা মেলে, তবে ঢাকায় এর প্রভাবটা আরো বেশি। আমাদের প্রিয় এই ঢাকা শহরের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষই গ্রামবাংলা থেকে ভিড় জমিয়েছে, তাই শীতের আবছা কুয়াশা আর মুহুর্মুহু হিমেল হাওয়ায়, শহরের ব্যস্ততার পরও সবারই মন চায় জননীর কিংবা প্রিয়তমার হাতের পিঠা খেতে। কিন্তু শহুরে জীবনে এই আকুলতা দূর করতে অনেকেই ছুটে যায় বিভিন্ন পিঠা উৎসবে। তবে কজনই বা পিঠা উৎসবে যাওয়ার সময় পায় বা সামর্থ্য রাখে। তাই ঢাকাবাসীর পিঠার চাহিদা মেটাতে রাস্তার মোড়ে, অলিগলিতে, বাসস্ট্যান্ডে বসেছে ছোট ছোট পিঠার দোকান। দোকানগুলোতে রয়েছে নানান রকম শীতের পিঠা, যেখানে বেশি চোখে পড়ে চিতই আর ভাপা। নানা পেশার লোকজনের ভিড়ও রয়েছে দোকানগুলো ঘিরে। আর এভাবেই শহরবাসী শীতের পিঠার আস্বাদন গ্রহণ করে।

তবে কিছুটা দুঃখ এটাই যে, সাম্প্রতিক সময়ে পিঠার দোকানের প্রভাব বেড়ে যাওয়ায় বাড়িতে বাড়িতে পিঠা বানানোর ঐতিহ্য কিছুটা ম্লান হয়েছে। পিঠা সে তো আমাদেরই ঐতিহ্য, আমাদেরই সংস্কৃতি। তাই এই ঐতিহ্য বাঁচিয়েও রাখতে হবে আমাদেরই।