বুধ. এপ্রি ১৭, ২০২৪
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলাবাজার২৪,মঙ্গলবার, ০৮ জানুয়ারি ২০১৯ঃ অ্যালবাট্টস সামুদ্রিক বৃহৎ পাখি। কিন্তু এই কলামে অ্যালবাট্টস বলতে ডানা, পালক লাগিয়ে সং সাজিয়ে একটি রাজনৈতিক দলকে বৃহৎ সাজানোর কথা বলা হয়েছে অর্থাৎ মেকি অ্যালবাট্টস। ফিনিক্স পাখি প্রবল-প্রখর বুদ্ধিদীপ্ত ছোট একটি পাখি-যা ধ্বংসস্তুপ থেকেও খুব খুব খুব খুব দ্রুত পুর্ণাঙ্গরূপে জেগে উঠতে পারে। এই কলামে ফিনিক্স পাখিকে অপর একটি রাজনৈতিক দলের সাথে তুলনা করা হয়েছে। যে ফিনিক্স পাখি-আকারে ছোট হলেও (প্রকৃত পক্ষে কোন ধ্বংসই হয় নাই) নিমিষেই হয় বিশাল কর্মযজ্ঞ।

বাংলাদেশে ‘৩০ ডিসেম্বর ২০১৮’ অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ঘটনাবহুল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচন মূলতঃ দুই পক্ষের মধ্যে হয়ে গেল। এক পক্ষ পুলিশ-প্রশাসন, র‌্যাব, বিডিআর, সেনাবাহিনী, আনসার, আদালতসহ আওয়ামীলীগ মহাজোট আর অন্যপক্ষ দেশের মানুষের মনের ভিতর থাকা বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট-যারা মানুষের ভোটাধিকারের জন্য অর্থাৎ গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে অবিরত। ফলে তাদের ভাগ্যে জুটছে মিথ্যা-ভূয়া মামলা, অযাথাই  হামলা, বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার, মামলা না থাকলে এক জায়গা হতে গ্রেফতার আর অন্য এক জায়গার নাম ব্যবহার করে মামলা, রিমান্ডের নামে জুলুম নির্যাতন, জামিন না মঞ্জুর করে দীর্ঘদিন কারাবন্দী-প্রয়োজনে আরো বানোয়াট মামলা, রাস্তাঘাট বা বাসাবাড়ী থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে নিখোঁজ, বন্দুক যুদ্ধের নামে মৃত্যু-যাকে বলা হয় এনকাউন্টার বা ক্রসফায়ার, আর নারী হলে আওয়ামী ক্যাডারদের দ্বারা ধর্ষণ-যেমন নোয়াখালীর সুবর্ণচরের পারুল ধানের শীষে ভোট দেওয়ার জন্য স্বামী-সন্তানদের বেঁধে রেখে আওয়ামী ক্যাডার দ্বারা রাতভর পালাক্রমে ধর্ষিত হওয়ার উদাহরণ।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেখা গেল জবর-দখল ক্ষমতাসীন আওয়ামীরা আচরণবিধি লংঘন করে একের পর এক নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালানো-যাতে পুলিশ প্রশাসন সহায়তা করে বা মঞ্চে নেতাদের সাথে বসে, বক্তব্য দেয়, দেখলে মনেহয় তারাই(পুলিশ-প্রশাসন) নেতা। এদের জন্য আচরণবিধি লংঘন কোন বিষয়ই না। অপরদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বিশেষ করে বিএনপি প্রার্থীরা তাদের প্রচার-প্রচারণা বা পোস্টার লাগাতে গেলে আওয়ামী ক্যাডার লগি-বৈঠা-অস্ত্রসহ হামলা করে আর পুলিশ তাদের (আওয়ামী ক্যাডারদের) পাহাড়াদার হয় এবং উল্টো বিএনপি নেতা-কর্মীদের ধরে নিয়ে যায় মিথ্যা মামলা দেয় রিমান্ড বা জেল হাজতে প্রেরণ করে। পোস্টার লাগাতে গেলে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়, প্রেসওয়ালাদের ধানের শীষের পোস্টার ছাপানো নিষেধ করা হয়-এটাকে কি গণতন্ত্র কয় ? এর পর সেনাবাহিনী নামালেও কোন প্রতিকার নাহি হয়। সেনাবাহিনী যেন নিরব দর্শক। তারা পুলিশ-প্রশাসন আওয়ামী মহাজোটের সুরেই কথা কয়।

এভাবেই আসল ‘৩০ ডিসেম্বর ২০১৮’ ভোটের দিন। যেনো চুরি-ডাকাতি চলছিল বাধাহীন। কোন কোন সেন্টারে আগেই ছিল মেরে ব্যালট বাক্স ভরানো হয়েছিল। কেন্দ্রে কেন্দ্রে পুলিশ-প্রশাসনের সহায়তায় বিএনপি তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এজেন্ট ঢুকতে দেওয়া হয়েছিল না, চিহ্নিত বা পরিচিত বিএনপি নেতা-কর্মী, সমর্থক ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে দিচ্ছিল না আওয়ামী ক্যাডাররা; প্রয়োজনে তারা (আওয়ামী ক্যাডাররা) সশস্ত্র অবস্থান নিয়ে পুলিশে ধরে দিচ্ছিল (যদিও আগেই তারা বলে দিয়েছিল নৌকায় ভোট দেওয়া ছাড়া কেউ কেন্দ্রে যাবেন না) কিন্তু আওয়ামী ক্যাডাররা অবাধে কেন্দ্রে ঢুকে একাধিক ছিল মেরেছে, খবরদারী করেছে আর সে সুযোগ করে দিয়েছে পুলিশ প্রশাসন আর সেনাবাহিনী ছিল নীরব অন্ধজন। 

এ নির্বাচনে ছিল না অংশগ্রহণকারী প্রার্থী, কর্মী, ভোটারদের কোন উৎসব; ছিল শুধু আওয়ামীদের ভোট চুরি-ডাকাতির মহোৎসব। পত্রিকার মাধ্যমে জানা গেছে অনেক কেন্দ্রেই বলা হয়েছে যে, ‘টিপসই দাও, আঙ্গুলে কালি নাও, ভোট শেষ-বাড়ী যাও (সুত্র: নয়াদিগন্ত ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮)। বিবিসি’র সাংবাদিকদের ক্যামেরায় ধরা পরেছে-‘ভোটের আগেই ব্যালটবাক্স পূর্ণ’ (সুত্র: দিনকাল)। বাংলাদেশ প্রতিদিনে ২২১ আসনে অনিয়মের অভিযোগের বির্পোট প্রকাশ পেয়েছে। খুলনা-১ আসনে এতই ভোট পরেছে যে মোট ভোটারের চেয়ে ২২,৪১৯ ভোট বেশী পড়েছে। এ যেনো গায়েবী ভোট।……. এভাবেই প্রায় সব জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় দমন-পীড়ন, জালভোট আর অনিয়মের অভিযোগ-বির্পোট প্রকাশ পেয়েছে।

এই নির্বাচনে জনমনে এমন ধারণা হয়েছে যে, দমন-পীড়ন, অত্যাচার-নির্যাতন, ভয়-ভীতি, মামলা-হামলা, জেল-জুলুম-হুলিয়া, গুম-খুন, অপহরণ, ধর্ষণ যে ভাবেই হোক এ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামীদের ক্ষমতায় থাকতেই হবে। তাই তারা মুখে মুখে বক্তব্যে নিরপেক্ষতার সং সাজলেও ভিতরে ভিতরে আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করে লজ্জার মাথা কেটে পুলিশ-প্রশাসন, র‌্যাব, বিডিআর, সেনাবাহিনী, আনসার, আদালতসহ আওয়ামী মহাজোট সামুদ্রিক বিরাট অ্যালবাট্টস পাখি সেজেছে। জনমনের ভাবনা আওয়ামী জোটের সাজানো এ বিরাট অ্যালবাট্টস পাখির ডানা, পালক, ললাট, শলীল জনমনে পঞ্জীভূত হারানো অধিকার আদায়ের দাবীর ঝড়ে খুলে খুলে পড়বে একদিন। আর সং সাজানো সে অ্যালবাট্টস পাখি হবে ডানাহীন, পালকহীন, নখরবিহীন বয়সের ভারে নূঁইয়ে পড়া অপরাধে ভরপুর কর্মচলনক্ষমহীন এক পাখি। আর অপরদিকে জনগণের ন্যায্য অধিকার আদায়ের দাবীতে আন্দোলন-সংগ্রামরত অবিচল-কর্মচঞ্চল-উৎদীপ্ত ফিনিক্স পাখি (বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট-কে জোড়, জুলুম, অত্যাচার, নিপীড়ন ও ক্যাডার কায়দার ছোট করা হয়েছে-[যা ফিনিক্স পাখির মতো], আসলে ছোট না বৃহৎ)-যাকে ধ্বংস করার জন্য পুলিশ-প্রশাসন, র‌্যাব, বিডিআর, আনসার, আইন-আদালতসহ সকল রাষ্ট্রযন্ত্রকে আইন, নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে আওয়ামী জোট কৌশলে অপশাসনে ব্যাবহার করে যাচ্ছে। গুম, খুন, অপহরণ, ধর্ষণ আর নিপীড়নের খড়গ চাপাচ্ছে আওয়ামী ক্যাডার ও প্রশাসন বাহিনী বিএনপি নেতা-কর্মীদের উপর। আওয়ামী সরকার বিএনপি নেতা-কর্মী-সমর্থকদের ধ্বংস করতে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যাবহার করছে-এতে রাষ্ট্রীয় অপশাসন হচ্ছে। বিএনপি নেতা-কর্মী-সমর্থক-ভোটাররাও তাই ‘ফিনিক্স পাখি’র মত বুদ্ধিদীপ্ত সয়ংসম্পূর্ণ হচ্ছে। যে ফিনিক্স পাখি ধ্বংসস্তুপ বা ছাইয়ের মধ্যে থেকেও এক নিমিষেই ফুরুৎ করে উড়াল দিয়ে স্বরূপে দুর্দান্ত প্রতাপের সাথে ফিরতে পারে। জনগণদের অধিকার ফিরিয়ে দিতেই বিএনপি এমন ফিনিক্স পাখি।

তাই বর্তমান আওয়ামী জোট বৃহৎ ডানা-পালক লাগিয়ে, মানুষের চোখে ধোকা দিয়ে সং সাজিয়ে অর্থাৎ গণতন্ত্রকে হনন করতে পুলিশ-প্রশাসন, র‌্যাব, বিডিআর, আনসার, আইন-আদালতসহ যে বিরাটাকার অ্যালবাট্টস ধারণ করেছে-তা একদিন অধিকার আদায়ে বলীয়ান উদ্দীপ্ত জনসমর্থনপূর্ণ নেতা-কর্মী-সমর্থক-ভোটারদের একাকার মিশে যাওয়ার ঝড়ের তোরে অতীশপর পৌঢ় স্থবির অ্যালবাট্টস হবে। আর যাদের উপর অত্যাচার-নির্যাতন, নিপীড়নের খড়গ চালানো হচ্ছে ধ্বংস করার জন্য তারা সেই অত্যাচার-নির্যাতন, নিপীড়নের মাঝ থেকেই মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য ফিনিক্স পাখির মতো জেগে উঠবে। জনমনের ভাবনা সেই ফিনিক্স পাখিরা হবে এমন-


‘‘শিকল পড়া ছল মোদের শিকল পড়া ছল
এই শিকল পড়েই শিকল তোদের করবো রে বিকল’’।

মোঃ মিজানুর রহমান-লেখক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট।