শুক্র. মার্চ ২৯, ২০২৪
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলাবাজার ২৪,মঙ্গলবার,১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ঃ  অর্থনৈতিকভাবে কঠিন সময়ের মুখোমুখি হচ্ছি মন্তব্য ক‌রে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদিন মালিক বলেছেন, ‘এখান থেকে বের হ‌তে হলো একটা অর্থপূর্ণ নির্বাচন করতে হবে। এটা করতে হলে কোনও উদ্ভাবনের প্রয়োজন নেই। আলাপ-আলোচনা করে একটা অর্থবহ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে যে প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙ্গে যাচ্ছে, তা‌তে দেশের অর্থনীতি সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়ে যাবে।’

সোমবার (১৮ জানুয়ারি) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে মৌলিক অধিকার সুরক্ষা কমিটি আয়োজিত একাদশ জাতীয় সংসদ ‘নির্বাচন :পরবর্তী করনীয় শীর্ষক’ আলোচনা সভায় এই দাবি জানান তারা।

আলোচনা সভায় সংবিধান বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার শাহদিন মালিক আরও বলেন, ‘এক ব্যক্তি ১৫ বছর ধরে দেশ পরিচালনা করছেন এরকম দেশের সংখ্যা প্রায় ৫০। এই ৫০টি দেশের মধ্যে এক দুইটা ধ্বংসের পথে চলে গেছে। এখন কিন্তু নির্বাচন ছাড়া ১৫ বছরের বেশি কেউ থাকে না। আমাদের নির্বাচনের মতো কয়েকটি নির্বাচন আয়োজন করে এবং এই ধরনের নির্বাচনের  পরিণতি হলো দেশের অর্থনীতি সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়ে যায়। আমার যেটা আশংকা, এভাবে চলতে থাকলে আগামী দুই তিন বছরের মধ্যে দেশের অর্থ বাইরে চলে যাবে, দেশে বিনিয়োগ হবে না। আমরা অর্থনৈতিকভাবে কঠিন সময়ের মুখোমুখি হচ্ছি। এখন থেকে বের হওয়ার প্রধান উপায় হলো একটা অর্থপূর্ণ নির্বাচন করতে হবে। এটা করতে হলে কোনও উদ্ভাবনের প্রয়োজন নেই। আলাপ-আলোচনা করে একটা অর্থবহ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে যে প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙ্গে যাচ্ছে, ডাকসু’র যে এতো বছরের ঐতিহ্য এবং এই অবস্থায় দেশের উন্নয়ন অসম্ভব।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই নির্বাচন কমিশনের ওপর কারও আস্থা নেই এবং তা প্রহসনের কমিশনে পরিণত হয়েছে। এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে তথাকথিত যে নির্বাচন আয়োজন করবেন এটা আর কোনও অর্থেই গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে না। তারা তাদের গত দুই বছরের কর্মকাণ্ডে প্রমাণ করেছে তারা একটি প্রহসন কমিশন।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন বাংলাদেশে কখনই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়নি। কোনও উদাহরণ বাংলাদেশে নেই। কিন্তু সরকারি দলের অধীনে নির্বাচনের একটা ধরণ আমরা দেখি, আবার এর বাইরে বের হয়ে নির্বাচনটাকে গ্রহণযোগ্য করার একটা চেষ্টা আমরা দেখি। ১৯৮৮ সালে ও ১৯৯৬ সালে ভোটারবিহীন নির্বাচন হয়েছিল, ২০১৪ সালেও একটি নির্বাচন দেখেছি, কিন্তু যে মাত্রায় ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন হয়েছে সেটা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে।’

আলোকচিত্রী শহিদুল আলম বলেন, ‘আমি জামিনে আছি, এটা কিন্তু মুক্তি না। কিন্তু তার বাইরে একটা জিনিস রয়েছে। আমি যে দেশে স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারছি না, আমি মুক্ত না। আমি না হয় হাজত থেকে বেরিয়েছি কিন্তু এই ঘরে কেউই মুক্ত না। আরেকটি বিষয় হলো যারা সরকার কিংবা সরকারের পক্ষে কথা বলে তারা পরিস্কারভাবে অস্বীকার করে যায়। যেখানে লজ্জা নেই, স্বীকার করার প্রয়োজন নেই, তাকে তো দেখানোর কিছু নেই। আমার মনে হয় আমাদের স্ট্রাটেজিগুলো দাঁড় করাতে হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সি আর আবরার বলেন, ‘নির্বাচন সম্পর্কে এতো বড় একটা ঘটনা ঘটে গেছে, এতো বড় একটা অনিয়ম ঘটে গেছে, এতো বড় একটা প্রহসন ঘটে গেছে, এটা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য না। আপনারা ভাবতে পারেন আপনারা নির্বাচিত, কিন্তু জনগণ জানে কি ঘটেছিল সেই রাতে। কাজেই সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা মনে করি, রাষ্ট্র পরিচালনা করবে জনগণের প্রতিনিধিরা এবং সামাজিক চুক্তি বলে যে সেই চুক্তির নবায়ন ঘটাতে হবে। সেই সামাজিক চুক্তি চরমভাবে লঙ্ঘন করা হয়েছে। নাগরিক হিসেবে আমরা মনে করি এটা জাতিকে বড় ধরণের বিপদের মুখে ফেলে দিয়েছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের অধ্যাপক আসিফ নজরুল কমিটির নিবন্ধ পাঠ করে বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ  নির্বাচনে নজরদারি ও পর্যবেক্ষণের অপ্রতুল সুযোগের মধ্যেও এতো কারচুপির যে গুরুতর আলামত রয়েছে এবং নির্বাচনের প্রচারণাকালে নজিরবিহীন যেসব ঘটনা ঘটেছে, তা এই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতাকে অসম্ভব করে তুলেছে। এমতবাস্থায় সংবিধান, গনতন্ত্র এবং মানুষের অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য দেশে অবিলম্বে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনও বিকল্প নেই। দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মৌলিক দায়িত্ব হিসেবে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অনতিবিলম্বে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য আমরা সরকারের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি।’

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন কমিটির সদস্য শিরীন হক, মানবাধিকার কর্মী হামিদা হোসেন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, জাকির হোসেন প্রমুখ।