খােলাবাজার ২৪, বৃহস্পতিবার,২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ঃ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী প্রমিতি রহমানের মৃত্যুর ঘটনায় তিন শিক্ষকের শাস্তি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এদের মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক সভাপতি ও সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ ফয়সালের পদোন্নতি দুই বছর স্থগিত রাখা হয়েছে। আর তৎকালীন প্রীতিলতা হলের প্রভোস্ট মাহবুবুর রহমান ও ইসলামের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক মুনমুন নেছা চৌধুরীকে সতর্ক করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় অ্যামপ্লয়িজ স্ট্যাটাসের (ইফিসিয়েন্সি অ্যান্ড ডিসিপ্লিন) ৪(১)(বি) ধারা অনুযায়ী এই শাস্তি দেয়া হয়।
একইসঙ্গে দায়িত্ব পালনের সময় ছাত্রছাত্রীদের প্রতি আক্রোশমূলক কোনো আচরণ ভবিষ্যতে যাতে না হয়, সেজন্য তাদের সতর্ক করা হয়।
২০১৫ সালে ২৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর রমনা এলাকায় বাসায় মারা যান ২০১০-২০১১ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী প্রমিতি রহমান। ওই বছরের ২৬ অক্টোবর তার মা তৎকালীন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (বাজেট ও অডিট) আলম আরা বেগম বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ ফয়সালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে প্রমিতিকে নির্যাতনের অভিযোগ এনে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও চবি ভিসির কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
একইসঙ্গে ২০১৫ সালের ২ জুলাই শিক্ষক মোহাম্মদ ফয়সাল পরীক্ষার হলে প্রমিতি রহমানসহ চার শিক্ষার্থীকে মানসিক নির্যাতন করেছেন- এমন আরেকটি অভিযোগ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের পরীক্ষা কমিটি বরাবর করা হয়।
অভিযোগগুলো তদন্ত করে দুটি কমিটিই শিক্ষক মোহাম্মদ ফয়সাল, মাহবুবুর রহমান ও মুনমুন নেছা চৌধুরীকে দোষী সাব্যস্ত করে শাস্তির সুপারিশ করে। তিন বছর পর সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১৯তম সিন্ডিকেট সভায় সেই সুপারিশই বাস্তবায়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
তবে, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি সিন্ডিকেট সভায় মোহাম্মদ ফয়সাল তার বিরুদ্ধে নেয়া পদোন্নতি স্থগিতের সিদ্ধান্ত বাতিল চেয়ে আবেদন করেন। সেটি নাকচ করে দেয়া হয়।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক মোহাম্মদ ফয়সাল বলেন, ‘শাস্তির বিষয়ে আমি অবগত। এখন ব্যস্ত আছি, পরে কথা বলব।’
এরপর একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
প্রমিতির মায়ের করা অভিযোগ আমলে নিয়ে চবির সমাজতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. এএফএম ইমাম আলী নেতৃত্বে এক সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী।
এছাড়া শিক্ষক মোহাম্মদ ফয়সালের বিরুদ্ধে প্রমিতিসহ চার শিক্ষার্থীর পরীক্ষার হলে খাতা রেখে দিয়ে মানসিক নির্যাতনের অভিযোগটি তদন্ত করেন চবি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক।
এ দুটি কমিটির প্রতিবেদনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক শিরীন আখতারকে প্রধান করে আরো একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি।
প্রত্যেক তদন্ত কমিটি তাদের দোষী সাব্যস্ত করে শাস্তির সুপারিশ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কেএম নুর আহমদ জানান, প্রমিতির মৃত্যু ঘিরে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত তদন্ত কমিটি সত্যতা পেয়ে সুপারিশ করেছে। তারই ভিত্তিতে তিন শিক্ষকের শাস্তি কার্যকর করা হচ্ছে।