খােলাবাজার ২৪,বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০১৯ঃওয়াসার পানির মান খারাপ হওয়ায় ৯১ শতাংশ মানুষ তা ফুটিয়ে পান করেন। পানি ফুটিয়ে খাওয়ার উপযোগী করতে বছরে আনুমানিক ৩৩২ কোটি টাকার গ্যাস খরচ হয় বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এছাড়াও ৮৬.২ শতাংশ সেবাগ্রহীতা ঘুষ-দুর্নীতির শিকার হোন।
বুধবার (১৭ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১১টায় ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে টিআইবির প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা ওয়াসার অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে টিআইবি। একটি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ঢাকা ওয়াসা পাইপলাইনের মাধ্যমে এখনও সুপেয় পানি সরবরাহ করতে পারেনি। এ কারণে ওয়াসার ৯১ শতাংশ পানিগ্রহীতা খাবার পানি ফুটিয়ে পান করেন। আর ওয়াসার পানি ফোটাতে প্রতিবছর যে পরিমাণ গ্যাস ব্যবহার করা হয়, তার দাম ৩৩২ কোটি টাকা।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর পানি ফোটাতে গিয়ে যে ৩৩২ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে, তা বাঁচানোর কোনো উদ্যোগ এখনও নেয়নি ওয়াসা। অথচ বিশ্বের প্রায় সব দেশেই পাইপলাইনের মাধ্যমে সুপেয় পানি সরবরাহ করা হয়।’
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘এশিয়ার কোনও দেশে পানি ফুটিয়ে পান করা হয় না। ঢাকা ওয়াসাকে এ বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা দরকার।’
‘চাহিদা অনুযায়ী পানি না পাওয়ার হার বস্তি এলাকায় সবচেয়ে বেশি। সেখানে ৭১.৯ শতাংশ চাহিদা অনুযায়ী পানি পান না। এছাড়া আবাসিক এলাকায় ৪৫.৮ শতাংশ, বাণিজ্যিক এলাকায় ৩৪.৯ শতাংশ ও শিল্প এলাকায় ১৯ শতাংশ চাহিদা অনুযায়ী পানি পান না। সার্বিক সেবাগ্রহীতাদের ৪৪.৮ শতাংশ চাহিদা অনুযায়ী পানি পান না বলে টিআইবির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
ওয়াসার অনিয়ম ও দুর্নীতি সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সেবাগ্রহীতাদের ৮৬.২ ভাগ ওয়াসার কর্মচারী এবং ১৫.৮ ভাগ দালালকে ঘুষ দিয়ে থাকেন। এর মধ্যে পানির সংযোগ গ্রহণে ২০০ থেকে ৩০০০০ টাকা, পয়ঃলাইনের প্রতিবন্ধকতা অপসারণে ৩০০ থেকে ৪৫০০ টাকা, গাড়িতে করে জরুরি পানি সরবরাহ করার ক্ষেত্রে ২০০ থেকে ১৫০০ টাকা, মিটার ক্রয়/পরিবর্তন করতে ১০০০ থেকে ১৫০০০ টাকা, মিটার রিডিং ও বিল সংক্রান্ত বিষয়ে ৫০ থেকে ৩০০০ টাকা এবং গভীর নলকূপ স্থাপনে এক লাখ থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেয়া হয়।’
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ওয়াসার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে বিভিন্ন সময়ে মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ করা হয়ে থাকে। এছাড়া বিশেষ ক্ষেত্রে বোর্ডের সিদ্ধান্ত উপেক্ষিত হয়। নিয়মবহির্ভূতভাবে পদায়ন ও বদলিতে সংস্থাটির অনিয়ম রয়েছে। অনিয়ম রয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দেয়ার ক্ষেত্রেও।’ এছাড়া প্রশাসনিক কাজে সিবিএ’র অযাচিত হস্তক্ষেপ রয়েছে বলে গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে গ্রাহক সেবায় অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ করে টিআইবি জানিয়েছে, সেবাগ্রহীতাদের (জুলাই-২০১৭-জুন ২০১৮ সময়কালে) ২৬.৯ ভাগ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন সেবায় ঢাকায় ওয়াসার সঙ্গে সরাসরি করলেও ৬১.৯ ভাগ অনিয়ম ও দুর্নীতির শিকার বলে জানিয়েছে টিআইবি।
প্রতিবেদনের সার্বিক পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ঢাকা ওয়াসার ভিশন ও মিশন অনুযায়ী, নিরবিচ্ছিন্নভাবে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার পানির চাহিদা পূরণে টেকসই ও পরিবেশবান্ধব পানির উৎপাদন ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ঢাকা ওয়াসার সক্ষমতা ও উদ্যোগের ঘাটতি রয়েছে। পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন সেবার নিম্নমান এবং সেবা সম্পর্কে প্রায় এক-তৃতীয়াংশের বেশি সেবাগ্রহীতা অসন্তুষ্ট।
অনুষ্ঠানে ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান সুলতানা কামাল ও টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বক্তব্য দেন।