শুক্র. মার্চ ২৯, ২০২৪
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলাবাজার ২৪, শুক্রবার,  ২৬এপ্রিল ২০১৯ঃ সরকারের চাপের মুখে বিএনপির নির্বাচিত সংসদ সদস্য জাহিদুর রহমান শপথ নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আজ শুক্রবার রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যানে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের উদ্যোগে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিসৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রদান শেষে সাংবাদিকদের মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি, গণফোরাম, নাগরিক ঐক্যসহ কয়েকটি দল নিয়ে আওয়ামী লীগবিরোধী জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়। ঐক্যফ্রন্ট থেকে মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রায় সবাই বিএনপির ‘ধানের শীষ’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন। নির্বাচনে বিএনপি থেকে ছয়জন ও গণফোরাম থেকে দুজনসহ মোট আটজন নির্বাচিত হন।

এর মধ্যে গণফোরামের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ ‘ধানের শীষ’ প্রতীক নিয়ে মৌলভীবাজারের একটি আসন থেকে এবং সিলেটের একটি আসন থেকে ‘উদীয়মান সূর্য’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হন মোকাব্বির খান।

নির্বাচনের পর পরই ভোটে ব্যাপক কারচুপি আর অনিয়মের অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। তাঁরা শপথ নিবেন না বলেও সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু এর মধ্যে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে গণফোরামের দুজন সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেন। পরে তাঁদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। সুলতান মনসুরকে ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটি থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়।

এবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের তৃতীয় এবং বিএনপির প্রথম সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিলেন ঠাকুরগাঁও-৩ (রানীশংকৈল-পীরগঞ্জ) আসন থেকে নির্বাচিত জাহিদুর রহমান। জাহিদুর ১৯৯১ সাল থেকে নির্বাচন করছেন। কিন্তু কোনোবারই তিনি পাস করতে পারেননি। এ নিয়ে জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৫ জন শপথ নিলেন। এখন বাকি আছেন বিএনপির পাঁচ নির্বাচিত প্রতিনিধি।

বিএনপির সংসদ সদস্যের শপথের বিষয়ে সরকারের চাপ আছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটা তো স্বাভাবিক। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এটি অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়। বাংলাদেশে বরাবরই দল ভাঙার এ ধরনের প্রচেষ্টা হয়েছে, ভেঙেছেও। কিন্তু বিএনপির বিরুদ্ধে এই ধরনের প্রচেষ্টা করে কখনো কোনো লাভ হয়নি। বিএনপি সব সময়ই ফিরে এসে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে এবং স্বমহিমায় জনগণের কাছে ফিরে এসেছে।’

বিএনপিতে ভাঙনের শঙ্কা আছে কি না—এমন প্রশ্নে সরকারের সমালোচনা করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমাদের কোনো উদ্বেগ নেই। বিএনপি জনগণের একটি দল হিসেবে এ দেশে সব সময়ই সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে আসছে। নিঃসন্দেহে এই চাপ সব সময় থাকে। যে সরকারই ক্ষমতায় থাকুক, যারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয় না তাদের এই ধরনেরই হীন অগণতান্ত্রিক কৌশল অবলম্বন করতে হয় ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘জাহিদুর রহমান শপথ নিয়েছেন দলের সিদ্ধান্ত ভঙ্গ করে। এটা তিনি অত্যন্ত গর্হিত কাজ তো করেছেনই, আমি বলব অন্যায় করেছেন, অপরাধ করেছেন। এই জন্য তাঁর বিরুদ্ধে সংগঠন ব্যবস্থা নেবে। যেটাকে আমরা বলি সাংগঠনিক ব্যবস্থা। সেটা অবশ্যই নেওয়া হবে।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখানে এমপিরা বলতে তো কেউ নেই। একজন গেছেন শপথ নিয়েছেন, বাকি যাঁরা নির্বাচিত আছেন তাঁদের সিদ্ধান্ত তো আমরা এখনো জানি না। তাঁরা আমাদের জানাননি এখনো। ফলে দলের সিদ্ধান্ত যেটা ছিল, সেটাই বহাল আছে। আমরা শপথ গ্রহণ করব না, এ বিষয়ে আর কোনো দ্বিমত থাকার কথা নয়।’

ফখরুল আরো বলেন, ‘দলের সিদ্ধান্ত যাঁরা ভঙ্গ করবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে দলের যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দরকার, সেটি গ্রহণ করা হবে। আমরা মনে করি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল একটা জনগণের দল। একটি গোষ্ঠী বা একটি ব্যক্তি যদি কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, এই দলের খুব বেশি ক্ষতি হয় না।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘জাতীয়তাবাদী মহিলা দল আজকের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে শপথ নিয়েছে কারারুদ্ধ দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে আরো বেগবান আন্দোলন গড়ে তোলার। তাঁরা সেই লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ রয়েছেন। আগামী দিনে সংগ্রামের জন্য তাঁরা শপথ নিয়েছেন।’

এ সময় জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, সাধারণ সম্পাদক সুলতান আহমেদ, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।